Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বহু টাকার সোনা উদ্ধার, স্বরূপনগরে গ্রেফতার ২

কোমরে বাঁধা গামছা। আর গামছার পাকে বাঁধা সোনার বাট। দুই দুষ্কৃতীর দিকে রিভলভার তাক করে প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকার সোনা উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে হোসেন মল্লিক ও মনিরুল মল্লিক নামে ওই দু’জনকে।

সোনা পাচারে ধৃত হোসেন ও মনিরুল। —নিজস্ব চিত্র।

সোনা পাচারে ধৃত হোসেন ও মনিরুল। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩১
Share: Save:

কোমরে বাঁধা গামছা। আর গামছার পাকে বাঁধা সোনার বাট। দুই দুষ্কৃতীর দিকে রিভলভার তাক করে প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকার সোনা উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে হোসেন মল্লিক ও মনিরুল মল্লিক নামে ওই দু’জনকে।

বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বরূপনগরের ঘোড়াগাছা গ্রাম থেকে দু’জনকে ধরা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ২ কেজি ৪৮৮ গ্রাম ওজনের তিনটি সোনার বাট উদ্ধার হয়েছে।’’ এই নিয়ে গত এক বছরে পুলিশ এবং বিএসএফের যৌথ অভিযানের ফলে বসিরহাট মহকুমার সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আনা বেশ কয়েক কোটি টাকার সোনা উদ্ধার হল।

সম্প্রতি বসিরহাটে এসেছিলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সন্দেশখালির সুন্দরবন লাগোয়া টি-জংশন এলাকায় রায়মঙ্গল নদীতে ভাসমান বিএসএফের চৌকিতে সীমান্তরক্ষীদের আধিকারিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। ওই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল, সীমান্ত এলাকায় দিয়ে চোরাচালান, গরুপাচার, জাল টাকা পাচার এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করা। দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ফিরে যেতেই বসিরহাট মহকুমায় পুলিশ এবং বিএসএফ যৌথ নজরদারি আরও বেড়েছে। স্বরূপনগরেও বিশেষ অভিযানে নেমেছে সীমান্তরক্ষীরা। হাকিমপুর, মল্লিকপুর, নবাদকাটি, আমুদিয়া, বয়ারঘাটা, বালতি, নিত্যানন্দকাটি এবং গোয়ারবাথান গ্রামে বিশেষ অভিযান চালিয়ে প্রচুর গরু আটক করা হয়। এলাকার মানুষের দাবি, এই ভাবে যদি অভিযান চালানো হয় তা হলে সীমান্ত এলাকায় গরু পাচার বন্ধের পাশাপাশি ফসলের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচা সম্ভব হবে। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশও বন্ধ হবে।

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন এক সূত্রে পুলিশ জানতে পারে, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ ভাবে এ পারে আনা হচ্ছে। দুই ব্যক্তি সোনা নিয়ে চণ্ডীপুর হয়ে মসলন্দপুরের দিকে যাচ্ছে। পুলিশ বা সীমান্তরক্ষীরা যাতে সন্দেহ করতে না পারে, সে জন্য দুষ্কৃতীরা সাইকেলে যাচ্ছিল। এসডিপিও সাদা পোশাকে বাহিনী নিয়ে চণ্ডীপুরের ঘোড়াগাছা গ্রামে পৌঁছে যান। দুপুর ৩টে নাগাদ দুই সাইকেল আরোহীকে আসতে দেখে তৎপর হয় পুলিশ। সীমান্ত এলাকা মল্লিকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ওই দুষ্কৃতীদের ঘিরে ফেলে পুলিশ।

পুলিশ ও বিএসএফ সূত্রের খবর, জুলাই মাসে পুলিশের তৎপরতায় ১৩ কেজি সোনা উদ্ধার হয়েছিল। সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ৩ কেজি সোনা আটক করা হয়। এ দিন প্রায় আড়াই কেজি সোনা উদ্ধার হল। গত কয়েক মাসের মধ্যে স্বরূপনগর সীমান্তবর্তী আমুদিয়া গ্রাম থেকে সরাত গাজি ওরফে সোহারফ নামক এক দুষ্কৃতীকে বিএসএফ ধরে। তার কাছ থেকে ৬০টি সোনার বিস্কুট উদ্ধার হয়। যার ওজন ছিল প্রায় ৫ কেজি সাড়ে সাতশো গ্রাম। বি এস এফের পক্ষে জানানো হয়, স্বরূপনগর সীমান্ত থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকার বেশি মূল্যের শতাধিক সোনা বিস্কুট এবং বার উদ্ধার করা হয়েছে। স্বরূপনগরের কৈজুড়ি, গাবর্ডা, আমুদিয়া, হাকিমপুর-সহ সীমান্তবর্তী গ্রাম দিয়ে সোনাই নদী পার করে সোনা ছাড়াও গরু, মহিষ, গাড়ির যন্ত্রাংশ, মাদক পাচার চলে। কাশির নিষিদ্ধ ওষুধ, লবঙ্গ, এলাচ, পিতল, কাঁসা, জাল টাকা, রূপোর অলঙ্কারের মতো আরও নানা কিছু জিনিস এই সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে যায়। বিএসএফের দাবি, আগে গরু বিক্রি করে পাচারকারীরা নগদ টাকা নিয়ে ফিরত। এখন বাংলাদেশের সোনা এ পারে এনে বিক্রি করতে পারলে লাভের অঙ্ক অনেকটাই বেশি। গরু পাচারের বদলে সোনায় দাম দেওয়ার হিড়িক বেড়েছে বলে সোনা পাচারও বেশি হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE