লাক্সবাগানের সেই ডাকঘর। নিজস্ব চিত্র
ইট পাতা রাস্তাটা যেন টেনে নিয়ে গেল বিচ্ছিন্ন কোনও ভূখণ্ডে। ধীরে ধীরে আলাদা করে দিল গোটা পৃথিবী থেকে। গাছতলায় ছোট্ট একটা কুঁড়ে ঘর। মাটির দেওয়াল, দাওয়া। খড় এবং টিনের ছাউনি। দেওয়ালে ঝুলছে চিঠি ফেলার বাক্স। এটাই ডাকঘর।
এমনিতেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার সাতজেলিয়া নামে এই এলাকা দ্বীপাঞ্চল। চার দিক ঘিরে আছে তিন নদী। উত্তর পশ্চিমে গোমতী, দক্ষিণে দত্ত এবং পূর্বে গাঁড়াল। সেই দ্বীপের দুই পঞ্চায়েত লাহিড়িপুর এবং সাতজেলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সংযোগস্থলে লাক্সবাগান এলাকার এই মাটির বাড়িটা যেন ইতিহাসের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল। ২০২১ সালে দাঁড়িয়েই লাক্সবাগানের প্রেক্ষাপট আচমকা ঠেলে দিল একশো বছর পিছনে।
লাক্সবাগানের এই ডাকঘর আসলে ক্যানিং ডিভিশনের আওতায় একটি উপডাকঘর। সেখানে কর্মী বলতে পোস্ট মাস্টার, পিওন এবং এক জন রানার। বিদ্যুৎ বা বৈদ্যুতিন, নামের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যায় এমন কোনও বিশেষণই এখনও জোগাড় করে উঠতে পারেনি ওই ডাকঘরটি। ফলে কেরোসিনের লন্ঠন জ্বেলেই কাজ চালাতে হয় সেই ডাকঘরের কর্মীদের।
দ্বীপ এলাকা হলেও সাতজেলিয়ার ওই অঞ্চলের রাস্তাঘাট এবং বাড়িঘর পাকা। কিন্তু ডাকঘরটি রয়ে গিয়েছে এ সব পরিবর্তন থেকে শতহস্ত দূরে। দূর যোগাযোগের বিপ্লবে চিঠি এখন প্রায় অতীত। কিন্তু বদলের বার্তা পাওয়া হয়ে ওঠেনি লাক্সবাগানের ওই পোস্ট অফিসের। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, গত ৫০ বছর ধরে তাঁরা ডাকঘরটি ওই অবস্থাতেই দেখে আসছেন। তাঁরা চাইছেন পাকা হোক ডাকঘর। লাক্সবাগানের বাসিন্দা জয়ন্ত মণ্ডল যেমন বললেন, ‘‘এই দ্বীপ এলাকায় এই পোস্ট অফিসটি আমাদের ভরসা। তবে চিরকাল দেখছি অফিস ঘর মাটির তৈরি। মাটির ঘরের যতই সৌন্দর্য থাকুক, বর্তমান পরিস্থিতিতে কিন্তু পাকা ঘরই প্রয়োজন।’’
নিরাশ করেছেন ওই ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার মনোরঞ্জন মণ্ডলও। তিনি বলছেন, ‘‘এত দিন অন্যের জমিতে ভাড়া দিয়ে চলছিল পোস্ট অফিস। বছর পাঁচেক আগে জমির মালিক জায়গাটুকু দান করেছেন। সেখানেই মাটির ঘর তৈরি করে আমরা কাজ চালাচ্ছি। তবে পাকা ঘর তৈরির জন্য কোনও অর্থ বরাদ্দ হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy