Advertisement
E-Paper

ঘরছাড়া বৃদ্ধার ঠাঁই হল হাসপাতালে

ঘর থাকতেও তিনি বেঘর। এক চিলতে খোলা বারান্দায় তাঁর ঠাঁই হয়েছিল। এমনকী তাঁকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না বাড়ির শৌচালয়ও। বাধ্য হয়েই বছর নব্বইয়ের বৃদ্ধা গিয়েছিলেন পুকুরে  স্নান করতে। সেখানে পড়ে যান তিনি।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৫
বারান্দায় বসে বৃদ্ধা। নিজস্ব চিত্র

বারান্দায় বসে বৃদ্ধা। নিজস্ব চিত্র

ঘর থাকতেও তিনি বেঘর। এক চিলতে খোলা বারান্দায় তাঁর ঠাঁই হয়েছিল। এমনকী তাঁকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না বাড়ির শৌচালয়ও। বাধ্য হয়েই বছর নব্বইয়ের বৃদ্ধা গিয়েছিলেন পুকুরে স্নান করতে। সেখানে পড়ে যান তিনি। এরপরেই পাড়ার লোকজন ওই বৃদ্ধার ছেলেদের নামে অভিযোগ দায়ের করেন।

বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাটের নতুন বাজার এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রেণুবালা ভারতী নামে ওই বৃদ্ধার তিন ছেলেকে আটক করা হয়। কিন্তু তিনি ছেলেদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। পুলিশই ওই বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। রেণুবালাদেবী বলেন, ‘‘কী হবে অভিযোগ করে। আমি আর কতদিনই বা বাঁচব। শীতে কষ্ট হয় ঠিকই। তাও খোলা বারান্দাতেই ভাল আছি।’’

রেণুবালাদেবী ও তাঁর স্বামী অমূল্যরতন ভারতী বসিরহাটের নতুন বাজারের পিছনে থাকতেন। তাঁদের ৪ ছেলে ২ মেয়ে। সবার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলেদের সোনার ও মিষ্টির দোকান রয়েছে। কয়েক আগে মেজ ছেলে রবীন্দ্রনাথ মারা যান। মৃত্যুর আগে অমূল্যবাবু সন্তানদের মধ্যে তাঁর সম্পত্তি ভাগ করে দেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে বৃদ্ধা তিন ছেলের কাছে ভাগাভাগি করে থাকতেন। চার ছেলের বাড়িই ওই এলাকায়। মাস কয়েক আগে ছোট ছেলে নগেন্দ্রনাথের বাড়িতে এসেছেন রেণুবালাদেবী। উপরে ছেলে-বৌমা থাকেন। নীচের ঘরে ভাড়াটে। সে জন্য খোলা বারান্দায় ঠাঁই হয়েছে মায়ের। এ বিষয়ে দু-একবার প্রতিবাদও করেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। এরপর বৃদ্ধার ঠাঁই হয় মেজো ছেলের বাড়ির বারান্দায়। তিনিও মাকে বারান্দাতেই রেখেছিলেন। বুধবার পুকুরে স্নান করতে গিয়ে বৃদ্ধাকে পড়ে যেতে দেখে এলাকার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। নগেন্দ্রেনাথ বলেন, ‘‘কয়েক মাস আগে আমার বাড়িতে মা এসেছেন। ঘরে জায়গা নেই বলে বারান্দায় থাকতেন।’’

বৃহস্পতিবার স্থানীয় বাসিন্দা অভিজিৎ বিশ্বাস, সজল কুণ্ডু, রাহুল গুপ্ত, রাজ কুণ্ডু, পৃথা কুণ্ডরা বৃদ্ধাকে কম্বল ও চটি দিতে যান। সে সময় ছোট ছেলে নগেন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁদের বচসা বাধে। খবর পেয়ে পুলিশ যায়। পুলিশ জানিয়েছে, শীতে রেণুবালাদেবীর শারীরিক অবস্থা খাপার হচ্ছিল। সে জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রতিবেশীরা জানান, রেণুবালাদেবীর সঙ্গে তাঁর ছেলেরা খুব খারাপ ব্যবহার করতেন। শুধু তাই নয়, তাঁকে ছুঁড়ে ভাতের থালা দেওয়া হত। সব সহ্য করতেন বৃদ্ধা। তবে এতো কিছুর পরেও চোখের জল মুছতে মুছতে রেণুবালাদেবী পুলিশকে বলেন, ‘‘বাবা তোমরা ওদের (ছেলেদের) কোনও শাস্তি দিও না। ওরা ভালভাবে বাঁচুক, এটাই আমি চাই।’’

Elderly Lady Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy