অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া একটি ঘর। তাতেই বাবা, মা ও তিন ভাই-বোনের অভাবের সংসার। দিনমজুর বাবা পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য। কোনও দিন খাবার জোটে তো কোনও দিন জোটে না। গৃহশিক্ষক রাখা স্বপ্ন মাত্র। তবে অদম্য জেদ আর অধ্যবসায়ের কাছে হার মেনেছে দারিদ্র। সুন্দরবনের মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলের ছাত্রী দিশা দপ্তরি এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬১৩ নম্বর পেয়েছে।
স্কুলের মধ্যেও দিশার প্রাপ্ত নম্বর সর্বোচ্চ। অঙ্ক ছাড়া সাতটি বিষয়ের মধ্যে প্রতিটি বিষয়েই লেটার মার্কস পেয়েছে সে। বাংলায় প্রাপ্ত নম্বর ৯৪, ইংরেজিতে ৮০, অঙ্কে ৭৭, পদার্থ বিজ্ঞানে ৯০, জীবন বিজ্ঞানে ৮৫, ইতিহাসে ৯৪ এবং ভূগোলে ৯৩।
স্থানীয় খোজখিদির গ্রামের বাসিন্দা দিশার বাবা বিশ্বনাথ দপ্তরির স্থায়ী কোনও কাজ নেই। মা সুমিত্রা ঘরের কাজকর্ম করেন। দিশার বড় দুই দাদা বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দিশাও ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চায়। তাই লেখাপড়াকেই আঁকড়ে ধরেছে সে। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে চায় সে। তার কথায়, ‘‘যে কোনও মূল্যে আমাকে প্রতিষ্ঠিত হতেই হবে। পরিবারের অভাব ঘোচাতে হবে।’’
এমন অভাবী ছাত্রীর সাফল্যে খুশি স্কুল। প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘ছাত্রীটি কঠোর পরিশ্রম করে এই সাফল্য পেয়েছে। আগামী দিনে ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি। আমরাও সাধ্যমতো ওর পাশে দাঁড়িয়েছি, আগামী দিনেও থাকার চেষ্টা করব। তবে কোনও সহৃদয় ব্যক্তি যদি ছাত্রীটিকে সাহায্য করেন, তা হলে আগামী দিনে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে ওর।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)