দিন আনি দিন খাই পরিবারের ধূসর দিনলিপিতে ওঁরাই উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিন জনই চাষির ছেলে। পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে আর একজনের ঠিকানা মামার বাড়ি। সকলেই চায় চিকিৎসক হতে।
বসিরহাটের সর্দারহাটি গ্রামের কৃষক পরিবারের ছেলে অনুরাগ হাজরা বসিরহাট টাউন হাইস্কুলের ছাত্র। মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৭০। হাজরা পরিবার থেকে মাধ্যমিকে তাক লাগানো ফল অবশ্য এই প্রথম নয়। তার খুড়তুতো ভাই বলরাম হাজরা ২০১৪ সালে মাধ্যমিকে অষ্টম স্থান পায়। সে-ও ছিল বসিরহাট টাউন হাইস্কুলের ছাত্র। অনুরাগের বাবা চাষ করে সংসার চালান। ছেলের জন্য সব বিষয়ে গৃহশিক্ষক রাখার সাধ্য ছিল না তাঁর। কিন্তু তাতে কী! এ বার মাধ্যমিকে অনুরাগের প্রাপ্ত নম্বরের নিরিখে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে। ছেলেটি বলে, ‘‘খুড়তুতো ভাইয়ের রেজাল্ট আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। সারা দিনে ৪-৫ ঘণ্টা পড়তাম। পড়াশোনা ছাড়া কিছুই ভাল লাগত না।’’ বড় হওয়ার পরে গ্রামে গিয়ে গরিবের চিকিৎসা করতে চায় এই কিশোর। স্কুলের প্রধান শিক্ষক যোগেশচন্দ্র ঘোষ বললেন, ‘‘ওর চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। আমরা সকলে মিলে ওর ইচ্ছাপূরণের চেষ্টা করব।’’ উচ্চ শিক্ষায় অনুরাগকে প্রয়োজনে অর্থ সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন যোগেশবাবু।
বসিরহাটের সোলাদানার বাঁশঝাড়ি গ্রামের মেহেদি হাসান মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছিল। তারপর থেকে সে দক্ষিণ বাগুন্ডির উত্তর কোদালিয়ায় তার মামা বাড়িতে থাকে। ছোট থেকেই অভাবের সঙ্গে লড়াই করা টাকি রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ছাত্র মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬৬৯। মেহেদির মা রেহেনা খানম পেশায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। তাঁর কথায়, ‘‘নিজেদের বাড়ি নেই। বাবা, মা, ভাইয়ের সাহায্য কোনওমতে সংসার চলে। ছেলের পড়াশোনার জন্য দিন-রাত এক করে কাজ করেছি।’’
ফুটবল ভক্ত মেহেদির কথায়, ‘‘ছোট থেকে মায়ের কষ্ট দেখেছি। উচ্চশিক্ষার পরে চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই।’’ টাকি রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান শিক্ষক কল্যাণেশানন্দ বলেন, ‘‘ছেলেটা বরাবরই পড়াশোনায় ভাল। শিক্ষকেরা সব সময়ে ওকে সব রকম ভাবে সাহায্য করেন। আমরা মেহেদির পাশে রয়েছি।’’
গোবিন্দকাটি শিক্ষানিকেতনের ছাত্র বিপ্লব মণ্ডলের প্রাপ্ত নম্বর ৫৬২। সুন্দরবন-লাগোয়া হিঙ্গলগঞ্জের উত্তর পারঘুমটি গ্রামের এই ছাত্রের খড়ের চাল, মাটির দেওয়ালের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। তার বড়দা রাজমিস্ত্রি জোগাড়ের কাজ করেন। বাবা খেতমজুর। জীবন সংগ্রামের প্রথম ধাপ পেরিয়ে এসে বিপ্লবের স্বপ্ন, চিকিৎসক হওয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy