Advertisement
E-Paper

মুক্তিপণ দিয়েই ফিরলেন মৎস্যজীবীরা

মুক্তিপণ দিয়েই ফিরিয়ে আনা হল জলদস্যুদের হাতে অপহৃত তিন মৎস্যজীবীকে। বুধবার বাংলাদেশ-লাগোয়া চাঁদখালিতে ১০-১২ জন জলদস্যু হানা দিয়ে তিনটি ট্রলারের ২৮ জন মৎস্যজীবীকে আটক করে মারধর করে। ২৫ জনকে ওই দিনই ছেড়ে দিলেও তিন জনকে ধরে রেখেছিল তারা। ৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চায়।

সামসুল হুদা

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫৮

মুক্তিপণ দিয়েই ফিরিয়ে আনা হল জলদস্যুদের হাতে অপহৃত তিন মৎস্যজীবীকে।

বুধবার বাংলাদেশ-লাগোয়া চাঁদখালিতে ১০-১২ জন জলদস্যু হানা দিয়ে তিনটি ট্রলারের ২৮ জন মৎস্যজীবীকে আটক করে মারধর করে। ২৫ জনকে ওই দিনই ছেড়ে দিলেও তিন জনকে ধরে রেখেছিল তারা। ৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চায়। দরাদরির পরে ২ লক্ষে রফা হয় বলে জানিয়েছেন অপহৃতদের পরিবারের লোকজন। বহু বার জায়গা বদল করে শেষমেশ শুক্রবার বসিরহাটের কলেজ পাড়ার কাছে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে যান অপহৃতের পরিবার-পরিজন। তিন জনকে একটি ডিঙিনৌকায় করে ফেরত পাঠিয়ে দেয় জলদস্যুরা। পরে হেমনগর থানা থেকে তাঁদের সকলকে ছোটমোল্লাখালির কোস্টাল থানায় নিয়ে আসেন ওসি হিমাংশু দাস। সেখান থেকে গোসাবা থানা ও শেষে বাসন্তী থানা থেকে সকলকে পাঠানো হয় বাড়িতে।

অপহৃত মৎস্যজীবীদের অন্যতম সামাদ মোল্লার ছেলে খালেক দাবি করেছেন, বুধবার অপহরণের পর থেকেই বহু বার দুষ্কতীদের দেওয়া ফোন নম্বরে কথা হয়েছিল তাঁদের। মাথা-পিছু ৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে বিস্তর দরাদরি হয়। শেষে ক্যানিংয়ের মৌখালির বাসিন্দা সামাদ ও মুছা মোল্লার জন্য ৭৫ হাজার টাকা করে মোট দেড় লক্ষ টাকায় রফা হয়। বাসন্তীর ঝড়খালির বাপ্পা রপ্তানকে আরও ৫০ হাজার টাকা পেলে ছাড়া হবে বলে জানায় অপহরণকারীরা। পুলিশকে জানালে অপহৃতদের খুন করার হুমকি দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। ফলে লিখিত ভাবে পুলিশের সাহায্য চাননি ওই তিন পরিবারের লোকজন। স্থানীয় সূত্রের খবর, আগাগোড়া জীবনতলার এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা ছিলেন পরিবারগুলির পাশে। সামাদ ও মুছার মুক্তিপণের জন্য বেশ কয়েক হাজার টাকাও দেন তিনি। বাকি টাকা পরিবারের তরফে এবং স্থানীয় ভাবে সংগ্রহ করা হয়। অন্য দিকে, বাপ্পার মুক্তিপণের টাকা দিয়েছে ঝড়খালির একটি মৎস্যজীবী সংগঠন।

পরিবার সূত্রে মুক্তিপণ দিয়ে ওই তিন জনকে ছাড়িয়ে আনার কথা বলা হলেও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের একটি সূত্র অবশ্য দাবি করেছে, কোনও ভাবে ডিঙি নৌকোয় জলদস্যুদের খপ্পর থেকে পালিয়ে এসেছিলেন ওই তিন মৎস্যজীবী। তাঁদের অচৈতন্য অবস্থায় আড়বেশি জঙ্গলের কাছে রায়মঙ্গল নদী থেকে উদ্ধার করে হেমনগর থানার পুলিশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অপহৃতেরা সকলে বাড়ি ফিরেছেন। আমরা এ বার দুষ্কৃতীদের সন্ধানে জোরদার তল্লাশি চালাতে পারব।’’

বুধবারের পর থেকে কেমন ছিলেন অপহৃতেরা?

রবিবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, তাঁদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ এখনও কাটেনি। কোনও মতে জানালেন, অপহরণের পরে তাঁদের বেধড়ক মারধর করেছিল জলদস্যুরা। কিন্তু, পর দিন থেকে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে দর কষাকষি শুরু হওয়ায় আর অত্যাচার চালায়নি। বরং সময়মতো খেতে দেওয়া হয়েছিল। ভুটভুটিতেই রাখা হয়েছিল তাঁদের। তবে হাত-পা বাঁধা হয়নি। টানা তিনটে দিন জলপথেই এ দিক, ও দিক ঘুরে কেটেছে। সামাদরা জানান, চাঁদখালির কাছ থেকে অপহরণ করার পরে ঘণ্টা চারেক ভুটভুটি চালিয়ে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় আরও প্রত্যন্ত কোনও এক এলাকায়। বৃহস্পতিবার ভোরে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় চামটার জঙ্গলে। জলদস্যুদের কেউ কেউ বাংলাদেশি। সকলেরই হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।

খালেক জানিয়েছেন, অপহরণকারীরা ফোন করে টাকা আনতে বলেছিল। কিন্তু বার বার জায়গা বদল করে। কখনও কালিন্দী নদী, কখনও বসিরহাটের থানার সামনে, কখনও ইটিন্ডা ঘাটে আসতে বলা হয়। শেষমেশ খালেক-সহ তিন জনের সঙ্গে কলেজ পাড়ার কাছে দেখা করে জলদস্যুদের এক শাগরেদ। খালেকের দাবি, টেলিফোনে কথোপকথন শুনে তাঁরা বুঝতে পারেন, ওই শাগরেদের নাম মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল। টাকা হাতে পেয়ে কাছেই একটি ঘরে গিয়ে মেশিনে সেই টাকা জাল কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখে ওই দুষ্কৃতী। টাকা ঠিক আছে দেখে ফোনে যোগাযোগ করে আতিয়ার নামে দুষ্কৃতী দলের পাণ্ডার সঙ্গে। খালেকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে আতিয়ার। আশ্বস্ত করে, তিন জনকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়া হবে।

sundarban fishermen sundarban pirates ransom canning fishermen samsul huda
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy