নদীর বাঁধ কেটে বের করে আনা হচ্ছে বালি ও পলি মিশ্রিত নোনা জল। সেখান থেকে বলি ও পলি আলাদা করে চড়া দামে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। বসিরহাট মহকুমার সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় রমরমিয়ে এ ধরনের অসাধু কারবার চলছে বলে অভিযোগ। মাঝে বন্ধ থাকলেও, আবার রমরমিয়ে ব্যবসা চলছে বলে দাবি গ্রামবাসীদের। তাঁরা জানান, বাঁধ কাটার ফলে দুর্যোগ এলেই ভুগতে হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, গত কয়েক বছর ধরে মিনাখাঁর চৈতল, চাঁপালি, বামনপুকুর-সহ বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ইছামতী, বিদ্যাধরী নদীর বাঁধ কেটে অবৈধ ভাবে নদী থেকে পলি ও বালি তুলছে। বাসিন্দারা জানান, প্রথমে নদীর বাঁধ কাটা হচ্ছে। সেই কাটা অংশ থেকে নদীর পলি ও বালি যুক্ত জল নদী সংলগ্ন বড় বড় জলাশয়ে ভর্তি করা হচ্ছে। জলাশয়ে জমা জল থেকে মেশিনের সাহায্যে পলি ও বালি আলাদা করে জমা করা হচ্ছে অন্যত্র। সময় মত রাতের অন্ধকারে ওই বালি, পলি পাচার করা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ইটভাটার কাজে এবং নিচু জমি উঁচু করতে এই বালি, পলির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সেই সব জায়গাতেই চড়া দামে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে এই সব।
মাস পাঁচেক আগে বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হতে কাজ সাময়িক ভাবে বন্ধ ছিল বলে জানান এলাকার মানুষ। সম্প্রতি প্রশাসনের নজরদারি শিথিল হতেই ফের শুরু হয়েছে কাজ। তবে দিন-রাতের বদলে এখন কেবল রাতের অন্ধকারেই লুকিয়ে চুরিয়ে কাজ হচ্ছে বলে জানান বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা পরিমল দায় বলেন, “পরিকল্পনাহীনভাবে যত্রতত্র মাটি কাটা এবং বালি তোলার ফলে প্রতি বছর বাঁধ ভেঙে জলে ভাসতে হচ্ছে আমাদের। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।” বাসিন্দারা জানান, বেআইনিভাবে বাঁধ কাটা এবং পলি তোলার প্রতিবাদ করায় হুমকির মুখেও পড়তে হয়েছে অনেককে। প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও সুরাহা হয়নি। আরও এক বাসিন্দা সুবল কর্মকারের কথায়, “পুলিশ, প্রশাসন এবং শাসকদলের অনুমতিতেই রমরমিয়ে এই কারবার চলছে। প্রতিবাদ করলে পুলিশ গিয়ে বন্ধ করে। কয়েকদিন যেতে না যেতে ফের কাজ শুরু হয়ে যায়।”
কংগ্রেস নেতা হিরন্ময় দাস বলেন, “যেখানে সেখানে বাঁধ কেটে নদীর ভিতর থেকে বালি তোলায় নদীর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে। তার জন্য বছর বছর বাঁধ ভেঙে ডুবছে গ্রাম।” মিনাখাঁর বিজেপি নেতা জয়ন্ত মণ্ডল বলেন, “তৃণমূলের জমানায় সব কিছুই সম্ভব। এরা সাধারণ মানুষদের কথা না ভাবে কেবল নিজেদের পকেট ভরাতে ব্যাস্ত।” সিপিএমের মিনাখাঁ এরিয়া কমিটির সম্পাদক প্রদ্যোৎ রায় বলেন, “নদীর বালি ও মাটি থেকেও কাটমানি শাসকদলের নেতাদের পকেটে যায়। সেই জন্যই তো রমরম করে অবৈধ ব্যবসা চলছে।”
মিনাখাঁর তৃণমূল বিধায়ক ঊষারানি মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি খোঁজ খবর নিচ্ছি। সত্যিই যদি অবৈধ ভাবে বালি-মাটি কাটার কাজ হয়ে থাকে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে অনুরোধকরব।” পুলিশের দাবি, নিয়মিত অভিযানের জেরে অধিকাংশ জায়গাতেই নদীর বালি ও মাটি তোলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রাতের অন্ধকারে কোথাও লুকিয়ে বালি তোলা হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)