Advertisement
E-Paper

নিজের পায়ে দাঁড়াতে বিরিয়ানির দোকান দিলেন বৃষ্টি-চন্দ্রা

বৃষ্টির মনে হয়েছিল, চাকরি-বাকরি কবে হবে তার ঠিক নেই। সেই আশায় বসে না থেকে এই সময়টা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৩ ০৮:১৫
বেচাকেনায় ব্যস্ত দুই তরুণী। —ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

বেচাকেনায় ব্যস্ত দুই তরুণী। —ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

রাস্তার পাশে টুল-বেঞ্চ পেতে বিরিয়ানির অস্থায়ী দোকান দিয়েছেন দুই তরুণী। বাগদার হেলেঞ্চায় এই দোকানের মালকিন সদ্য স্নাতক বৃষ্টি মজুমদার ও কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া চন্দ্রা বিশ্বাস। বৃষ্টি এ বছরই হেলেঞ্চা বিআর অম্বেডকর শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছেন। চন্দ্রা ওই কলেজেরই ছাত্রী।

বৃষ্টির মনে হয়েছিল, চাকরি-বাকরি কবে হবে তার ঠিক নেই। সেই আশায় বসে না থেকে এই সময়টা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। চাকরির অপেক্ষায় বসে থেকে হতাশাগ্রস্ত হওয়ার থেকে দ্রুত রোজগার শুরু করতে পারলে ভাল। চন্দ্রাকে সঙ্গে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেন, বিরিয়ানির দোকান খুলবেন।

বৃষ্টির বাবা উৎপল এটিএমে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। মা শান্তিলতা হাঁড়ি-হেঁসেল সামলান। টানাটানির সংসার।

মেয়ে বিরিয়ানি দোকান দেওয়ার কথা বলায় অবশ্য শুরুতে রাজি হননি বাবা-মা। বৃষ্টি বলেন, ‘‘শুরুতে নিষেধ করেছিলেন। তবে আমার জেদ দেখে পরে মত দেন। এখন আবার উৎসাহই দেন।’’ বৃষ্টি জানান, বাবা-মাকে বুঝিয়েছিলেন, কোনও কাজ ছোট নয়। এখন মেয়েরাও পুরুষের সঙ্গে সমানতালে চলতে পারে। সব কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।

চন্দ্রার বাবা পরেশের মুদিখানা ও চালের ব্যবসা। বৃষ্টি জানান, চন্দ্রার বাড়ি থেকে এই কাজে আপত্তি ছিল না।

কিন্তু বিরিয়ানির দোকান করব বললেই তো হল না। বিরিয়ানি বানানো শিখতে হয়। বৃষ্টি জানান, স্থানীয় এক দিদির কাছ থেকে সেই কৌশল শিখে ফেলেন। এখন নিজেরাই তৈরি করেন। চন্দ্রা রান্নার কাজে সাহায্য করেন। ৪০ টাকায় দেওয়া হয় এক প্লেট চিকেন বিরিয়ানি। বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে অস্থায়ী দোকানের কাজ। আপাতত প্রতিদিন প্রায় ৪০ প্যাকেট করে বিরিয়ানি তাঁরা বিক্রি করতে পারছেন বলে জানালেন।

রাস্তার কাছে টুল ও বেঞ্চ পেতে চলে বেচাকেনা। বৃষ্টি বলেন, ‘‘সরকারি চাকরির পিছনে না ছুটে আমাদের এই দোকানটাকেই বড় করার স্বপ্ন দেখে। বিরিয়ানির আলাদা একটা ব্যান্ড তৈরি করব। আগামী দিনে এই ব্যবসা করেই আমরা প্রতিষ্ঠিত হতে চাই।’’

সব দেখেশুনে স্থানীয় লোকজন কী বলছেন?

অল্পবয়সীদের ভিড়ই হচ্ছে বেশি। বিরিয়ানি খেতে এসেছিলেন শম্পা সরকার। বললেন, ‘‘খুব ভাল উদ্যোগ। ওঁদের আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করব। এখন যা সামাজিক পরিস্থিতি, তাতে সরকারি চাকরি পাওয়া কঠিন। সে আশায় বসে না থেকে ওঁরা যে ভাবে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেছেন, সেটা আমাদের এলাকায় দৃষ্টান্ত।’’ স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান চায়না বিশ্বাস বলেন, ‘‘ঘরে বসে না থেকে দুই তরুণী যে ভাবে বিরিয়ানির ব্যবসা করছেন, তাতে ওঁরা আমাদের গৌরব। অন্য মেয়েদেরও বলব, পড়াশোনার পাশাপাশি হাতের কাজ শিখে অর্থনৈতিক ভাবে স্বনির্ভর হতে। ওই দুই তরুণীকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব।’’

Bagda Biryani
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy