বনগাঁ ও বসিরহাট মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় কাঁটাতার বসেনি এখনও। এসআইআরের (বিশেষ নিবিড় সংশোধন) আবহে সেই সব এলাকা দিয়ে পারাপারের চেষ্টা বেড়ে গিয়েছে বলেই অভিযোগ। এবং যে ‘সিন্ডিকেট’ অবৈধ ভাবে এই পারাপারে সাহায্য করে, সেই ‘ধুর সিন্ডিকেট’ সীমান্ত পার করার খরচ দ্বিগুণ করে দিয়েছে বলেও একাংশের দাবি। তাদের কথায়, আগে এই খরচ ছিল মাথাপিছু হাজার দশেক টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে বিশ হাজার।
বিএসএফ ও পুলিশ সূত্রের খবর, গত কয়েক দিনে স্বরূপনগর সীমান্তের বিভিন্ন ‘পয়েন্ট’ থেকে অন্তত ১০০ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের অনেকেই পরিচারিকা বা দিনমজুরের কাজ করতেন। সোমবারই স্বরূপনগরের হাকিমপুর চেকপোস্টের কাছ থেকে একই পরিবারের তিন জন-সহ মোট চার জন ধরা পড়েন। পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়ি বাংলাদেশের সাতক্ষীরায়।
এই পরিস্থিতিতে ‘ধুর সিন্ডিকেট’এর নিয়ে আলোচনা আবার সামনে চলে এসেছে।যদিও জেলার এক পুলিশ-কর্তা বলেন, ‘‘বনগাঁ ও বসিরহাটের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া ও অনুপ্রবেশ— দু’দিকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে নজর রাখা হচ্ছে। একাধিক দালালকেও নজরে রাখা হয়েছে।’’ নজরদারি বাড়ানোর দাবি করেছে বিএসএফও। বিএসএফের এক কর্তা বলেন, ‘‘উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় বাংলাদেশ সীমান্তে সব ধরনের অবৈধ কার্যকলাপের উপরে কড়া নজর রাখা হয়। কড়া নজরদারির ফলে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং বেআইনি কার্যকলাপ এখন বন্ধ।’’
স্থানীয়দের দাবি, বনগাঁ এবং বসিরহাট সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় দালালদের একাংশ এখনও সক্রিয়। কেউ অবৈধ ভাবে সীমান্ত পার হতে চাইলে, রাতের অন্ধকারে খোলা এলাকা তাদের পার করায় ‘ধুর সিন্ডিকেটের’ দালালেরা। স্থানীয়দের মতে, দু’দেশের সীমান্তেই রয়েছে ‘ধুর’ বা মানব পারাপার করানোর চক্রের সদস্যেরা। তারা ফোনে যোগাযোগ রাখে বলেও দাবি। বাংলাদেশের গরিব পরিবারের অনেককে ভাল বেতনের কাজের টোপ দিয়ে এ দেশে পাচার করা হয়। সীমান্ত পেরিয়ে নিরাপদ আস্তানায় পৌঁছতে প্রয়োজন হয় সিন্ডিকেটের ‘ঘাটমালিক’, ‘লাইনম্যান’, ‘লিঙ্কম্যানদের’। পুলিশ-বিএসএফের নজর এড়িয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পড়ে ‘লিঙ্কম্যানদের’ উপরে। ‘লাইনম্যানরা’ পুলিশ ও বিএসএফের গতিবিধির উপরে সতর্ক নজর রাখে। ‘ঘাটমালিকেরা’ নদী পেরোনোর ব্যবস্থা করে, দাবি স্থানীয়দের।
সীমান্তের যে সব এলাকায় পাহারা বেশি, সেখানে অবৈধ ভাবে যাতায়াতের জন্য খরচও বেশি। এলাকার লোকজনের একাংশের মতে, ওই টাকার অর্ধেক পান মূল দালাল। ‘ধুর’ সিন্ডিকেটের এক দালাল বলেন, ‘‘আগে সীমান্ত পারাপার করাতে মাথাপিছু ১০ হাজার টাকা করে নেওয়া হত। এখন নজরদারি বেড়েছে বলে তা দ্বিগুণ করা হয়েছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)