মগরাহাট গ্রামীণ হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র।
সরকারি হাসপাতালের রোগীর চাপ সামাল দিতে ডেকে আনা হচ্ছে হাতুড়ে চিকিৎসককেও!
মগরাহাট-২ গ্রামীণ হাসপাতালের এই হাল মেনে নিচ্ছেন মগরাহাট-২ ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও। তাঁদের দাবি, এই হাসপাতালে রোগীর অনুপাতে চিকিৎসক অনেক কম। অবস্থা সামলাতেই এই ব্যবস্থা। বিএমওএইচ এমজি আলম বলেন, ‘‘সরকারি চিকিৎসক কম থাকলে হাতুড়েদের ডাকা হয় বটে, তবে তাঁরা চিকিৎসকের অধীনেই রোগী দেখেন।’’ তিনি জানান, হাসপাতালে রোগীর চাপ দিন দিন বাড়ছে। নতুন চিকিৎসক এলেও এখানে থাকতে চাইছেন না। পুরো বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
কী ভাবে চলছে হাসপাতালের দৈনন্দিন কাজ?
হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, এক রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হচ্ছে। রোগীর আত্মীয়েরা বিড়বিড় করে বলছিলেন, ‘‘সামান্য ডায়েরিয়া রোগীকে সারানোর ক্ষমতা নেই। এমন হাসপাতাল থাকার চেয়ে না থাকাই ভাল।’’ কী হয়েছে প্রশ্ন করতে জানা গেল, আগের সন্ধ্যায় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু পর দিন সকাল পর্যন্ত কোনও চিকিৎসক দেখতেই আসেননি। তাই রোগীকে নিয়ে চলে যাচ্ছেন।
বর্হিবিভাগে গিয়ে দেখা গেল, সকাল থেকে একজন চিকিৎসক গোটা বর্হিবিভাগ সামলাচ্ছেন। তিনিই আবার জরুরি বিভাগে গিয়ে মাঝে মধ্যে রোগী দেখে আসছেন। তিনি যখন জরুরি বিভাগে যাচ্ছেন তখন বহির্বিভাগের সামনে ঠায় লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছেন রোগীরা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রোগীর চাপ বাড়লে স্থানীয় কয়েকজন হাতুড়েকে ডেকে নেওয়া নয়। তাতেও সমস্যা মেটে না।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সত্তরের দশক থেকে মগরাহাট ব্লক অফিসের মোড়ের সামনে ওই হাসপাতালটি চলছে। প্রথম এটি ব্লক হাসপাতাল থাকলেও ২০০৯ সালে গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত হয়। এখন অর্ন্তবিভাগে রয়েছে ৩০টি শয্যা। হাসপাতালের চত্বরেই স্বাস্থ্যকর্মীর থাকার জন্য আবাসন রয়েছে। সেগুলির বেশিরভাগই খালি। সংখ্যালঘু ও তপসিলি অধ্যুষিত এলাকায় ওই হাসপাতালে প্রতিদিন ৮০০-১০০০ রোগী বহির্বিভাগে আসেন। চাপ সামলাতে রয়েছেন মাত্র তিন জন চিকিৎসক, এক জন ফার্মাসিস্ট, ১০ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। নিরাপত্তা রক্ষী নেই। যদিও এখানে ১০ জন চিকিৎসক এবং ১৬ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী থাকার কথা।
এ ছাড়াও, রয়েছে শৌচাগার ও পানীয় জলের সমস্যা। মে মাসে এই হাসপাতালে ১৭০টি প্রসব হলেও এখানে কোনও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ নেই। নেই সিজারের ব্যবস্থা। রক্ত পরীক্ষা ও ইসিজি ছাড়া অন্য কোনও পরীক্ষাও হয় না।
স্থানীয় বাসিন্দা কামালউদ্দিন শেখ, মরিয়ম মোল্লাদের কটাক্ষ, ‘‘মগরাহাট গ্রামীণ হাসপাতাল নিজেই রোগে আক্রান্ত। জ্বর, সর্দি ছাড়া একটু বাড়াবাড়ি হলেই রোগীকে রেফার করা হয় ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে।’’ তাঁদের দাবি, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা করুক স্বাস্থ্য দফতর।
সামান্য জটিলতা দেখা দিলেই ‘রেফার’ করা হয় বলে স্থানীয় মানুষের তোলা অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি হাসপাতালের এক চিকিৎসক। তাঁর দাবি, ‘‘এত সমস্যার মধ্যেও আমরা সাধ্যমতো পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। একেক দিন প্রায় ২৪ ঘণ্টাই হাসপাতালে থাকতে হয়।’’ সেটাও রোগী বা চিকিৎসক— কারও জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা হতে পারে না। কিন্তু সে কথা কর্তৃপক্ষ বুঝলে তো!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy