Advertisement
E-Paper

পাচার রুখে পুরস্কৃত মেয়ে

মুম্বই থেকে তাঁকে ফিরতে সাহায্য করেছিল বসিরহাটেরই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। গ্রামের অনেকে তাঁর ফিরে আসাটা ভাল চোখে দেখেনি। হুমকির মুখে পড়ে মামার বাড়িতে চলে যেতে বাধ্য হন ফিরোজা। শেষে ব্লক আধিকারিক, পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের প্রচেষ্টায় বাড়ি ফেরেন।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৮ ০১:০৩
সম্মানিত: ফিরোজা। নিজস্ব চিত্র

সম্মানিত: ফিরোজা। নিজস্ব চিত্র

সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত তখন মেয়েটি। ভালবেসেছিল এক যুবককে। ঘর বাঁধবে বলে ঘর ছেড়েছিল। জীবন বদলে যায় তখন থেকেই।

ভালবাসার মানুষটাই বিক্রি করে দিয়েছিল তাকে। সেখান থেকে পালিয়ে আসে কিশোরী। তারপর জীবনে অনেক ঝড় বয়ে গিয়েছে। এখন তিনি সাবালিকা। কলেজে পড়ছেন। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর লড়াই চালাচ্ছেন। সেই সঙ্গে পাচার হয়ে যাওয়া অন্য নাবালিকাদের উদ্ধারের জন্যও কাজ করছেন। নাবালিকার বিয়ে আটকানোর জন্য সচেষ্ট হয়েছেন। তৈরি করেছেন ‘উত্থান’ নামে একটি সংগঠন। মেয়েদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে মুম্বই, দিল্লি, কলকাতায় ছোটাছুটি করছেন ফিরোজা খাতুন।

বিশ্ব নারী দিবসে লড়াকু এই নারীকে সম্মান জানিয়েছে সরকার। ঘর বানানোর জন্য তাঁর হাতে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার চেক তুলে দিয়েছেন বসিরহাট ১ বিডিও সৌরভ মিত্র। সঙ্গে ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সীমা দাস। বিডিও বলেন, ‘‘পাচার হয়ে যাওয়ার পরেও মেয়েটি যে ভাবে লড়াই চালিয়ে ফিরে এসেছেন, যে মানসিক শক্তির পরিচয় দিয়েছেন, তা এক কথায় অনবদ্য। ওঁকে দেখে এখন অনেক মহিলা মনের জোর ফিরে পাচ্ছেন।’’ সংগ্রামপুর-শিবহাটি পঞ্চায়েতের বিরামনগর গ্রামে স্ত্রী, চার সন্তানকে নিয়ে থাকতেন সফিকুল গাজি। পরিবারের ছোট মেয়ে ফিরোজা। অভাবের সংসারে এক দিন ভালবেসে ঘর ছেড়েছিলেন। মুম্বই থেকে তাঁকে ফিরতে সাহায্য করেছিল বসিরহাটেরই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। গ্রামের অনেকে তাঁর ফিরে আসাটা ভাল চোখে দেখেনি। হুমকির মুখে পড়ে মামার বাড়িতে চলে যেতে বাধ্য হন ফিরোজা। শেষে ব্লক আধিকারিক, পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের প্রচেষ্টায় বাড়ি ফেরেন।

নতুন করে স্কুলে ভর্তি হয়ে শুরু হয় পড়াশোনা। এখন বসিরহাট কলেজে বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ফিরোজা। সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এলেও ভোলেননি জীবনের অন্ধকার দিনগুলোর কথা। পাচারকারীদের খপ্পর থেকে ফিরে আসা মেয়েদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন সংগঠন। স্কুলে স্কুলে, গ্রামে গিয়ে প্রচার করছেন তাঁরা। বলছেন, কী ভাবে আটকানো যেতে পারে নারীপাচার। কী ভাবে ছোট বয়সে বিয়ে না করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর লড়াই চালাতে পারেন মেয়েরা। ফিরোজার কথায়, ‘‘সে দিন বন্ধুকে বিশ্বাস করে ঘর ছেড়ে যে ভুল করেছিলাম, তা যেন আর কেউ না করে। অনেক চেষ্টায় গ্রামে ফিরলেও কারও কারও বাধায় আরও একবার ঘর ছাড়তে হয়েছিল। তবু লড়াইটা ছাড়িনি।’’

লড়াইয়ের সেই মন্ত্রটাই এখন বাকিদের শিখিয়ে বেড়াচ্ছেন ফিরোজা।

Trafficking পাচার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy