Advertisement
E-Paper

পুলিশ ফাঁড়ির কাছেই বন্ধুকে খুন

রাত সওয়া দশটা। আঠারো বছর বয়সী কয়েক জন যুবকের মধ্যে ঝগড়া চলছে। হঠাৎ গুলির শব্দ। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ল একজন। কাছেই পুলিশ ফাঁড়ি। খবর পেয়ে যখন তাঁরা এলেন ততক্ষণে পালিয়ে গিয়েছে অভিযুক্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৬ ০২:১৫
অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙচুরের পর। ইনসেটে, নিহত সঞ্জয় লোহার। বৃহস্পতিবার নিজস্ব চিত্র।

অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙচুরের পর। ইনসেটে, নিহত সঞ্জয় লোহার। বৃহস্পতিবার নিজস্ব চিত্র।

রাত সওয়া দশটা। আঠারো বছর বয়সী কয়েক জন যুবকের মধ্যে ঝগড়া চলছে।

হঠাৎ গুলির শব্দ।

রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ল একজন। কাছেই পুলিশ ফাঁড়ি। খবর পেয়ে যখন তাঁরা এলেন ততক্ষণে পালিয়ে গিয়েছে অভিযুক্ত।

বুধবার রাতে জগদ্দলের আতপুর শাস্ত্রীনগর পঞ্চাননতলা ঘাটের এই ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকার মানুষ। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সঞ্জয় লোহার (১৮)। গুলি চালানোয় অভিযুক্ত সোমনাথ দাস পলাতক। তার বিরুদ্ধে এর আগে সঞ্জয়ের দাদাকে খুনের অভিযোগ রয়েছে। নিহত এবং অভিযুক্ত দু’জনের বাড়ি জগদ্দলের আতপুর শাস্ত্রীনগর পঞ্চাননতলা ঘাটে। সঞ্জয়কে প্রথমে ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়েই মৃত্যু হয় তাঁর। এরপরেই অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙচুর করে এলাকাবাসী। পুলিশ পিকেট বসেছে। মোতায়েন করা হয়েছে র‌্যাফ এবং মহিলা পুলিশ।

ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘অল্পবয়সিদের অপরাধ প্রবণতা রুখতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। কী কারণে এই খুন, সেটা জানার চেষ্টা চলছি। অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’’

কয়েকশো টাকা অথবা একটি মদের বোতলের জন্য খুন ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে নতুন ঘটনা নয়। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বেশির ভাগের বয়স ষোলো থেকে বাইশ বছর। নিখুঁত নিশানায় ওয়ান শটার ব্যবহার করতে অভ্যস্ত নতুন প্রজন্মের এই দুষ্কৃতীরা। কমিশনারেটের দুঁদে অফিসারদের দাবি, অন্তত একটি কাট্টা (ওয়ান শটারের চলতি কথা) না থাকলে যে এলাকায় দাদাগিরি চালানো যাবে না, এই আশঙ্কা থেকেই গুলি চালানোয় হাত পাকায় কমবয়সি দুষ্কৃতীরা। সঞ্জয় খুনে অভিযুক্ত সোমনাথও তার ব্যতিক্রম নয়।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত সঞ্জয় ওরফে টুসু পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করত। ঘটনার কিছুক্ষণ আগেও সে বাড়ির কাছেই রাস্তার ধারে সিমেন্ট বালি মাখছিল। তখন তাঁর মা ছেলেকে খেতে আসার জন্য ডাকতে গেলে সে জানায়, কিছুক্ষণ পরে যাচ্ছে। সঞ্জয়ের মা লক্ষ্মীদেবী জানান, এরপর বাড়িতে এসে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যায় সে। লক্ষ্মীদেবী বলেন, ‘‘ওকে দেখলাম জোরে সাইকেল চালিয়ে প্রথমে আতপুর ফাঁড়ি, তারপর পঞ্চাননতলা ঘাটের দিকে যেতে। তখন সওয়া ন’টা হবে। এর পর রাত দশটা নাগাদ পাড়ার কয়েক জন এসে বলল সোমনাথ আমার ছেলেকে গুলি করেছে। গিয়ে দেখি যেখানে বালি সিমেন্ট মাখছিল সেখানেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সঞ্জয়।’’ লক্ষ্মীদেবীর দাবি, মাস পাঁচেক আগে একশো টাকা নিয়ে গোলমালে তাঁর মেজ ছেলে সুজয় লোহারকেও খুন করেছিল সোমনাথ।

অভিযুক্তের বাবা এবং মাকে জ্ঞিগাসাবাদ করছে পুলিশ। সোমনাথের বাবা বলাইবাবুও রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। ছেলের কৃতকর্মে তাঁর বিশেষ হেলদোল নেই। তাঁর দাবি, ‘‘কোনও কারণে হয়তো ঘটনাটি ঘটে গিয়েছে। এর আগেও পুলিশ ওকে ধরেছে। আবার ছাড়াও পেয়ে গিয়েছে।’’ আঠারো বছরের এই দুঃসাহস কমাতে কড়া পুলিশি পদক্ষেপ চাইছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

police outpost murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy