Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দল বদলের হিড়িক, পুর পরিষেবা শিকেয়

শুধু নৈহাটি নয়, এই ডামাডোলে ধাক্কা খেয়েছে হালিশহর ও কাঁচরাপাড়া পুর পরিষেবাও।

যত্রতত্র: অরবিন্দ রোডে পড়ে আবর্জনা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

যত্রতত্র: অরবিন্দ রোডে পড়ে আবর্জনা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
নৈহাটি শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৯ ০২:০৮
Share: Save:

পুর প্রতিনিধিরা দিল্লিতে গিয়েছেন বিজেপিতে যোগ দিতে। পুর প্রধান স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি। এই পরিস্থিতিতে পুর পরিষেবা কার্যত শিকেয় উঠেছে নৈহাটিতে।

এই পুরসভায় ওয়ার্ড ৩১টি। এর মধ্যে ২১টি ওয়ার্ডই গঙ্গার ধারে। এলাকায় লোকসভায় পিছিয়ে তৃণমূল। ঘাসফুল শিবিরের ‘শক্ত জমি’ নৈহাটিতে এই হারের পরেই তৃণমূলের পার্টি অফিস দখল ও কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত সোমবার হালিশহর ও কাঁচরাপাড়ার কাউন্সিলরদের সঙ্গে দিল্লি গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন নৈহাটির বহু কাউন্সিলর। বিজেপির পক্ষ থেকে মুকুল রায় বলেন, ‘‘নৈহাটি পুরসভার ২৯ জন কাউন্সিলর বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।’’ যদিও এই তথ্য মানতে চাননি পুরপ্রধান অশোক চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘বিজেপির হয়ে যে দুষ্কৃতীরা ফল প্রকাশের রাত থেকে তাণ্ডব চালাল, তারা তো বাম আমলে বামেদের হয়েও তাণ্ডব করেছে। কাউন্সিলরেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, তাই কয়েকজন গিয়েছেন বিজেপিতে। অনেকেই দল ছাড়েননি।’’

কিন্তু এ সবের মাঝে কয়েকশো সাধারণ কর্মী ভয়ে ঘরছাড়া হয়েছেন বলে তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। যাঁদের অধিকাংশই পুরসভার সাফাই বিভাগ বা বিদ্যুৎ বিভাগ-সহ জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পর পর কয়েক দিন রাতভর রাজনৈতিক হিংসার কারণে তৃণমূলের এই কর্মীরা এলাকাছাড়া হয়েছেন বলে দাবি তৃণমূলের। ফলে পুর পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। বেশ কয়েকটি এলাকায় পাম্প চালানোর কর্মীর অভাবে পানীয় জলের সমস্যা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে সাফাই কর্মীর অভাবে পরিষ্কার হচ্ছে না রাস্তায় জমা জঞ্জাল। ভ্যাট উপচে পড়ছে অরবিন্দ রোড-সহ ঘোষপাড়া রোডের উপরে।

নৈহাটির গরিফা সেনপাড়ার বাসিন্দা শিবাণী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভোটের পর থেকেই অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখন তো সব থেকে বেশি সমস্যা হচ্ছে সাধারণ মানুষের। যে রাজনৈতিক দলই আসুক, আমরা পুরসভার কাছ থেকে নাগরিক পরিষেবা চাই।’’

শুধু নৈহাটি নয়, এই ডামাডোলে ধাক্কা খেয়েছে হালিশহর ও কাঁচরাপাড়া পুর পরিষেবাও। মঙ্গলবার কাঁচরাপাড়া পুরসভার ১৮ জন কাউন্সিলরই ছিলেন দিল্লিতে। পুরপ্রধান সুদামা রায় একাই পুরসভা সামলেছেন। এ দিকে, পুর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডেই কাউন্সিলরেরা দল বদল করলেও নিচুতলার কর্মীরা এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, কী করবেন। ফলে পুরসভার কাজে ব্যাঘাত হচ্ছে। কাঁচরাপাড়ার পুরপ্রধান অবশ্য বলেন, ‘‘সদ্য দল বদল হলে সামাল দিতে একটু সময় লাগে। তবে পুরসভার কাছে তেমন সমস্যা হবে না।’’ কাঁচরাপাড়ার মতো একই অবস্থা হালিশহর ও ভাটপাড়াতেও।

তবে মুকুল রায়ের কাঁচরাপাড়া আর অর্জুন সিংহের ভাটপাড়ার মাঝে তৃণমূলের যুব সভাপতি তথা বিধায়ক পার্থ ভৌমিকের নৈহাটির অবস্থা কার্যত ‘স্যান্ডউইচের’ মতো। পার্থ বলেন, ‘‘আমরা কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলছি। বোঝাচ্ছি।’’ যদিও হাল ছাড়ার মতো শোনাল পুরপ্রধান অশোক চট্টোপাধ্যায়ের কথা। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভা যদি ওরা নিয়ে নেয়, নিক। আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব। মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে, পদে থেকে এটা আর মানতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Naihati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE