Advertisement
E-Paper

এত মৃত্যুতেও রাশ টানা যায়নি বাজি তৈরিতে, হাড়াল আছে হাড়ালেই 

কেউ বাজিতে দড়ি জড়াচ্ছেন, কেউ রঙিন কাগজ লাগাচ্ছেন। ঘরকন্নার আর পাঁচটা কাজের ধাঁচেই সকলে মিলে হাতে হাতে তৈরি করছেন বাজি।

হাড়ালে একটি বাড়ির বারান্দায় তৈরি হচ্ছে শব্দবাজি। শনিবার।

হাড়ালে একটি বাড়ির বারান্দায় তৈরি হচ্ছে শব্দবাজি। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

সমীরণ দাস 

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:০৬
Share
Save

বাড়ির বারান্দায় বসে শব্দবাজিতে সলতে পরাচ্ছিলেন বছর ত্রিশের গৃহবধূ। তাঁর আশপাশে বসে আরও কয়েক জন। কেউ বাজিতে দড়ি জড়াচ্ছেন, কেউ রঙিন কাগজ লাগাচ্ছেন। ঘরকন্নার আর পাঁচটা কাজের ধাঁচেই সকলে মিলে হাতে হাতে তৈরি করছেন বাজি। চার দিকে এত দুর্ঘটনার খবরে ভয় করে না? সপ্রতিভ গৃহবধূ জানান, এ তো সামান্য চকলেট বোমা। এতে কিছু হবে না।

গত কয়েক মাসে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বাজি বিস্ফোরণে একাধিক মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার কল্যাণীতে মারা গিয়েছেন চার জন। চম্পাহাটির হাড়ালেই মাস দেড়েক আগে বিস্ফোরণে দু’জনের মৃত্যু হয়। তার পরেও বারুইপুরের এই গ্রামে বেআইনি বাজি তৈরির রমরমা কমেনি। শনিবার এলাকায় ঘুরে একাধিক জায়গায় কার্যত প্রকাশ্যেই বাজি তৈরির কাজ চোখে পড়েছে। লুকিয়ে যে বহু জায়গায় বাজি তৈরি চলছে, তার প্রমাণও মিলেছে।

বাজি তৈরি ও বিক্রির গোটা ব্যবস্থাই গ্রাম থেকে সরিয়ে ফাঁকা জায়গায় ক্লাস্টার তৈরি করে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য প্রশাসনের। বিভিন্ন সূত্রের খবর, সে কাজও বেশি এগোয়নি।

গত ২৭ ডিসেম্বর হাড়ালে পিন্টু মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে উড়ে যায় বাড়ির একাংশ। অভিযোগ, ওই বাড়িতে বেআইনি ভাবে বাজি তৈরি হচ্ছিল। গ্রামের বেশ কিছু মহিলা সেখানে কাজ করছিলেন। অনেকেই জখম হন। সে দিনই এক জনের মৃত্যু হয়। পরে আরও এক জন মারা যান। সেই বাড়ি তথা কারখানা সিল করে দিয়েছে পুলিশ। এ দিন ওই বাড়ি থেকে অল্প দূরেই বারান্দায় বসে শব্দবাজি তৈরি হচ্ছে চোখে পড়ল। কিছুটা দূরে, বড় জায়গা জুড়ে শুকোতে দেওয়া হয়েছে বাজির মশলা। সেই মশলা শব্দবাজির, জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। গ্রামের একাধিক জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেল বারুদ।

ওই এলাকাতেই বাড়ি গত ডিসেম্বরের বিস্ফোরণে মৃত শঙ্করী সর্দারের। বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল দুই বৌমা ও নাতি-নাতনিদের। বৌমা লক্ষ্মী সর্দার বলেন, “গ্রামে অনেক বাড়িতেই বাজি তৈরি হয়। মেয়ে-বৌরাই কাজ করেন। শাশুড়িও তেমনই করতেন। জানি না, প্রশাসন কী ভাবছে, তবে যে কাজে এত ঝুঁকি, মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, সেই কাজ না করাই ভাল।”

বাজি তৈরিতে প্রসিদ্ধ চম্পাহাটির হাড়াল। ৬০০ মতো স্থায়ী দোকান রয়েছে। উৎসবের মরসুমে অস্থায়ী দোকানও বসে। বিস্ফোরণের পরে আপাতত বন্ধ সব দোকান। অভিযোগ, চোরাগোপ্তা ব্যবসা চলছেই। স্থানীয় সূত্রের খবর, বাজি তৈরির শংসাপত্র ছাড়াই হাড়ালের ঘরে ঘরে বাজি শিল্প।

হাড়াল বাজি ব্যবসায়ী সমিতির তরফে অলোক মণ্ডলের দাবি, “প্রশাসনের নির্দেশ মেনে কোথাও বাজি তৈরি বা বিক্রি হচ্ছে না। লুকিয়ে কেউ সেই কাজ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” আর পুলিশের দাবি, হাড়ালে নিয়মিত নজরদারি চালানো হচ্ছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Crackers Baruipur

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}