E-Paper

‘ভিন্‌ রাজ্যে কাজে যেতে চাইলেও বাধা দিতেন ওঁরা’

বছর দু’য়েক আগে সন্দেশখালি ২ বিডিও অফিসের সামনে ৭ নম্বর পুকুরপাড়ায় বছর স্থানীয় এক বাসিন্দার জলাভূমি নামমাত্র টাকায় জোর করে দখল করে ভরাট করা হয় বলে অভিযোগ।

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:১০
জেলিয়াখালির গন্ডগোলের ঘটনায় গ্রামবাসীকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

জেলিয়াখালির গন্ডগোলের ঘটনায় গ্রামবাসীকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

দু’টাকা বেশি রোজগারের আশায় গ্রামের বাইরেও যেতে সাহস পেতেন না বহু যুবক— জানাচ্ছেন সন্দেশখালির অনেকে। কারণ? শিবু-উত্তমদের চাই সস্তার শ্রমিক। যারা কাজ করবে মাছের ভেড়ি বা শিবু-উত্তমদের আর পাঁচটা ব্যবসায়। কাজে হাত না লাগাতে চাইলে মারধর করা হত বলেও এখন শোনা যাচ্ছে অনেক বাসিন্দার মুখে। এক যুবকের কথায়, ‘‘বাইরের রাজ্যে গেলে বেশি রোজগার। অনেকে গিয়েছে। তবে আমাকে আটকে দিয়েছিলেন শিবুদা। এক রকম হুমকি দিয়েই গ্রামে থেকে যেতে বাধ্য করা হয়।’’

তার উপরে, মিটিং-মিছিলে যাওয়ার চাপ তো ছিলই। অভিযোগ, তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ হাজরা, উত্তম সর্দারের দাপটে বছরের পর বছর ধরে এমনই পরিস্থিতি চলছিল সন্দেশখালি ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা দেবলা সিংহ বলেন, “গ্রামের মহিলা, পুরুষ, এমনকী কিশোরদেরও বাধ্য করত তৃণমূলের মিটিং-মিছিলে যেতে। না হলে মারধর করত।” তার উপরে, জোর করে জমি দখল, বেআইনি ভাবে পুকুর ভরাট, জমি দখল করে স্কুল তৈরি— অভিযোগের তালিকা শিবপ্রসাদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় তৃণমূল নেতারা কার্যত এখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন। শেখ শাহাজাহান এলাকা ছাড়ার পরে আরও কয়েক জন নেতা এমন চাপে পড়ায় শুক্রবার যেন কিছুটা অগোছাল দেখাল সন্দেশখালির তৃণমূল নেতৃত্বকে।

বছর দু’য়েক আগে সন্দেশখালি ২ বিডিও অফিসের সামনে ৭ নম্বর পুকুরপাড়ায় বছর স্থানীয় এক বাসিন্দার জলাভূমি নামমাত্র টাকায় জোর করে দখল করে ভরাট করা হয় বলে অভিযোগ। কয়েক মাস আগে সেই ভরাট করা জমিতে দরমার বেড়া ঘিরে স্কুল তৈরি করেছেন শিবপ্রসাদ। স্থানীয় বাসিন্দা বৃদ্ধা অনিমা সিংহ বলেন , “শিবপ্রসাদের তৈরি করা দরমার বেড়া দেওয়া স্কুল তৈরি আসলে জমি হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল। এই জমি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার পাশে। তাই ওই চক্রান্ত করে জলাভূমি ভরাট করে স্কুল করেছে। পুলিশ-প্রশাসনের চোখের সামনে হল। কোনও পদক্ষেপ করল না।”

সন্দেশখালি খেয়াঘাটের পাশে অভিযান সঙ্ঘের বিশাল মাঠ ছিল। স্থানীয়দের দাবি, আমপানের পরে সেই মাঠ থেকে মাটি কেটে ৮ নম্বর পুকুরপাড়ায় নিচু জমি উঁচু করে শিবপ্রসাদের পোলট্রি ও ছাগলের খামার তৈরি করা হয়েছিল। এখন এই মাঠে আর খেলাধূলা হয় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসীর দাবি, “আগে এখানে প্রতি বছর ফুটবল টুর্নামেন্ট হত। এখন কিছুই হয় না। মাঠ কার্যত খালে পরিণত হয়েছে শিবপ্রসাদের জন্য।”

৮ নম্বর পুকুরপাড়ায় থাকা শিবপ্রসাদের পোলট্রি ও ছাগলের খামারে গিয়ে দেখা গেল, গোটা খামার তছনছ হয়ে গিয়েছে। এখানেই বুধবার গ্রামবাসীরা ভাঙচুর চালিয়েছিলেন। স্থানীয় যাঁরা এই খামার দেখাশোনা করতেন, তাঁদের মধ্যে আছেন বাসন্তী মণ্ডল, শিবানী দাস। তাঁরা জানালেন, মাসে ৬ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দু’মাস টাকা মেলেনি। কিছু দিন আগে টাকা চাইতে যেতে শিবপ্রসাদের সঙ্গীরা ধমকে-চমকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। ওই মহিলারা জানান, দিনে বেশ কয়েক বার মুরগির বাচ্চাগুলিকে জল ও খাবার দিতেন। বুধবারের পরে আর খাবার দিতে ঢোকেননি তাঁরা। তাঁদের আশঙ্কা, মুরগির বাচ্চাগুলো খেতে না পেয়ে মরতে পারে। বিড়াল, কুকুর, কাকের উৎপাতেও মার যাওয়ার আশঙ্কা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

sandeshkhali

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy