E-Paper

পাড় ভেঙে ক্রমেই ছোট হচ্ছে দ্বীপ

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বার বার বিপর্যস্ত দুই ২৪ পরগনা। এখনও শ্রী ফেরেনি বহু সংসারে। অনেকে জমি-জিরেত হারিয়ে কাজের খোঁজে ভিন্‌ রাজ্যে। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার।

সমরেশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৪২
বিপজ্জনক: নদীর ভাঙনে ক্রমশ ক্ষয়ে যাচ্ছে ঘোড়ামারা দ্বীপ। নিজস্ব চিত্র।

বিপজ্জনক: নদীর ভাঙনে ক্রমশ ক্ষয়ে যাচ্ছে ঘোড়ামারা দ্বীপ। নিজস্ব চিত্র।

ভাঙা নদীবাঁধের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ঘোড়ামারার বাসিন্দা, বছর পঞ্চাশের ভগবতী রুইদাস। দূরে সমুদ্রের দিকে দেখিয়ে বললেন, ‘‘এক সময়ে খাসিমারায় থাকতাম। এখনও ওই গ্রামে থাকি, কিন্তু সমুদ্র গিলে খেয়েছে খাসিমারার অর্ধেকের বেশি অংশ। গত বছর ইয়াসে ঘরবাড়ি নদী গর্ভে চলে গিয়েছে। উদ্বাস্তু হয়ে দিনের পর দিন কাটিয়েছি। এখন দ্বীপের উঁচু জায়গায় কোনও রকম মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে।’’ তিনি জানান, প্রশাসনের তরফে আশ্বাস মিলেছে সাগরদ্বীপে পুনর্বাসন মিলবে। কিন্তু পাট্টা পেলেও এখনও পুনর্বাসন মেলেনি। একই অভিযোগ তাঁর মতো আর বেশ কয়েকটি পরিবারের। তাঁদের আশঙ্কা, এই দ্বীপও আর বেশি দিন টিঁকবে না। এরপর কোথায় যাবেন, দুশ্চিন্তায় সকলে।

মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ঘোড়ামারা দ্বীপকে ঘিরে রয়েছে নদী ও সমুদ্র। এক দিকে বটতলা, মুড়িগঙ্গা ও হুগলি নদী। অন্য দিকে বঙ্গোপসাগর। সাগরদ্বীপে যাওয়ার সময়ে ডান দিকে পড়ে ঘোড়ামারা দ্বীপ। এক সময়ে সাগরদ্বীপের অংশ ছিল এটি। প্রবীণ বাসিন্দারা জানালেন, সাগর ও ঘোড়ামারা দ্বীপের মাঝে ছোট একটি খাল ছিল। অনেকে সাঁতরে ওই খাল পেরোতেন। সেই খাল এখন বেড়ে প্রায় ৮-৯ কিলোমিটার চওড়া নদী হয়ে গিয়েছে। ক্রমশ ক্ষয়ে যাচ্ছে দুটো দ্বীপ। ঘোড়ামারা ভাঙছে দ্রুত। প্রত্যেক বার কটালের সময়ে বাঁধ ভেঙে জল ঢোকে। প্রতিবারই কেউ না কেউ ভিটেমাটি হারান। ক্ষতি হয় চাষের জমি, পানের বরজের।

পরিবেশবিদদের মতে, নদীর স্রোত এখানে বেশি। ভূপৃষ্ঠের নীচের অংশে বালির ভাগ বেশি, সেই অংশ দুর্বল হওয়ায় সহজে ক্ষয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, নীচের অংশ ক্ষয়ে গিয়ে নদীর পাড় ঝুলছে শূন্যে। ওই অংশ ক্রমশ ভারী হয়ে গিয়ে ধসে পড়ছে। ভূবিজ্ঞানীদের মতে, সমুদ্রে জলস্তর বৃদ্ধিও ভাঙনের অন্যতম কারণ।

স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘোড়ামারার একটি অংশ লোহাচরা তলিয়ে গিয়েছে আগেই। খাসিমারাও অনেকটা ছোট হয়ে গিয়েছে। স্রোতের আঘাতে ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে পাত্রপাড়া, গিরিপাড়া, মাইতিপাড়া, চুনপুরির মতো গ্রামগুলি। সরকারি তথ্য বলছে, লোকসংখ্যাও কমে গিয়েছে আগের থেকে। বর্তমানে ১১২৫টি পরিবারের বাস ওই দ্বীপে। হাজার তিনেক ভোটার। এলাকায় কাজের সুযোগ নেই বললেই চলে। কখনও সখনও একশো দিনের কাজ মেলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রধান জীবিকা সমুদ্রে মাছ ধরা। অনেকেই কাজের খোঁজে চলে যান ভিন্ রাজ্যে।

বাসিন্দা অঞ্জলি কান্ডার বলেন, ‘‘আগে হাটখোলা গ্রামে ছিলাম। ইয়াসে ভিটেমাটি হারিয়েছি। এখন উঁচু জায়গায় কোনও রকমে থাকি। স্বামী মাছ ধরলে সংসার চলে। আর্থিক অনটনের জন্য ছেলেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াতে পারিনি।’’ বাস্তুভিটে হারিয়েছেন উদয় হালদার। তিনি বলেন, ‘‘এক জনের বাগানবাড়িতে ত্রিপল টাঙিয়ে বাস করছি। নেতারা এসে বলছেন, ধাপে ধাপে সকলকে পুনর্বাসন দেওয়া হবে। কিন্তু সে সব মেলে না। ভোট দেওয়ারও আর উৎসাহ পাই না।’’ ইয়াসে বাস্তুভিটে হারিয়েছিলেন অম্বিকা প্রামাণিক। তাঁর কথায়, ‘‘পুনর্বাসন মেলেনি। সামনে পঞ্চায়েত ভোট, আবার নানা রকম প্রতিশ্রুতির কথা শুনছি। আমরা তো ওঁদের কথা মতো ভোট দিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের অবস্থার কথা কেউ ভাবে না।’’

ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জীব সাগর বলেন, ‘‘খাসিমারার দিকে নদীবাঁধ বেহাল। সেচ দফতরকে বলেছি কাজ করার জন্য। অন্যান্য দিকে বাঁধের কাজ চলছে।’’ সাগরের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘এ বছরই ৩০টি পরিবার পুনর্বাসন পাবে। নদীবাঁধের সমস্যার বিষয়ে সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে। দ্রুত সারানোর ব্যবস্থা করা হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ghoramara Islands Soil Erosion

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy