Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

সম্প্রীতির পুজোয় প্রথমবার শারদোৎসব টালিখোলায়

হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষের হাত ধরে এই প্রথম শারদোৎসবে আলো জ্বলে উঠল গোপালনগর থানার বারাকপুরের টালিখোলা মোড় এলাকায়।

পুজোর আয়োজনে ব্যস্ত সকলে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

পুজোর আয়োজনে ব্যস্ত সকলে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র
গোপালনগর শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৪৩
Share: Save:

হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষের হাত ধরে এই প্রথম শারদোৎসবে আলো জ্বলে উঠল গোপালনগর থানার বারাকপুরের টালিখোলা মোড় এলাকায়।

বনগাঁ-চাকদহ রাজ্য সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড় এই টালিখোলা। রয়েছে দোকানপাট, বাড়ি, পঞ্চায়েত অফিস। ঢিল ছোড়া দূরত্বে সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বসত বাড়ি। হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষেরই বসবাস ওই এলাকায়। এখান থেকে বনগাঁ শহরের দূরত্ব মাত্র ছ’কিলোমিটার। সেখানকার পুজোর খ্যাতি গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এত দিন টালিখোলা মোড় এলাকায় দুর্গাপু জো না হলেও আশেপাশের এলাকায় দুর্গা পুজোর আয়োজন হয়ে আসছে। শারদোৎসবে ওই এলাকাটিতেই একমাত্র পুজোর আলো জ্বলত না।

কিন্তু এ বার এলাকার কিছু হিন্দু-মুসলিম মানুষ মিলে সিদ্ধান্ত নেন, দুর্গা পুজো করতে হবে। পুজো আয়োজনের মাধ্যমে সম্প্রীতির ভিত আরও মজবুত করাটাই তাঁদের লক্ষ্য। স্থানীয় ইয়ং স্টার ক্লাবের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছে দুর্গা পুজোরর। দুই সম্প্রদায়ের প্রায় একশো জন মানুষ প্রত্যক্ষ ভাবে যার আয়োজনে এখন ব্যস্ত। চাঁদা সংগ্রহ করছেন ইয়ান মণ্ডল, আইজুল মণ্ডল, সাহাজান মণ্ডল, জীবন সিংহ, গৌরব অধিকারী, সৌমিত্র বিশ্বাসেরা। প্রতিমা বায়না দেওয়া থেকে শুরু করে প্রতিমা আনা, মণ্ডপ তৈরির তদারকি— সবই করছেন তাঁরা এক সঙ্গে।

৪০ ফুট উঁচু ও ৪২ ফুট চওড়া মণ্ডপ তৈরি হয়েছে কাল্পনিক এক মন্দিরের আদলে। বাজেট প্রায় ২ লক্ষ টাকা। বড় পুজোর সঙ্গে তুলনায় আয়োজন হয় তো চোখ ধাঁধানো নয়, কিন্তু আন্তরিকতা এবং সম্প্রীতির বার্তায় অন্য মেজাজ তৈরি হয়েছে এই পুজোকে ঘিরে।

ইয়ান মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের এখানে দুই সম্প্রদায়ের মানুষেরই বসবাস। সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিই, অন্য সব জায়গায় পুজো হলেও আমরা কেন এখানে পুজো করতে পারব না? হিন্দু ভাইদের প্রস্তাবটা দিতেই তাঁরাও রাজি হয়ে যান। তারপরেই আমরা আসরে নেমে পড়ি। পুজো শেষে আমরা এক সঙ্গেই প্রতিমা বিসর্জন দিতে যাব।’’

অতীতে নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে এখানে। রাজনৈতিক উত্তেজনাও ছিল। দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যেও এলাকা বহুবার উত্তপ্ত হয়েছে আগে। এখন অবশ্য পরিবেশ স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানালেন এলাকার মানুষ। সেই আবহেই দুর্গা পুজো।

সামু মণ্ডল নামে এক যুবকের কথায়, ‘‘আমাদের ইদ উৎসবে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ সামিল হন। বাড়িতে গিয়ে নিমন্ত্রণ রক্ষা করেন। তা হলে আমরাও কেন শারদ উৎসবে সামিল হব না?’’

পুজো কমিটির সহ সম্পাদক জীবন সিংহের কথায়, ‘‘আমাদের এখানে পুজো হতোই না। পুজোর দিনগুলোয় এলাকা সন্ধ্যার পরে বছরের অন্য দিনের মতোই অন্ধকারে ডুবে থাকত। তাই এ বার দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মিলে পুজোয় আয়োজন করলাম। সকলে এক সঙ্গে খুব আনন্দ করব।’’

ওই পুজো আয়োজনে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় বাসিন্দা তথা বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। তিনি বলেন, ‘‘এলাকার মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির ভিত আরও মজবুত করবে এই পুজো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hindu Muslim Secularism durgapuja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE