Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
বাদুড়িয়া

ডেঙ্গির জীবাণু মিলল, বাড়ছে জ্বরের প্রকোপ

ডেঙ্গির থাবা এ বার বাদুড়িয়ায়। ঘরে ঘরে জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গির আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যদিও ডেঙ্গি নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই বলে স্থানীয় পুর কর্তৃপক্ষ মাইকে প্রচার চালাচ্ছেন। পুরপ্রধানের উদ্যোগে স্কুলে স্কুলে গিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতেও প্রচার চলছে।

বাদুড়িয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর। ছবি: নির্মল বসু।

বাদুড়িয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর। ছবি: নির্মল বসু।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪০
Share: Save:

ডেঙ্গির থাবা এ বার বাদুড়িয়ায়।

ঘরে ঘরে জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গির আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যদিও ডেঙ্গি নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই বলে স্থানীয় পুর কর্তৃপক্ষ মাইকে প্রচার চালাচ্ছেন। পুরপ্রধানের উদ্যোগে স্কুলে স্কুলে গিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতেও প্রচার চলছে।

বাদুড়িয়ার বিএমওএইচ তথা রুদ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার দিবাকর সর্দার বলেন, ‘‘গত এক মাসে ৩ হাজারের উপরে জ্বরে আক্রান্ত রোগী এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে এসেছেন। ভর্তিও হয়েছেন অনেকে। তাঁদের মধ্যে ডেঙ্গি সন্দেহে ১৯ জনের রক্ত বারাসত হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। ৯ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে।’’

বিএমওএইচ জানান, ওই ন’জনের মধ্যে ৭ জনকে বারাসত, ১ জনকে আরজিকর এবং ১ জনকে হাবরা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। দিবাকরবাবুর দাবি, সীমিত ক্ষমতা নিয়ে হাসপাতাল চত্বর যতটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের মশারি টাঙিয়ে রাখা হচ্ছে।

শনিবার বাদুড়িয়ার ওই হাসপাতালে গিয়ে অবশ্য দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। কোনও কোনও রোগীর ক্ষেত্রে মশারি টাঙানো থাকলেও হাসপাতাল চত্বরে পানীয় জলের কলের পাশে স্তূপাকৃত ভাবে পড়ে রয়েছে রোগীদের বাড়তি খাবার। পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কুকুর-বিড়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে সেখানে। মুখে করে ছড়াচ্ছে আবর্জনা। অথচ হাসপাতাল চত্বরের মধ্যে মূল গেটের সামনে এই দৃশ্যের দিকে কর্তৃপক্ষের নজর নেই। রোগীরাই দেখালেন, ওয়ার্ডের মধ্যে জানলার পাশে কী ভাবে নোংরা জমে আছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, গত এক মাসের মধ্যে রুদ্রপুরের আফ্রিদি ইসলাম, চণ্ডীপুরের উজ্জ্বল রায়, স্মৃতি দাস, গোবিন্দপুরের বাপন দাস, পিঙ্গলেশ্বর গ্রামের কবিতা মণ্ডল, রুনা সর্দার, উত্তর শিমলা গ্রামের আজগার আলি এবং যুগীপুকুরের সুব্রত কাহার-সহ ৯ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। এরপরেই নড়ে চড়ে বসেছে পুর প্রশাসন। প্রতি ওয়ার্ডে নর্দমা সাফাই, আগাছা কেটে পুড়িয়ে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। ব্লিচিংয়ের ব্যবহারও হচ্ছে। পুরপ্রধান তুষার সিংহ জানালেন, এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীরা স্কুলে গিয়ে ডেঙ্গির জীবাণুবাহী মশার হাত থেকে কী ভাবে রক্ষা পাওয়া যাবে, তা বোঝাচ্ছেন। লিফলেট ছড়ানো হচ্ছে। তবে হাসপাতালের মতোই বাদুড়িয়ায় বাটুলের মোড়ে বড় রাস্তার পাশে স্তূপাকৃত ময়লা পড়ে থাকতে দেখা গেল এ দিন।

ডেঙ্গি নিয়ে মাথা ব্যথা বসিরহাটেও। বসিরহাট জেলা হাসপাতালে গত কয়েক দিনের মধ্যে হাজারখানেক মানুষ জ্বরের উপসর্গ নিয়ে এসেছেন। চিন্তিত স্বাস্থ্য দফতর এবং পুর কর্তৃপক্ষ। শহরবাসীর মধ্যে ডেঙ্গি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার শুরু হয়েছে।

হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদার বলেন, ‘‘এখানে ডেঙ্গি আক্রান্তদের পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় সন্দেহ হলে রক্ত পরীক্ষার জন্য বারাসত জেলা হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। তবে জ্বরে আক্রান্ত সন্দেহজনক রোগীকে মশারির মধ্যে রাখা হচ্ছে।’’

মহকুমা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাট জুড়ে প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৫০-১০০ জন জ্বরে আক্রান্ত রোগী আসছেন। বসিরহাট পুরসভার তরফে শুরু হয়েছে ব্লিচিং ছড়ানো, নিকাশি নালা পরিষ্কার এবং মশা মারার ধোঁয়া দেওয়া। সচেতনতা বাড়াতে জেলা হাসপাতালের দেওয়ালে লাগানো হয়েছে ফ্লেকস, ব্যানার, পোস্টার। লিফলেট বিলি চলছে। হাসপাতালের ভেতর ও বাইরে ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে। এলাকায় জ্বরের প্রকোপ যে বাড়ছে, তা মানছেন বসিরহাটের পুরপ্রধান তপন সরকার।

তবে বসিরহাটের বিভিন্ন এলাকাতেও দেখা গেল আবর্জনা পড়ে আছে। সাংসদ ইদ্রিশ আলি বলেন, ‘‘মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সকলে এগিয়ে না এলে একা কারও পক্ষে রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখা সম্ভব নয়। বিশেষ করে পলিথিন ব্যবহার যাতে না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যত্রতত্র যাতে কেউ নোংরা না ফেলেন, সে দিকটাও দেখা দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Viral fever Basirhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE