Advertisement
৩১ মার্চ ২০২৩
Farming

Farming: ভাসমান সব্জি ক্ষেত ও বীজতলা, ইয়াস-ত্রস্ত দেউলবাড়ি-আমতলিতে ভেলা এখন নোয়ার নৌকা

ভাসমান মাচায় ঝিঙে, বেগুন, টোম্যাটো, নানা রকমের শাক, লাউ, পেঁপে-সহ বিভিন্ন মরসুমি সব্জি চাষ করা সম্ভব।

ভেলার উপর সবজি চাষ।

ভেলার উপর সবজি চাষ। নিজস্ব চিত্র

সৈকত ঘোষ
ডায়মন্ডহারবার শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২১ ২১:১১
Share: Save:

শিক্ষা দিয়েছে ইয়াস এবং পূর্ণিমার ভরা কটাল। সেই সময় বিঘের পর বিঘে চাষ জমি নোনাজলে প্লাবিত হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছিল কৃষকদের। প্রথমত ফসল নষ্ট হয়েছিল। দ্বিতীয়ত নোনা জল ঢুকে উর্বরতা হারিয়েছে বহু জমি। এই অবস্থায় সুন্দরবনে সব্জি চাষে কৃষকদের দিশা দেখাচ্ছে নতুন পদ্ধতি। জলের উপর ভেসে থাকা ভেলায় হবে মরসুমি সব্জির চাষ। সুন্দরবনের প্রায় ৫০০ মহিলা এবং পুরুষ ইতিমধ্যেই এই কায়দায় সব্জি চাষ শুরু করেছেন।

Advertisement

জলাশয়ের উপর প্লাস্টিকের ড্রামের উপর প্রথমে বাঁশের মাচা তৈরি করা হয়। এর পর ভাসমান মাচার উপর চটের থলেতে (গ্রো ব্যাগে) বিশেষ ধরনের মাটি রাখা হয়। কেঁচো সার, নারকেলের ছোবড়া, সর্ষের খোলা, নিমের খোলা এবং হাড় গুঁড়ো-সহ বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রণে তৈরি করা ওই মাটি। গ্রো ব্যাগে বীজ বসিয়ে শুরু হয় চাষ। ভাসমান মাচায় ঝিঙে, বেগুন, টোম্যাটো, নানা রকমের শাক, লাউ, পেঁপে-সহ বিভিন্ন মরসুমি সব্জি চাষ করা সম্ভব। এমনকি চামরমণি, বাঁশকাঠি এবং দুধেশ্বরের মতো ধানের বীজতলা তৈরি করা সম্ভব এই পদ্ধতিতে।

ভেলার উপর তৈরি করা হচ্ছে বাঁশের মাচা।

ভেলার উপর তৈরি করা হচ্ছে বাঁশের মাচা। নিজস্ব চিত্র

এ ছাড়া জলাশয়ে সমান তালে মাছ এবং কাঁকড়াও চাষ করতে পারবেন কৃষকরা। আগে অসম, বিহার ও ত্রিপুরার মত রাজ্যে এই পদ্ধতিতে চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। এর পরই তার পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। এর নেতৃত্বে রয়েছে একটি সংস্থা। প্রথমে সমীক্ষা চালানোর পর দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের দেউলবাড়ি, কুমিরমারি, আমতলি, ছোটমোল্লাখালি এবং উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীকে এমন ভাবে চাষ করার পদ্ধতি নিয়ে প্রশিক্ষণও দেয় ওই সংস্থা। বিনামূল্যে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় বিশেষ মাটি এবং বীজ। তা দিয়েই শুরু হয় চাষ।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহু এলাকায় চলছে এই ভাবে চাষাবাদ।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহু এলাকায় চলছে এই ভাবে চাষাবাদ। নিজস্ব চিত্র

আপাতত সুন্দরবনের ৫০০ মহিলা ও পুরুষ ভাসমান মাচার উপর সব্জি চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন বলে ওই সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে চাষ করলে সুন্দরবনের প্রতিকূল পরিবেশে সহজেই বেড়ে উঠতে পারে সব্জি ও ধান। ওই সংস্থার তরফে প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর গীতশ্রী চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘সুন্দরবনের নোনাজল প্লাবিত এলাকার কৃষকদের কাছে এই পদ্ধতিতে চাষের কথা তুলে ধরেছিলাম আমরা। এখন বহু কৃষক সব্জি এবং কাঁকড়া চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। এতে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি আমরা। আগামী দিনে গোটা সুন্দরবন জুড়েই কৃষকদের এই পদ্ধতিতে চাষ করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার ভাবনা চিন্তা চলছে।’’

Advertisement
দেউলবাড়ির একটু পুকুরে শুরু হয়েছে ভেলায় চাষ।

দেউলবাড়ির একটু পুকুরে শুরু হয়েছে ভেলায় চাষ। নিজস্ব চিত্র

দেউলবাড়ি এলাকার নাইয়াপাড়ার বাসিন্দা পেশায় কৃষক বাপি নাইয়া বলেন, ‘‘ইয়াসের পর সব ক্ষেত নষ্ট হয়ে গিয়েছে। চাষের নতুন পদ্ধতির কথা জানতে পেরে প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষ শুরু করেছি।’’

ভাসমান ভেলায় ফলেছে সবজি।

ভাসমান ভেলায় ফলেছে সবজি। নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.