E-Paper

ঝড়ের আগেই কেন বাঁধ মেরামতি, প্রশ্ন

কাকদ্বীপ মহকুমার সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানান, “দুর্যোগের আগে যে কাজ হয়, তার কোনও টেন্ডার করা হয় না।

সমরেশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:০৫
চলছে বাঁধ মেরামতির কাজ।

চলছে বাঁধ মেরামতির কাজ। —ফাইল চিত্র।

দিন কয়েক আগে ঘূর্ণিঝড় দানার পূর্বাভাসে তড়িঘড়ি বিভিন্ন এলাকায় বেহাল বাঁধ মেরামতে উদ্যোগী হয়েছিল সেচ দফতর। কিন্তু অভিযোগ, ঝড় সে ভাবে না আসায় বাঁধ মেরামতির বিষয়টি আর তেমন গুরুত্ব পায়নি। তবে উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি বারই ঝড়ের পূর্বাভাস পেলে তড়িঘড়ি বাঁধ মেরামতিতে হাত লাগায় সেচ দফতর। দুর্যোগ কেটে গেলে সেই কাজ থমকে যায়। যা বাসিন্দাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভেও লাভ হয় না। আরও অভিযোগ, বাঁধ মেরামতির কাজ খুবই নিম্নমানের হয়। বাঁধগুলি ভরা কটালের জলোচ্ছ্বাসটুকুও প্রতিরোধ করতে পারে না। এলাকার মানুষ জানান, দানার আগে সংস্কার করা বেশি কিছু বাঁধ সদ্য অমাবস্যার কটালে ফের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এ ভাবে বাঁধ মেরামতের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। উঠছে কংক্রিটের স্থায়ী বাঁধের দাবিও।

বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ে বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাথরপ্রতিমার জি প্লট পঞ্চায়েতের গোবর্ধনপুর গ্রাম। প্লাবিত হয়েছে ধান, পুকুরের মাছ সহ ঘরবাড়ি। গত পূর্ণিমার কটালে এই এলাকায় ক্ষতি হয়েছে বাঁধের। কোথাও দশ ফুট, কোথাও বিশ ফুট মাটির বাঁধ তলিয়ে গিয়েছে জলে। সেখান দিয়ে গ্রামে নোনা জল ঢুকেছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, মাস তিনেক আগেই ওই বাঁধ মেরামত হয়েছিল। এলাকার মানুষের প্রশ্ন, তিন মাস যেতে না যেতেই যদি বাঁধ ধুয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, তা হলে সেই বাঁধ মেরামতের মানে কী! একই অবস্থা কাকদ্বীপ মহকুমার সাগর, নামখানা, ঘোড়ামারা, মৌসুনি, কাকদ্বীপ এলাকায়।

কাকদ্বীপ মহকুমার সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানান, “দুর্যোগের আগে যে কাজ হয়, তার কোনও টেন্ডার করা হয় না। জরুরি ভিত্তিতে কিছু ঠিকাদার নিজের টাকা খরচ করে বাঁধ মেরামতি কাজ করেন। পরে টেন্ডার করে সেই কাজের টাকা দেওয়া হয়। ওই সময়ে মূলত বাঁধের যে অংশে ফাটল দেখা দিয়েছিল, তা মেরামতি করে ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ করে দেন। তাঁদের আমরা জোরও করতে পারি না।” সূত্রের খবর, ঝড়ের আগে বাঁধ মেরামতিতে ঠিকাদারদের লাভ বেশি থাকে। যা কাজ হয়, তার অনেক বেশি অর্থ বরাদ্দ হয়।

কাকদ্বীপ এলাকার বাসিন্দা বিজয় দাস বলেন, “নিয়মিত বাঁধ ও পাশাপাশি নদীরও সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু তা কখনও হয় না। নেতা-মন্ত্রী থেকে শুরু করে আধিকারিক, ঠিকাদার সকলেই কাটমানি খেলে সেই বাঁধ আর কত দিন টিকবে?” সাগরের বিজেপি নেতা অরুণাভ দাসের অভিযোগ, “প্রতি বছর ঠিক বর্ষার মুখে বাঁধে মাটি ফেলা হয়। লক্ষ লক্ষ টাকা জলে ধুয়ে যায়। ঝড়, বৃষ্টি, দুর্যোগের মুখে মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে জানান সুন্দরবন মাস্টার প্ল্যানের কথা।”

সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরার প্রতিক্রিয়া, “সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হলে কেন্দ্রের সাহায্য প্রয়োজন। টাকার অভাবে বিভিন্ন এলাকায় কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করা যাছে না। প্রায়ই মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়তে হছে। মুখ্যমন্ত্রী একাধিক বার কেন্দ্রের নীতি আয়োগের বৈঠকে মাস্টার প্ল্যান জমা দিয়েছেন। কিন্তু আজও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে কিছু কিছু জায়গায় কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করার।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sundarbans

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy