Advertisement
E-Paper

গরমে শুকিয়ে যাচ্ছে পুকুর, কাহিল মাছও

গ্রীষ্মের বিকালে প্রায় হাজার ফুট পাইপ টেনে পাম্প মেশিনের সাহায্যে খাল থেকে জল তুলে পুকুরে দিচ্ছিলেন মগরাহাটের ধনপোতা গ্রামের এক মাছচাষি। খালের জল পুকুরে দেওয়া হচ্ছে কেন জানতে চাওয়ায় ব্যাজার মুখে জানালেন, পুকুরের জল গরম হয়ে যাওয়ায় ছোট ছোট চারা পোনার বাচ্চারা নেতিয়ে পড়েছে। জলের উপরে ভেসে উঠছে তারা। রোদের তাপে পুকুরের জল গরম হয়ে যাওয়ায় এই বিপত্তি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৫ ০১:৩৯
তালপাতা বিছিয়ে মাছেদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা। দিলীপ নস্করের তোলা ছবি।

তালপাতা বিছিয়ে মাছেদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা। দিলীপ নস্করের তোলা ছবি।

গ্রীষ্মের বিকালে প্রায় হাজার ফুট পাইপ টেনে পাম্প মেশিনের সাহায্যে খাল থেকে জল তুলে পুকুরে দিচ্ছিলেন মগরাহাটের ধনপোতা গ্রামের এক মাছচাষি। খালের জল পুকুরে দেওয়া হচ্ছে কেন জানতে চাওয়ায় ব্যাজার মুখে জানালেন, পুকুরের জল গরম হয়ে যাওয়ায় ছোট ছোট চারা পোনার বাচ্চারা নেতিয়ে পড়েছে। জলের উপরে ভেসে উঠছে তারা। রোদের তাপে পুকুরের জল গরম হয়ে যাওয়ায় এই বিপত্তি। এখন তড়িঘড়ি পুকুরের জলের পরিমাণ না বাড়ালে একটাও মাছ বাঁচানো যাবে না। তাই বাড়তি জল ঢালছেন তিনি পুকুরে।
টানা বেশ ক’দিন বৃষ্টির দেখা নেই। মাঝে ছিটেফোঁটা বৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গের কিছু এলাকায় হলে কৃষি বা মাছ চাছ, কোনওটারই তাতে বিশেষ কোনও উপকার হয়নি। এ দিকে গ্রীষ্মের প্রখর তাপে বিভিন্ন এলাকায় পুকুর, খাল, বিল, নালা শুকিয়ে ফুটিফাটা। আর যে সব পুকুরে মাছ চাষ করা হয়েছে, সেখানেও দিনের পর দিন জল কমতে কমতে প্রায় তলানি পৌঁছে গিয়েছে। রোদের তাপে সেই অল্প পরিমাণ জল দ্রুত গরম হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতিতে পুকুরের মাছ বাঁচানোও দুরূহ হয়ে উঠছে।

মাছ চাষের জন্য পুকুরে ৮-১০ ফুট গভীর জল থাকা দরকার। কিন্তু এখন অধিকাংশ পুকুরে দু’আড়াই ফুট গভীর জলেই মাছেদের বেঁচে থাকতে হচ্ছে। অনেকে পুকুরের মাঝে তালপাতা, খেজুর পাতা দিয়ে ছাউনি করে দিচ্ছেন। সেই ছায়ার তলায় এসে আশ্রয় নিচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ। কিন্তু মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, জল গরম হয়ে যাওয়ায় মাছেরা ঠিক মতো পুকুরে ঘোরাফেরা করছে না। যে কারণে তাদের ঠিকঠাক বৃদ্ধি ঘটছে না। চাষিরা জানালেন, জল গরম হলে মাছেদের অক্সিজেন কমে যায়। মাছ মারাও যায়। তাই অনেকেই পুকুরেই জল পাম্প মেশিনে তুলে ফোয়ারা তৈরি করে পুকুরে ফেলছেন। মৎস্যজীবীদের মতে, এতে মাছের চলাফেরা বাড়ে। জলে অক্সিজেনের মাত্রা জোগান দেওয়া যায়। তা ছাড়াও, বিভিন্ন ওষুধ, চুন পুকুরে ফেলা হচ্ছে।

মগরাহাটের মকুন্দপুর, ছোট মকুন্দপুর, ধনপোতা, দাউজি, মল্লবপুর উড়েল, চাঁদপুর-সহ কয়েকটি গ্রামে বহু মৎস্যজীবী পরিবারের বাস। গরমের জন্য রুটিরুজিতে টান পড়েছে তাঁদের। পুকুরে জল ঠান্ডা রাখা এবং মাছ বাঁচিয়ে রাখতে নানা চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। খালের কাছাকাছি পুকুরগুলিতে জোয়ারের জল দেওয়া গেলেও যেখানে কোনও নিকাশি খাল নেই, সেখানকার মৎস্যজীবীদের মাথায় হাত। অনেকেই বাধ্য হয়ে পুকুর থেকে মাছ তুলে ফেলে বাজারে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ বা নিজের পুকুরের মাছ অন্য পুকুরে সরিয়ে ফেলছেন। নতুন করে চারাপোনা ফেলা যাচ্ছে না। এ ভাবে চলতে থাকলে মাছের জোগানেও ঘাটতির আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।

গরমের জন্য পোনামাছের জোগান কমেছে বলে জানাচ্ছেন ওই এলাকার আড়তদারেরা। দাউজি গ্রামে রয়েছে পাইকারি মাছের বাজার। বাজারের এক ব্যবসায়ী সমর বাগ জানালেন, গরমের জন্য পোনামাছ এ সময়ে কম ওঠে। কিন্তু এ বার টানা অনাবৃষ্টিতে অনেক পুকুরের মাছ মরে যাচ্ছে। মাছের জোগান কমছে।

ধনপোতা গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী মনু কয়াল এ বার ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০টি পুকুরে লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেছেন। তিনি ডিম ফুটিয়ে চারা পোনা তৈরি করে বাজারে বিক্রির পাশাপাশি পুকুরে পোনা ও বাটা মাছের চাষ করেছেন। বললেন, ‘‘আমার বেশ কয়েকটি পুকুরে জলের গভীরতা দু’আড়াই ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। সারা দিন রোদের তাপে জল গরম হয়ে যাওয়া বেশ কিছু মাছ মারা গিয়েছে। তবুও নানা ভাবে মাছ বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছি।’’

গরমে পুকুরে যথেষ্ট জল না থাকায় জেলার মৎস্যজীবীদের মধ্যে মিনিকিট পোনা বিতরণ করা যায়নি বলে জানিয়েছেন জেলা সহ মৎস্য আধিকারিক তাপস পাড়িয়া। তবে জলের সমস্যার জন্য মাছ মারা যাচ্ছে বলে তাঁর কাছে লিখিত ভাবে কেউ অভিযোগ করেনি বলেও জানিয়েছেন তিনি। অভিযোগ এলে ক্ষতিপূরণের জন্য ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

Magrahat fish farmer water body south bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy