আগুন নেভার পরে। নিজস্ব চিত্র।
কমনওয়েলথ গেমসে ব্রোঞ্জজয়ীর নামে রাস্তা তৈরি নিয়ে গোলমালে তেতে উঠল বসিরহাটের কোড়াপাড়া। চলল মারধর, পুড়ল ঘর। পরিস্থিতি সামলাতে বসিরহাটের এসডিপিও শ্যামল সামন্ত এবং আইসি দেবাশিস চক্রবর্তী বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। তবে এ দিনের গোলমালে রাস্তা তৈরির কাজে কোনও প্রভাব পড়েনি।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) গৌরব লাল বলেন, ‘‘একটি ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ হয়েছে। ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাট ২ ব্লকের ঘোড়ারস-কুলিনগ্রাম পঞ্চায়েতের কোড়াপাড়া গ্রামের দরিদ্র পরিবারের প্রতিবন্ধী মেয়ে সাকিনা খাতুন গত ২০১৪ সালের লন্ডন কমনওয়েলথ গেমসে ভারোত্তোলনে ব্রোঞ্জ পান। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে বাড়ি পাকা করে দেওয়া-সহ বিভিন্ন সাহায্য করা হয়। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কোড়াপাড়া গ্রামে এসে তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। তখন জেলাপরিষদের থেকে কোড়াপাড়া গ্রামে একটি কংক্রিটের রাস্তা তৈরি করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। গ্রামের সকলের সম্মতিতে ওই রাস্তার নাম দেওয়া হয় ‘সাকিনা রোড’। ৬১৫ মিটার ওই রাস্তা তৈরির জন্য জেলা পরিষদ ১৭ লক্ষ ৯৬ হাজার ৭৩১ টাকা বরাদ্দ করে। রাস্তার কিছু কাজ আগেই হয়ে গিয়েছে। শুরু হয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ। আর তখনই বিপত্তি। সাকিনার দাদা নুর ইসলাম গাজি দাবি করেন, তাঁদের বাড়ির উঠোন থেকে বোনের নামে রাস্তা শুরু করতে হবে এবং তাঁদের বাড়ির পাশে থাকা পুকুরের ধারে কংক্রিটের গার্ডওয়াল করে দিতে হবে। রাস্তার কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার জানান, সাকিনাদের উঠোনের কাছ থেকে রাস্তা তৈরি সম্ভব হলেও পুকুরের ধার বাঁধানো সম্ভব নয়। কারণ কাজের হিসেবের মধ্যে সেটি নেই। গ্রামবাসীদের একাংশ ঠিকেদারের পক্ষে দাঁড়ানোর পরেই গোলমাল শুরু হয়। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকালে রাস্তার কাজ শুরু হলে গ্রামবাসীদের সঙ্গে নুর ইসলাম গাজি ও তাঁর পরিবারের বচসা বাধে। সেই সময়ে নুরের একটি ঘরে আগুন ধরে যায়। নুর এবং তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে গ্রামবাসীদের একাংশ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের রেজাউল হক বিশ্বাস বলেন, ‘‘নুর ইসলামের দাবিমতই রাস্তা তৈরি করতে বলা হয়েছে। কিন্তু কাজের তালিকায় গার্ডওয়াল তৈরির কথা না থাকায় ঠিকাদার সেই কাজ করতে পারছেন না। গার্ডওয়াল না করলে রাস্তার কাজ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। এই জন্যই গ্রামবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়েছেন।’’ ওই পঞ্চায়েত সদস্যের দাবি, নুরের ঘরে আগুন লাগার পরে গ্রামবাসীদের জল দিতেও দেওয়া হয়নি।
যদিও নুর ইসলাম গাজির দাবি, ‘‘গ্রামের কয়েকজন এ দিন আমাকে মারধর করে। সে সময়েই কেউ একজন ঘরে আগুন দিয়ে দেয়। তবে কে আগুন দিয়েছে তা বলতে পারব না।’’ তাঁর দাবি, এলাকার নেতারাই বলেছিলেন পুকুর ধারে কংক্রিটের গার্ডওয়াল করে দেবেন। কিন্তু ঠিকাদারের পক্ষ নিয়ে গ্রামের একাংশ সেটা করতে দিচ্ছেন না।
এলাকার মতুরআলি মণ্ডল, মমতাজ বিবি, কোহিনুর বিবির দাবি, ‘‘সাকিনার সাফল্যে আমরা গর্বিত। আমরাও চাই রাস্তার নাম সাকিনা রোড করা হোক। বোনের সাফল্যের সুযোগ নিচ্ছেন তাঁর দাদা। এ দিন তিনি নিজেই নিজের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy