Advertisement
E-Paper

সন্তানের কবরের পাশে পিটিয়ে খুন বাবাকে

বাড়ির আঙিনায় সদ্যোজাত সন্তানের কবরের মাটি-ইট তখনও আলগা। তারই পাশে বাবাকে ফেলে পিটিয়ে মারল গ্রামের কিছু লোক। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিঙে। মারধরে সামনের সারিতে ছিল স্থানীয় তৃণমূল কর্মী কালাম সর্দার। তাকে খুঁজছে পুলিশ।

সামসুল হুদা

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২১
ছেলের কবর, এর পাশে ফেলেই পেটানো হয়েছিল ইসমাইলকে। নিজস্ব চিত্র।

ছেলের কবর, এর পাশে ফেলেই পেটানো হয়েছিল ইসমাইলকে। নিজস্ব চিত্র।

বাড়ির আঙিনায় সদ্যোজাত সন্তানের কবরের মাটি-ইট তখনও আলগা। তারই পাশে বাবাকে ফেলে পিটিয়ে মারল গ্রামের কিছু লোক।

মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিঙে। মারধরে সামনের সারিতে ছিল স্থানীয় তৃণমূল কর্মী কালাম সর্দার। তাকে খুঁজছে পুলিশ।

নিহত যুবকের নাম ইসমাইল মীর ওরফে বাবুলাল (২৬)। ঘুটিয়ারিশরিফের দক্ষিণ মাকাতলতার বাসিন্দা ইসমাইলের চার মাস বয়সের প্রথম সন্তান সোমবার সকালেই মারা যায়। জন্ম থেকেই অপুষ্ট ছিল শিশুটি। স্ত্রী এখনও ঘুটিয়ারি ব্লক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এমনিতে মদ-গাঁজা-হেরোইনের নেশা করতেন ইসমাইল। রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে পাওয়া টাকা ওড়াতেন সে ভাবেই।। নেশা করে গ্রামে ঢুকে হুজ্জুত বাধানোয় তাঁর উপরে বিরক্ত ছিলেন প্রতিবেশীরা।

সম্ভবত সে কারণেই সদ্যোজাত সন্তানের মৃত্যুর পরে পারলৌকিক ক্রিয়ার সময়ে আত্মীয়-পরিজন বা পাড়া-পড়শিদের কাউকে তেমন পাশে পাননি ইসমাইল। এ দিকে স্ত্রী-ও বাড়়িতে নেই। নিজের হাতে বাড়ির উঠোনে কবর খুঁড়ে সেখানে ছেলেকে সমাহিত করেন ইসমাইল।

পর দিন রাতে বাড়ি ফেরেন বেহেড অবস্থায়। শুরু হয় চিৎকার-চেঁচামেচি। আত্মীয়, পাড়া-পড়শিরা কেউ কেন পাশে দাঁড়াল না, সেই সব কথা তুলে মদ্যপ অবস্থায় নিশুত রাতে তুলকালাম বাধান ইসমাইল।

অভিযোগ, গাঁয়ের দু’চারজন এগিয়ে এসে ইসমাইলকে চুপ করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। এ বার শুরু হয় মারধর। ইসমাইলের দিদি রহিতা বিবির অভিযোগ, কিল-চড়-লাথি মেরে ভাইকে ফেলে হয় ছেলের কবরের পাশে। সেখানেই পিটিয়ে মারা হয়। বাধা দিতে গিয়ে প্রহৃত হন রহিতাও।

ওই মহিলার কথায়, ‘‘ভাই সে দিন বার বার বলছিল, গ্রামের কারও কিছু হলেই ছুটে যাই। অথচ, আমার দুধের শিশুটা অসুস্থ হয়ে মরে গেল, কেউ ফিরেও তাকাল না। এই নিয়ে কান্নাকাটি, হা-হুতাশ করছিল। অথচ, গাঁয়ের লোক ওকেই পিটিয়ে শেষ করে দিল।’’

পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে রহিতা আরও জানিয়েছেন, ভাই মারধরে নেতিয়ে পড়লে কালাম সর্দার, খোকন সর্দার, ঝড়ো সর্দার-সহ গাঁয়ের আরও কয়েকজন তাকে নিয়ে যায় ঘুটিয়ারি ব্লক হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করলে দেহ ফিরিয়ে আনে বাড়িতে। দাওয়ায় শুইয়ে দেয়। ইসমাইলের বৃদ্ধ বাবা ইসলাম মীর জানতে চেয়েছিলেন, ছেলে কেমন আছে। রহিতার দাবি, কালামরা বলেছিল, শরীর ঠিক আছে। ডাক্তার ঘুমের ওষুধ দিয়েছে, তাই সাড়াশব্দ নেই!’’

কালাম, খোকন-ঝড়ো-সহ কয়েকজনের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন রহিতা। তিনি বলেন, ‘‘ভাই মদ খেয়ে গ্রামে হাঙ্গামা করত, এটা ঠিক। প্রথম সন্তান মারা যাওয়ার পরে ওর আর মাথার ঠিক ছিল না। কিন্তু তা বলে এ ভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে?’’ চোখের জল মুছতে মুছতে রহিতা বলেন, ‘‘ছোট্ট শিশুটার কবরের পাশে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে গিয়ে সেখানেই ওকে পেটাল কালামরা। আমি কত কাকুতি-মিনতি করলাম। বললাম, ছেলেকে হারিয়ে ওর এখন হুঁশ নেই। ছেড়ে দে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আমাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। মারধর করল। চোখের সামনে দেখলাম, ভাইটা আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়ল।’’

কালাম স্থানীয় নারায়ণপুর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের সালাউদ্দিন সর্দারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। কালামের নেতৃত্বেই যে হামলা হয়েছে, সে কথা বলছেন ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য আবুবক্কর লস্করও। যদিও সালাউদ্দিন বলেন, ‘‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। শুনেছি, মদ খেয়ে যাকে তাকে গালাগাল করছিল ইসমাইল। গ্রামের কেউ কেউ রেগে গিয়ে গায়ে হাত তুলে থাকতে পারে। যদি আমাদের দলের কেউ জড়িত থাকলেও পুলিশ আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই।’’

কালাম-খোকনের মা গোলাপজান বিবির দাবি, ‘‘খোকন ওকে চড় মেরেছিল। তবে কালাম গিয়ে ঠেকিয়ে দেয়। যেহেতু কালাম রাজনীতি করে, ওকে ফাঁসাতে মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে।’’

TMC Police Graveyard
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy