Advertisement
০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

সমুদ্র কেড়েছে স্বজন, ফিকে পুজো

ওঁরা কাকদ্বীপ ট্রলার দুর্ঘটনায় মৃত রঞ্জিত হালদারের বাবা-মা মোহন হালদার ও রাধারানি। একমাত্র ছেলের মৃত্যুশোকে দু’জনেই কাবু। কোনও মতে চলছে তাঁদের। কাকদ্বীপের ৮ নম্বর কালীনগর গ্রামের ওই দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এ বারে পুজোর কথা ভুলেই গিয়েছেন।

হতাশ: সস্ত্রীক মোহন হালদার। নিজস্ব চিত্র

হতাশ: সস্ত্রীক মোহন হালদার। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:০৮
Share: Save:

ক’দিন আগেই পাশের বাড়ি থেকে ভেসে আসা মহিষাসুরমর্দিনী শুনে ঘুম ভেঙেছিল ওঁদের। তারপর থেকে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি কেউই। ছেলের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ভোর গড়িয়ে সকাল হয়ে গিয়েছিল, টের পাননি তাঁরা।

ওঁরা কাকদ্বীপ ট্রলার দুর্ঘটনায় মৃত রঞ্জিত হালদারের বাবা-মা মোহন হালদার ও রাধারানি। একমাত্র ছেলের মৃত্যুশোকে দু’জনেই কাবু। কোনও মতে চলছে তাঁদের। কাকদ্বীপের ৮ নম্বর কালীনগর গ্রামের ওই দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এ বারে পুজোর কথা ভুলেই গিয়েছেন।

সাধ করে মোহন ও রাধারানি ছেলের বিয়েও দিয়েছিলেন। ছেলের আয়ে সংসারও ভাল চলছিল। কিন্তু রঞ্জিতের অকাল মৃত্যুতে সব ওলটপালট হয়ে গেল। ছেলে মারা যাওয়ার পরে বউমা বাপের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। সরকার কিছু টাকা দিয়েছে। তা বউমাই তুলে নিয়েছেন। মোহনবাবু জানান, আমাদের যে কী ভাবে চলবে, কে জানে! কী ভাবে বেঁচে থাকব আমরা? তিনি আরও জানান, আগের পুজোয় রঞ্জিত তাঁদের নতুন কাপড় এনে দিয়েছিলেন। এ বারে আর তাঁদের নতুন কাপড় দেওয়ার মতো কেউ নেই!

তবু মোহনবাবুরা যতটুকু যা পেয়েছেন, তা রঞ্জিতের দেহ মিলেছিল বলেই। ওই গ্রামের পাশের পাড়ার ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাসের পরিবার তো কিছুই পায়নি। তাঁর বড় ছেলে অর্জুন বিশ্বাস ট্রলার দুর্ঘটনায় তলিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আজও তাঁর দেহ না মেলায় সরকারি কোনও সাহায্যও মেলেনি। ইন্দ্রজিৎবাবু জানান, আগের বারে পুজোর সময়ে ট্রলার থেকে ফিরে নতুন জামা-কাপড় এনেছিলেন অর্জুন। এ বারে আর বাড়ির ছোট-বড় কারও জন্যেই কিছু কেনাকাটা করা যায়নি। পুজো দেখতে যাওয়ার মতো মানসিক অবস্থাও তাঁদের নেই।

পশ্চিম গঙ্গাধরপুরের বাসিন্দা চিত্ত দাসও এখনও নিখোঁজ। চার ছেলে-মেয়ে নিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী বিটু দাস। তাঁদের ছোট মেয়ে প্রিয়ঙ্কার বয়স পাঁচ বছর। বাবার নিখোঁজ হওয়া নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই তার কোনও ধারণা নেই। তাই মায়ের গলা জড়িয়ে প্রতিনিয়িত সে বলে চলেছে, বাবা কবে ফিরবে। কবে বাবা নতুন জামা আনবে।

চোখের জল মুছে বিটুদেবী তাকে সান্ত্বনা দেন। বিটু বলেন, ‘‘ছোট ছোট চার ছেলে-মেয়ে। এদের যে এখন কী করে খেতে দেব, কে জানে! সকাল হলেই মাছবন্দরে গিয়ে ভিক্ষা করি। যে ক’টাকা হয়, তা দিয়ে চাল কিনে ফুটিয়ে খাওয়াই। এই অবস্থায় আমাদের পুজো দেখার মতো মানসিকতা নেই।’’ একই কথা শোনালেন পশ্চিম গঙ্গাধরপুরের মৃত মৎস্যজীবী রবিন ভদ্রের স্ত্রী সুজাতাও।

এ বারে ইলিশের মরসুমে ট্রলার দুর্ঘটনায় মোট ৩৮ জন মৎস্যজীবী প্রাণ হারিয়েছেন। এঁদের মধ্যে দেহ মিলেছে ২৮ জনের। বাকি ১০ জনের কোনও হদিস পাওয়া যায়নি। ওই ২৮ জন নিখোঁজ মৎস্যজীবী পরিবারের মধ্যে বেশ কিছু পরিবারকে সরকার দু’লক্ষ করে টাকা দিয়েছে।

যাঁরা পাননি, তাঁদের কিছুটা আশা দিচ্ছেন কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বিজন মাইতি ও সতীনাথ পাত্র। তাঁরা জানান, ওই নিখোঁজ মৎস্যজীবী পরিবারের হাতে ট্রলার মালিকের পক্ষ কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে। ওঁরা যাতে কম দামে সরকারি চাল পান, সেই ব্যবস্থা হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Death Trawler Accident Durga Puja Family
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy