E-Paper

কিডনি বিক্রি চক্রে নজরে ‘বড় মাথা’

গত বৃহস্পতিবার অশোকনগর থানার পুলিশ গ্রেফতার করে প্রদীপকে। তাঁর বাড়ি কলকাতায় বাঁশদ্রোণীতে। তিনি আলিপুর আদালতের আইনজীবী।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৫ ০৭:৩৮
গ্রেফতার প্রদীপকুমার বর।

গ্রেফতার প্রদীপকুমার বর। নিজস্ব চিত্র।

কিডনি পাচার চক্রে আইনজীবীকে গ্রেফতারের পরে তদন্তকারী অফিসারেরা আরও কিছু ‘বড় মাথা’র হদিস পাচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতা যেমন আছেন, কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, ম্যানেজমেন্ট কর্মীরও খোঁজ মিলছে বলে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি। যদিও তদন্তের স্বার্থে এখনই সে সব নাম প্রকাশে রাজি নয় পুলিশ। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ধৃত আইনজীবী প্রদীপকুমার বর তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।’’

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, প্রদীপকে সরাসরি ‘পার্টি’ পাঠাতেন ওই সব চিকিৎসক, হাসপাতালের কর্মীরা। প্রিয়জনের কিডনির প্রয়োজনে যাঁরা হন্যে হয়ে ঘুরছেন, তাঁরাই ছিলেন এই চক্রের ‘টার্গেট।’ আবার টাকার জন্য নিজের কিডনি বিক্রি করতে প্রস্তুত, এমন লোকজনকেও খুঁজে বের করা হত। এ জন্য প্রদীপের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করা হত, তারপরে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চলত কিডনি কেনাবেচার ব্যবসা। অনেককে ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলে কিডনি বিক্রি করতে বাধ্য করা হত— এমন অভিযোগও উঠছে।

গত বৃহস্পতিবার অশোকনগর থানার পুলিশ গ্রেফতার করে প্রদীপকে। তাঁর বাড়ি কলকাতায় বাঁশদ্রোণীতে। তিনি আলিপুর আদালতের আইনজীবী। ইতিমধ্যে তাঁর বাড়ি থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল, নোটবুক বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ, সেখান থেকেও কিডনি পাচার চক্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে এসেছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

চার দিনের পুলিশ হেফাজতের শেষে মঙ্গলবার প্রদীপকে বারাসত জেলা আদালতে তোলা হয়। এ দিন বিচারক তাঁকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘উনি তদন্তে সহযোগিতা করেছেন বলেই নতুন করে আর আমাদের হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন নেই।’’

তদন্তকারীরা জানান, প্রদীপের ল্যাপটপ-মোবাইল ইত্যাদি থেকে বেশ কয়েক জন ‘প্রভাবশালীর’ নাম মিলেছে। সকলের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীদের দাবি, কিডনি বিক্রির ‘কমিশন’ পেতেন প্রদীপ। এ ছাড়া, এফিডেভিড (হলফনামা) করে দিয়ে ২০-২৫ হাজার টাকা নিতেন। সচরাচর যা ২০০-৪০০ টাকাতেই হয়ে যায়! একটি কিডনি বিক্রি হত ১৫-১৬ লক্ষ টাকায়। এ জন্য প্রদীপকে ১০ হাজার টাকা দিতে হত বলে তদন্তে জানা গিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, এফিডেভিড করার নির্দিষ্ট এলাকা থাকে। যেমন, হাবড়া -অশোকনগরের বাসিন্দারা আলিপুরে গিয়ে এফিডেভিড করতে পারেন না। কিন্তু প্রদীপ বেআইনি ভাবে রাজ্যের যে কোনও প্রান্তের মানুষের এফিডেভিড আলিপুর আদালত থেকেই করে দিতেন বলে জানা যাচ্ছে।

সম্প্রতি কিডনি বিক্রি চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ অশোকনগরের হরিপুরের বাসিন্দা বিকাশ ঘোষ ওরফে শীতলকে গ্রেফতার করে। এলাকায় সে ‘সুদখোর শীতল’ নামে পরিচিত ছিল। তাকে জেরা করে কিডনি বিক্রি চক্রে জড়িত আরও চার জনকে ধরে পুলিশ। সকলেই এখন জেলে। এই পাঁচ জনকে জেরা করে পুলিশ প্রদীপের সন্ধান পায়। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, প্রদীপ এমন ভাবে নথিপত্র তৈরি করে কিডনিদাতার স্বাক্ষর নিতেন, যাতে আইনের চোখে তাঁদের অপরাধী হতে না হয়।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ইচ্ছে মতো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করা যায় না। কারও কিডনির প্রয়োজন হলে রক্তের সম্পর্ক আছে, এমন কোনও আত্মীয়ই স্বেচ্ছায় এবং বিনামূল্যে তা দিতে পারেন। পাচারচক্রের লোকজন কাগজপত্রে দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে সেই সম্পর্ক দেখিয়ে দিত এবং এর মধ্যে টাকা-পয়সার কোনও লেনদেন নেই, তা-ও কাগজে-কলমে দেখানো হত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ashoknagar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy