Advertisement
E-Paper

ফ্যালোপিয়ান টিউবেই ভ্রূণ, অস্ত্রোপচারে বাঁচলেন ঝুমা

শেষ পর্যন্ত জানা গেল, ডায়েরিয়া নয়, ব্যারাকপুর বড়কাঠালিয়ার বাসিন্দা ঝুমা সরকারের ফ্যালোপিয়ান টিউব ছিঁড়ে রক্তপাত হচ্ছে। সে সময়ে রোগীর অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, আর কোনও পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ ছিল না। এক রকম ঝুঁকি নিয়েই পনেরো  মিনিটের মধ্যে অস্ত্রোপচার করা হয় তাঁর।

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৫৫

মামুলি উপসর্গের মধ্যেই যে শরীরে বাসা বেঁধেছিল গভীর অসুখ, বুঝতে পারেননি মহিলা। বুধবার ভোরে যখন তিনি হাসপাতালে ভর্তি হলেন, তখন উপসর্গ ছিল ডায়েরিয়ার। কিন্তু তাতেই রোগীর মুমুর্ষু অবস্থা!

শেষ পর্যন্ত জানা গেল, ডায়েরিয়া নয়, ব্যারাকপুর বড়কাঠালিয়ার বাসিন্দা ঝুমা সরকারের ফ্যালোপিয়ান টিউব ছিঁড়ে রক্তপাত হচ্ছে। সে সময়ে রোগীর অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, আর কোনও পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ ছিল না। এক রকম ঝুঁকি নিয়েই পনেরো মিনিটের মধ্যে অস্ত্রোপচার করা হয় তাঁর। শেষ পর্যন্ত ব্যারাকপুর বিএন বসু হাসপাতালের চিকিৎসকদের চেষ্টায় কার্যত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছেন ঝুমাদেবী।

বড়কাঠালিয়া দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা বছর পঁয়ত্রিশের ঝুমা তিন সন্তানের মা। স্বামী উৎপল সরকার একটি কাঠের আসবাবের কারখানায় কাজ করেন। উৎপলবাবু বলেন, ‘‘গত দেড় মাস ধরে আমার স্ত্রী অসুস্থ। মাঝে মধ্যেই তাঁর পেটে যন্ত্রণা হত। সেই ব্যথা কখনও কখনও মাত্রা ছাড়াত। আমি ডাক্তারও দেখিয়েছিলাম। তাঁরা কিছু গ্যাস এবং পেটের রোগের ওযুধ দিয়েছিলেন। তাতে যন্ত্রণা কমেনি। স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞও দেখিয়েছিলাম। বিশেষ লাভ হয়নি।’’

ঝুমার স্বামী জানান, মঙ্গলবার একটু রাত করে বাড়ি ফেরেন। কারখানায় অনুষ্ঠান ছিল। সেখান থেকে খাবার এনেছিলেন। ঘুম থেকে ঝুমাকে তুলে সেই খাবার খাওয়ান তিনি। মাঝরাতে ফের শুরু হয় পেটে যন্ত্রণা। সঙ্গে বমি-পায়খানা। একটা সময়ে যন্ত্রণায় প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ঝুমা। সঙ্গে সঙ্গে বিএন বসু হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। বাড়ির লোকেরা জানান, তাঁর ডায়েরিয়া হয়েছে। সেখানে ডাক্তারবাবুরা সেই চিকিৎসাই শুরু করেন। কিন্তু যন্ত্রণা কমেনি। ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে থাকেন ঝুমা।

উৎপলবাবু বলেন, ‘‘আমি কাঁদতে কাঁদতে সুপারের ঘরে গিয়ে স্ত্রীকে বাঁচানোর অনুরোধ করি। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তিনি বেশ কয়েকজন ডাক্তারকে ডেকে চিকিৎসা শুরু করেন।’’

বিএন বসু হাসপাতালের সুপার সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় জানান, চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, ডায়েরিয়া নয়। রোগীর অসহ্য পেট ব্যথার কারণ অন্য। সমস্যা জরায়ু অথবা ফ্যালোপিয়ান টিউবে। কিন্তু সে সময়ে আর পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ ছিল না। জরুরু ভিত্তিতে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞকে ডেকে পনেরো মিনিটের মধ্যে অস্ত্রোপচার শুরু করা হয়। অস্ত্রোপচার করেন নবকুমার সাহা। সে সময়ে অস্ত্রোপচার না করলে রোগীর জীবন সংশয় হতে পারত বলে মত চিকিৎসকদের। কারণ, রোগী ততক্ষণে ‘শক’-এ চলে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ, কোনও ভাবে সাড়া দিচ্ছিলেন না।

সুদীপ্তবাবু বলেন, ‘‘দেখা যায়, মহিলার ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যেই ভ্রূণ তৈরি হয়েছিল। তা ফ্যালোপিয়ান টিউবকে ফাটিয়ে ফেলেছিল। অস্ত্রোপচার করে চার লিটার জমাট রক্ত বের করা হয়। এক দিকের ফ্যালোপিয়ান টিউব বাদ দিতে হয়েছে। তবে রোগী এখন বিপন্মুক্ত।’’

উৎপলবাবু বলেন, সরকারি হাসপাতাল সম্বন্ধে অনেক কথা শুনি। হয় তো তার কারণও আছে। কিন্তু এই হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরা যে ভাবে আমার স্ত্রীর চিকিৎসা করলেন, তা ভোলার নয়।

Fallopian tube Operation Hospital Doctors
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy