Advertisement
E-Paper

বিষ মিশছে ইছামতীর জলে

তবে অন্য বছরের মতো ফুল ও বেলপাতা জলে ফেলা হয়নি। তা পুরসভার পক্ষ থেকে নদীর পাড়ে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৭ ০২:২১
দৃশ্য-দূষণ: ইছামতীতে আঁকশি দিয়ে সরিয়ে আনা হচ্ছে প্রতিমা। নীচে, নৈহাটি গঙ্গাপাড়ে পড়ে কাঠামো। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

দৃশ্য-দূষণ: ইছামতীতে আঁকশি দিয়ে সরিয়ে আনা হচ্ছে প্রতিমা। নীচে, নৈহাটি গঙ্গাপাড়ে পড়ে কাঠামো। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

পরিবেশের নিয়মে প্রতিমা বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে কাঠামো তুলে আনতে হয়। তবে নিয়ম যাই থাকুক, এ বারও প্রতিমা বিসর্জনের ফলে দূষিত হল ইছামতীর জল। পাশাপশি স্থানীয় নাওভাঙা ও যমুনা নদীর জল একই কারণে দূষিত হচ্ছে বছরের পর বছর। দশমীর দিন থেকে বনগাঁ থানার ঘাট-সহ ইছামতী নদীর সর্বত্র প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া শুরু হয়েছিল। শেষ হয়েছে বুধবার। বাড়ি ও বারোয়ারি মিলিয়ে কয়েকশো প্রতিমা এ বার ইছামতীতে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।

তবে অন্য বছরের মতো ফুল ও বেলপাতা জলে ফেলা হয়নি। তা পুরসভার পক্ষ থেকে নদীর পাড়ে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গ্রামীণ এলাকায় অবশ্য এ সবের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। গাইঘাটা এলাকায় যমুনায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার ফলে জল দূষিত হচ্ছে। বহু দিন ধরে ইছামতী নাব্যতা ও স্রোত হারিয়ে এখন মৃতপ্রায়। বছরের বেশির ভাগ সময় নদীটি কচুরিপানায় ঢেকে থাকে। শেষ কবে নদীতে জোয়ার-ভাটা দেখা গিয়েছিল তা অনেকেই মনে করতে পারেন না। কচুরিপানা পচে ও নোংরা আবর্জনা পড়ে এমনিতেই নদীর জল দূষিত। তার উপরে গত বছর দুর্গা পুজোর পরে নদীতে কয়েকশো প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। ফলে নদীর জলের দূষণ আরও বাড়ে।

এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। থানার ঘাটে গিয়ে দেখা গেল, প্রতিমা জলে ডোবানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরসভার কর্মীরা তা টেনে নিয়ে গিয়ে মাঝনদীতে ছেড়ে দিচ্ছেন। প্রতিমার রঙ জলে মিশে যাচ্ছে। তবে সম্প্রতি বনগাঁ শহর এলাকায় পুরসভার পক্ষ থেকে কচুরিপানা তোলা হয়েছে। পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘এখানে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার কারণে ইছামতীতে প্রতিমা বিসর্জন দিতে হয়। বুধবার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার কাজ হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে কাঠামো তোলার কাজ শুরু করা হচ্ছে। এখানে দ্রুত প্রতিমা তুলে রাখারও কোনও জায়গা নেই।’’

প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ইছামতীর জল দূষণ বনগাঁ শহরের দীর্ঘদিনের সমস্যা। প্রবীণেরা জানালেন, অতীতে নদীতে স্রোত থাকায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হলেও দূষণের বিষয়টি সে ভাবে নজরে পড়ত না। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক গোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘প্রতিমার রঙ জলে পড়ে নদীর ইকো সিস্টেমটাই নষ্ট করে দিচ্ছে।’’ স্থানীয় সূত্রে খবর, তবে এটাও সত্যি বনগাঁ শহর বা গ্রামীণ এলাকায় ইছামতী নদী ছাড়া বিকল্প কোনও জায়গাও নেই যেখানে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া যায়। বড় জলাশয়ের অভাব আছে। ইছামতীর পাশাপাশি কিছু প্রতিমা স্থানীয় নাওভাঙা নদীতেও বিসর্জন দেওয়া হয়। সেখান থেকে তো কাঠামো তোলাই হয় না। প্রবীণ বাসিন্দারা জানালেন, অতীতে মহকুমায় কিছু বড় পুকুর, খাল, বিল ছিল। ধীরে ধীরে তা বেআইনি ভাবে বুজিয়ে ফেলা হয়েছে।

বিসর্জনের ফলে যে নদীর জল দূষিত হচ্ছে তা মানচ্ছেন পুজো উদ্যোক্তারাও। তাঁদের কথায়, ‘‘দ্রুত প্রতিমা যন্ত্র দিয়ে তুলে ফেললে সমস্যা অনেকটাই মেটে।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যন্ত্র নামিয়ে দ্রুত প্রতিমা তুলতে গেলে যে জায়গার প্রয়োজন তা এখানে নেই। মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে আমরা ইছামতীকে দূষণ থেকে বাঁচাতে পদক্ষেপ করব। এলাকার মানুষ, মৃৎ শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে দ্রুত প্রতিমা সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে।’’

Ichamati River Idol Immersion Durga Puja ইছামতী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy