Advertisement
E-Paper

আড়ালে থাকতেই পছন্দ করেন টিটাগড়ের ‘দাদ্দা’

এক সঙ্গে একই কাজের জন্য অন্তত চারটে ‘প্ল্যান’ তৈরি থাকত তার। তাই একাধিক বার শ্রীঘরে গেলেও দাদ্দার কারবার চলেছে রমরমিয়ে।

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৪
প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

মামুলি ‘ভাই’ থেকে মাদক-মাফিয়া দাদ্দা। এলেবেলে মস্তান থেকে শিল্পাঞ্চলের ‘সুপারি কিলার’। নেহাত একদিনে অবশ্য ব্যারাকপুর এই সাম্রাজ্য হাতে আসেনি তার। ঘটনার পরতে পরতে রয়েছে অবিশ্বাস আর হিংসার কাহিনি। কুড়ি বছর ধরে তার মাদক পাচারের সাম্রাজ্য তৈরি ‘ক্রাইম থ্রিলার’-এর মতোই রোমহর্ষক। মহম্মদ রাজু থেকে ‘দাদ্দা রাজু’ হয়ে ওঠার সাক্ষী যাঁরা, তাঁরা জানেন, তাকে দমানো কতটা কঠিন।

কারণ, এক সঙ্গে একই কাজের জন্য অন্তত চারটে ‘প্ল্যান’ তৈরি থাকত তার। তাই একাধিক বার শ্রীঘরে গেলেও দাদ্দার কারবার চলেছে রমরমিয়ে। বছর তিনেক ধরে অসুস্থতার জন্য গৃহবন্দি ছিল সে। সে সময়ে কারবার সামলায় আত্মীয়েরা।

মাদকের কারবারের পাশাপাশি এক সময়ে ভাড়াটে খুনি হিসেবেও কাজ শুরু করেছিল দাদ্দা। তার বিরুদ্ধে একাধিক খুনের অভিযোগ উঠলেও কোনওটাই প্রমাণ করতে পারেনি পুলিশ। এ বার সরাসরি তার বিরুদ্ধেই খুন ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। টিটাগড়ের দুই যুবককে খুনের ঘটনায় দাদ্দাই মূল অভিযুক্ত বলে জেনেছে পুলিশ। যদিও তার দিন দু’য়েক আগে মাদক পাচারের অভিযোগে দাদ্দাকে জেলে পুরেছিল পুলিশ।

এ হেন দাদ্দার উত্থান পাড়ার মস্তান হিসেবে। টিটাগড় উড়নপাড়ার বাসিন্দা এক প্রবীণ জানান, বছর কুড়ি-বাইশ বা তারও কিছু আগের কথা। রাজু তখন বেকার যুবক। পাড়ার চায়ের দোকানে আড্ডা মেরে দিন কাটত তার। সে সময়ে শিল্পাঞ্চলে বেশ কিছু কারখানা রমরমিয়ে চলছে। শিল্পাঞ্চলে তোলাবাজি চালাত একদল মস্তান। তাদের দলে ভিড়ে যায় রাজু। শুরু করে তোলাবাজি। বছরখানেক সেই দলে থাকার পরে সে নিজে আলাদা ভাবে তোলাবাজি শুরু করে। পুরনো দল ভাঙিয়ে কয়েক জনকে নিয়ে এসে নতুন দল তৈরি করে। এর পরে শুরু হয় পুরনো দলের সঙ্গে তার দলের লড়াই। সেই দলের নেতা ছিল বাবলু। শিল্পাঞ্চলে বেআইনি অস্ত্রের তেমন রমরমা ছিল না। তবে এরই মধ্যে একটি আগ্নেয়াস্ত্র বাগিয়ে ফেলে রাজু। তার দিন কয়েকের মধ্যে নিখোঁজ হয় বাবলু। দিন পনেরো পরে হালিশহরে গঙ্গায় মেলে তার দেহ। গুলি করে নয়, ময়না-তদন্তে জানা যায়, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল বাবলুকে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এর পরেই টিটাগড় জুড়ে শুরু হয় রাজুর দাদাগিরি। প্রথমে তোলাবাজিই ছিল তার মূল কারবার। পরে সে হদিস পায়, শহর জুড়ে চলছে গাঁজার ব্যবসা। খুচরো বিক্রি হলেও তখন টিটাগড়ে গাঁজার কোনও ‘স্টকিস্ট’ ছিল না। বিভিন্ন জায়গা থেকে গাঁজার পুরিয়া আসত। কাঁচরাপাড়ার এক যুবক বিভিন্ন ঠেক ও পান গুমটিতে গাঁজার পুরিয়া সরবরাহ করত। সেই কারবারের দিকে নজর পড়ে রাজুর। কলকাতার এক কারবারির সঙ্গে যোগাযোগ করে শুরু করে গাঁজার ব্যবসা।

শুরু হয় উত্থান। টিটাগড়, তার পরে ধীরে ধীরে শিল্পাঞ্চলের অন্যত্রও সে কারবার শুরু করে। প্রথমে কলকাতার কারবারিদের কাছ থেকে গাঁজা কিনে কারবার চালাত। পরে নিজেই উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি থেকে গাঁজা আমদানি শুরু করে। তবে এই কারবারের মাথা যে সে, তা কখনও বাইরের লোক বা পুলিশকে জানতে দেয়নি রাজু। দাদ্দার এক পুরনো শাগরেদ জানায়, রাজ নামে এক সঙ্গীর উপরে দাদ্দা ভার দিয়েছিল গাঁজা কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার। তারা জানত, পুরো কারবার রাজেরই। পুলিশ তাকে এক বার ধরে। কিন্তু রাজ দাদ্দার নাম পুলিশকে জানায়নি। তবে জামিন পেয়ে রাজ গাঁজার কারবারের বেশ কিছু টাকা সরিয়ে ফেলে। নিজেও আলাদা করে কারবার শুরু করার পরিকল্পনা করে। তা জেনে যায় দাদ্দা। তার পর থেকে রাজকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখনও ‘নিখোঁজ’ সে।

Titagarh Crime Mafia Drug
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy