Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দুধে মেশানো হচ্ছে গুঁড়ো সাবান, পাউডার!

স্থানীয় মানুষ জানান, রোজই গোবরডাঙা, মছলন্দপুর, সংহতি,  হাবড়া স্টেশন থেকে ক্যান ভর্তি দুধ কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সংহতি ছাড়া অন্য প্ল্যাটফর্মগুলিতে অবশ্য প্রকাশ্যে দুধে ভেজাল মেশানো হয় না। এক কারবারি জানালেন, দীর্ঘক্ষণ দুধ টাটকা রাখতে এবং দুধের ঘনত্ব ঠিক রাখতে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়।

বিষাক্ত: দুধে মিশছে সাবান গুঁড়ো। সংহতি স্টেশনে।  ছবি: সুজিত দুয়ারি

বিষাক্ত: দুধে মিশছে সাবান গুঁড়ো। সংহতি স্টেশনে। ছবি: সুজিত দুয়ারি

সীমান্ত মৈত্র
হাবড়া শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৮ ০১:১৮
Share: Save:

রাতেই নানা রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে। অশোকনগরে।

বিষাক্ত: দুধে মিশছে সাবান গুঁড়ো। সংহতি স্টেশনে। ছবি: সুজিত দুয়ারি

কয়েকটি ক্যান ভর্তি গরুর দুধ নিয়ে কারবারিরা এলেন স্টেশনে। সঙ্গে রয়েছে কয়েকটি ফাঁকা ক্যান। দুধ ভর্তি ক্যানগুলি থেকে মগ দিয়ে কিছুটা দুধ ফাঁকা ক্যানে ঢালা হল। এরপরেই টিউবওয়েল থেকে বালতি ভর্তি জল নিয়ে তাতে ঢালছেন কারবারিরা।

তার মধ্যে মেশানো হচ্ছে গুঁড়ো, পাউডার, খাবার সোডা ও সোডিয়াম বাই কার্বোনেট-সহ নানা রকম রাসায়নিক। দু’টো ক্যানের দুধ থেকে তিন ক্যান ভেজাল দুধ তৈরি করা হল।

সকাল ৯টা নাগাদ এমন দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায় বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার সংহতি স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। যাত্রীদের সামনে প্রকাশ্যেই চলছে দুধে ভেজাল মেশানো। ওই দুধই কলকাতা-সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ খাঁটি গরুর দুধ হিসাবে পান করেন। আসলে তা হল বিষ।

রাতেই নানা রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে। অশোকনগরে।ছবি: সুজিত দুয়ারি

স্থানীয় মানুষ জানান, রোজই গোবরডাঙা, মছলন্দপুর, সংহতি, হাবড়া স্টেশন থেকে ক্যান ভর্তি দুধ কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সংহতি ছাড়া অন্য প্ল্যাটফর্মগুলিতে অবশ্য প্রকাশ্যে দুধে ভেজাল মেশানো হয় না। এক কারবারি জানালেন, দীর্ঘক্ষণ দুধ টাটকা রাখতে এবং দুধের ঘনত্ব ঠিক রাখতে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়।

জিআরপি জানিয়েছে, বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখা হচ্ছে। ভেজাল দুধ কারবারিদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। পুলিশ জানিয়েছে, নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কারবারিরা বাড়ি থেকে খাঁটি গরুর দুধ প্রথমে সংগ্রহ করে আনেন। তারপর গোপন আস্তানায় খাঁটি দুধের সঙ্গে জল, বরিক পাউডার, সোডা, গুড়ো দুধ, ফর্মালিন, সোডিয়াম বাইকার্বনেট মিশিয়ে ভেজাল দুধ তৈরি করা হয়। অশোকনগরের বিভিন্ন এলাকায় দুধে ভেজাল মেশানোর কাজ চলে।

এখন আর গোয়ালাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে দুধ বিক্রি করতে দেখা যায় না। হাটে বাজারেও মগে করে দুধ বিক্রি করতে দেখা যায় না গরুর মালিকদের। বেশির ভাগ মানুষ প্যাকেটজাত গরুর দুধের উপরে নির্ভর করে থাকেন।

চিকিৎসকেরা জানান, ভেজাল দুধ খাদ্যনালী ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ ছাড়া যে কোনও রাসায়নিক মেশানো হলে দুধের স্বাভাবিক উপাদান আর থাকে না। হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সুপার শঙ্করলাল ঘোষ বলেন, ‘‘রাসায়নিক মেশানো ভেজাল দুধ নিয়মিত পান করলে কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’’

তা ছাড়া, টিউবওয়েল ও পাম্পের যে জল মেশানো হয়, তাতে উচ্চ মাত্রায় আর্সেনিক থাকার আশঙ্কা থাকে। ভেজাল দুধের মাধ্যমে তা মানুষের শরীরে ঢুকছে। যা ক্ষতিকর বলে জানান চিকিৎসক।

গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা পুলিশ দত্তপুকুর থানার ময়নাহাট এলাকার একটি গ্যারেজে হানা দিয়ে ভেজাল দুধ ভর্তি একটি কন্টেনার আটক করেছিল। কন্টেনারে একটি দুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার ভুয়ো স্টিকার লাগানো ছিল। ওই কাজে যুক্ত অভিযোগে পুলিশ চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ গুঁড়ো সাবান, ব্লিচিং পাউডার-সহ রাসায়নিক উদ্ধার করেছিল। একটি পাম্প সেট আটক হয়। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, পাম্পের মাধ্যমে জল এনে তা দুধে মেশানো হত। ওই দুধ আনা হচ্ছিল গাইঘাটা থেকে। তারপরেও কারবার বন্ধ হয় নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Milk Poison Habra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE