Advertisement
E-Paper

জলমগ্ন এলাকা, ত্রাণ না মেলার অভিযোগ

প্রবল বৃষ্টি এবং সেই সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় নদী বাঁধ উপছে নোনা জলে প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা। এর ফলে অনেক জায়গাতেই উপড়ে পড়েছে গাছ, ভেঙেছে মাটির বাড়ি। প্রচুর বাড়িতে ঘরের মধ্যেও জল ঢুকে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০১:৪৯
ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

প্রবল বৃষ্টি এবং সেই সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় নদী বাঁধ উপছে নোনা জলে প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা। এর ফলে অনেক জায়গাতেই উপড়ে পড়েছে গাছ, ভেঙেছে মাটির বাড়ি। প্রচুর বাড়িতে ঘরের মধ্যেও জল ঢুকে গিয়েছে। নোনা জলে সব্জি ফসলের খেত, বীজতলা নষ্ট হয়েছে। পুকুর ছাপিয়ে এলাকায় মাছেদের সাঁতার কাটতে দেখা যাচ্ছে। একই অবস্থা বসিরহাট মহকুমা এবং দেগঙ্গা ব্লকের বিভিন্ন এলাকায়। বসিরহাটের মহকুমাশাসক শেখর সেন বলেন, ‘‘সুন্দরবন লাগোয়া বিশেষ করে হিঙ্গলগঞ্জ এবং সন্দেশখালি এক ও দুই ব্লকের রায়মঙ্গল নদী এলাকায় বাঁধের অবস্থা রীতিমতো বিপজ্জনক। ঝড় ও বৃষ্টির ফলে অনেক বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই সব জায়গায় সেচ দফতর, ব্লক এবং পঞ্চায়েত থেকে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কয়েক হাজার মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ইতিমধ্যে ৩৫টি ত্রাণ শিবিরে প্রায় ৩ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আপাতত ত্রাণ বাবদ ৮ হাজার পলিথিন এবং সাড়ে তিনশো কুইন্ট্যাল চালের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

এই পরিস্থিতির জন্য বসিরহাটের ৬টি ব্লকে স্কুলগুলিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নদী-সংলগ্ন গ্রাম থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বাসিন্দাদের। ব্লকে পৌঁছে দেওয়া হয় ত্রিপল, ত্রাণ সামগ্রী। জেলা আধিকারিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করা হচ্ছে মহকুমাশাসক ও বিডিওদের।

হিঙ্গলগঞ্জের মালোপাড়ায় ইছামতী নদীতে বড় আকারের ভাঙন দেখা দিয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জের যোগেশগঞ্জ এলাকার শ্রীধরকাটি, সর্দাপাড়া, মাধবকাটি, কানাইকাটি, দিঘিরপাড়া, সরুপকাটি, সাহেবখালি এলাকাতে কালিন্দী নদীর বাঁধে ধস নামে। কোথাও আবার খারাপ হয়ে গিয়েছে স্লুইস গেট। ফলে জল ঢুকে ভেসেছে চাষের জমি। হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তপন মণ্ডল বলেন, ‘‘সাঁতরা এবং ধরমবেড়িয়াতে নদী বাঁধ ভেঙেছে। সেখানে জেনারেটর লাগিয়ে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। বাঁধে ফাটল দেখা দেয় ধানিখালি, দুর্গাপুর, আকাড়িয়া, বাইনাড়া, কুমিরমারিতে। সাঁতরা গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটিও উপড়ে পড়েছে।’’

সন্দেশখালি ২ ব্লকের শুকদুয়ানি গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বালিয়া নদীর বাঁধ। সন্দেশখালি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি বুপালি করণ জানান, সাতশো মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে। বেড়মজুর ২ পঞ্চায়েতের ধুলিয়াতে ৭০ ফুট, সন্দেশখালিতে ১৫০ ফুট এবং মণিপুর, হাটগাছিতে বাঁধ ভেঙে গ্রামের মধ্যে জল ঢুকেছে। বয়ারমিরা ১ পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ স্থানীয় স্কুল বাড়ির ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। বেড়মজুর ১ নম্বর গাজিখালিতে ছোট কলাগাছি নদীর বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফাটল দেখা দিয়েছে কালীনগর মসজিদ বাড়ি এবং ঘোষপুর এলাকায় বেতনি নদীর বাঁধে। এলাকাবাসী আতঙ্কিত।

এ দিকে, টানা বৃষ্টির জন্য স্বরূপনগরের তিনটি পঞ্চায়েত এলাকা বেশ কিছু দিন ধরেই প্লাবিত ছিল। তার মধ্যে বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে আরও পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। পদ্মা-যমুনা, ইছামতী নদী এবং কঙ্কনা বাওড় ছাপিয়ে নোনা জল ঢুকে পড়েছে স্বরূপনগরের চারঘাট, শগুনা, তেপুল-মির্জাপুর বাদুড়িয়ার চাতরা, রামচন্দ্রপুর-উদয় পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে। কোথাও হাঁটু, কোথাও আবার বুক সমান জল জমে গিয়েছে। ইতিমধ্যে ওই সব এলাকায় বেশ কয়েকটি ত্রাণ শিবিরও খোলা হয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে ইছামতী, পদ্মা, যমুনা এবং সোনাই নদীর জল বাড়ায় চিন্তিত বাসিন্দারা। নদী ছাপিয়ে প্লাবিত হয়েছে গোপালপুর, বাড়ঘরিয়া, নিশ্চিন্দিপুর, মোল্লাডাঙা, পাতুয়া, চরপাড়া, খর্দরসিং, কাঁটাবাগান, দিয়াড়া, টিপি, কপিলেশ্বপুর, কাঁচদহ, ঘোলা, শ্রীনাথপুর, দলদারপাড়া। কঙ্কনা বাওড় ছাপিয়ে যাওয়ায় মেদিয়া, তেপুলের মানুষ জলবন্দি হয়েছেন। রমেন সর্দার নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘ইছামতীর জল ঢুকে দলদারপাড়া প্লাবিত হয়েছে। সোনাই নদীতে জল বাড়ছে। পরিস্থিতিতে আমরা আতঙ্কিত।’’ তবে এলাকায় ত্রাণ পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

বৃষ্টিতে দেগঙ্গা ব্লকের বড় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বহু বাড়ি ভেঙে পড়ার পাশাপাশি গাছ উপড়েছে। কলসুরে ৫টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। পারপাটনা, হরিণখোলা, নিকের আটি, চাণ্ডালআটি, বস্কিরহাট, বেলেখালি, পোলতারআটি সর্বত্র জলবন্দি মানুষ। দেগঙ্গার বিডিও মানস মণ্ডল বলেন, ‘‘আপাতত ১২টি ত্রাণ শিবিরে আটশোর মতো মানুষ আছেন। দু’শোর উপর মাটির ঘর ভেঙেছে। তিনশো পলিথিন এবং শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ বিডিও এ কথা বললেও ত্রাণ মিলছে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। সে কারণে শতাধিক মহিলা ত্রাণের দাবিতে পোস্টার হাতে বিডিওর দফতরে এসে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন।

Sundarban area Flood river Basirhat south bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy