Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জ্বলছে বাজার, দমকল এল আড়াই ঘণ্টায়

আগুন লাগলে তার পরিণতি যে কী ভয়ঙ্কর হতে পারে তা হাড়ে হাড়ে ফের টের পেলেন ক্যানিংয়ের বাসিন্দারা। শুক্রবার গভীর রাতে ক্যানিং স্পোর্টস কমপ্লেক্স সংলগ্ন ক্যানিং বাজারে আগুন লাগে। কিন্তু আড়াই ঘণ্টা পর দেখা মেলে দমকল কর্মীদের। ক্যানিংয়ের নিকটবর্তী দমকল কেন্দ্র রয়েছে বারুইপুরে। সেও প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরে।

চোখের সামনে ক্যানিংয়ে ৩৪টি দোকান পুড়তে দেখলেন অসহায় ব্যবসায়ীরা। ছবিটি তুলেছেন সামসুল হুদা।

চোখের সামনে ক্যানিংয়ে ৩৪টি দোকান পুড়তে দেখলেন অসহায় ব্যবসায়ীরা। ছবিটি তুলেছেন সামসুল হুদা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৫ ০১:৫৯
Share: Save:

আগুন লাগলে তার পরিণতি যে কী ভয়ঙ্কর হতে পারে তা হাড়ে হাড়ে ফের টের পেলেন ক্যানিংয়ের বাসিন্দারা।

শুক্রবার গভীর রাতে ক্যানিং স্পোর্টস কমপ্লেক্স সংলগ্ন ক্যানিং বাজারে আগুন লাগে। কিন্তু আড়াই ঘণ্টা পর দেখা মেলে দমকল কর্মীদের। ক্যানিংয়ের নিকটবর্তী দমকল কেন্দ্র রয়েছে বারুইপুরে। সেও প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু সেখান থেকেও দমকল কর্মীদের পাওয়া যায়নি। সেই সময় অন্য জায়গায় আগুন নেভাতে গিয়েছিল বারুইপুর দমকলের ইঞ্জিন। শেষে ৫০ কিলোমিটার দূরের পাটুলি দমকল কেন্দ্র থেকে তিনটি ইঞ্জিন নিয়ে আসা হয়। কিন্তু ততক্ষণে ক্যানিং বাজারের প্রায় ৩৪টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুনের লেলিহান শিখা দেখা ছাড়া ততক্ষণ বাসিন্দাদের আর কিছুই করার ছিল না। আগুনের মোকাবিলা করতে না পেরে চোখের সামনে দোকানে রাখা মালপত্র পুড়ে যেতে দেখলেন ব্যবসায়ীরা।

গত ফেব্রুয়ারি মাসেও এই বাজারে আগুন লেগেছিল। কিন্তু সে সময়েও প্রায় ১০টি দোকান পুড়ে গিয়েছিল। সে বারও দমকল দেরিতে পৌঁছেছিল বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। অথচ কয়েক বছর আগে বাম আমলে ক্যানিংয়ে দমকল কেন্দ্রের জন্য জমি চিহ্নিতকরণ করা হয়েছিল। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১ সালে এই প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তৎকালীন দমকলমন্ত্রী প্রতিম চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু আজও দমকল কেন্দ্র গড়ে তোলা নিয়ে প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। বিপদের আশঙ্কা মাথায় নিয়েই তাঁদের এখানে থাকতে হচ্ছে বলে বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

প্রশাসন সূত্রে খবর, বাসন্তীর ভাঙনখালিতে দমকল কেন্দ্রের জন্য জমি চিহ্নিতকরণ করা হয়েছিল। তারপর তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে দমকল কেন্দ্র মহকুমা সদর ক্যানিং শহর সংলগ্ন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তারপর জমি দেখা শুরু হয়েছে। কিন্তু গত তিন বছরে সে কাজ বিশেষ এগোয়নি।

দমকল মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “দমকল কেন্দ্রের জন্য জমি চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। ২ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে।” ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্যের আশ্বাস, শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ওই বাজারের বেকারি ব্যবসায়ী ভজন পালের দোকানে প্রথম আগুন লাগে। বাজারের অন্য এক ব্যবসায়ী দিলীপ নস্কর তখন তাঁর দোকান ঘরে শুতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাঁর কথায়, “আমিই প্রথম আগুন দেখতে পাই। চিৎকার করে স্থানীয় বাসিন্দাদের ডাকি। কিন্তু মুর্হূতের মধ্যে আগুন বাজারের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পড়িমড়ি করে দোকান থেকে রাস্তায় নেমে আসি।” ততক্ষণে জড়ো হয়ে যান স্থানীয় মানুষজন। ছুটে আসেন ব্যবসায়ীরাও। অনেকে নিজেদের মতো করে জল জোগাড় করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুন যে ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, তা ওই সামান্য জলে নেভানোর চেষ্টা করা বৃথা দেখে অনেকে হাল ছেড়ে দেন।

খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসেন ক্যানিং থানার পুলিশ, এসডিপিও সৌম্য রায়, ক্যানিং ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পরেশরাম দাস প্রমুখ। দমকল আসার আগে তাঁরাই স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে আগুন নেভানোর কাজে নামেন। আগুন যাতে বেশিদূর না ছড়াতে পারে সে জন্য একটি মাটি কাটার যন্ত্র নিয়ে এসে দু’টি দোকান ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু তাতেও ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হয়নি। ক্যানিং বাজারের এক ব্যবসায়ী সিরাজ মোল্লা বলেন, “পর পর দু’বার আগুনে বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। কী ভাবে ফের শুরু করব জানি না।” পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পরেশরাম দাস বলেন, “এক মাসের ব্যবধানে বাজারে দু-দু’বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। ঠিক কী কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে প্রশাসনকে তা নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করতে হবে। পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে কী ভাবে গরিব দোকানদারদের সাহায্য করা যায় তা দেখছি।” পুলিশ জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের জেরে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শর্টসার্কিট থেকে এই অগ্নিকাণ্ড বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE