Advertisement
E-Paper

৭ মিনিটে সব শেষ

মঙ্গলবার সকালে মানিক বলেন, ‘‘জামা-কাপড়, উনুন, খাবার— কিছুই নেই। কী ভাবে বাঁচব, জানি না।’’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৮
তাণ্ডব: ডাল ভেঙে পড়েছে বাড়ির চালে। বসিরহাটে। ছবি: নির্মল বসু

তাণ্ডব: ডাল ভেঙে পড়েছে বাড়ির চালে। বসিরহাটে। ছবি: নির্মল বসু

চার মাসের মেয়েকে নিয়ে রাতে ঘুমোচ্ছিলেন বাগদার বাঁশঘাটা গ্রামের মানিক বৈদ্য। আকাশে মেঘ, হালকা ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল। গভীর রাতে বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে মানিকের। চোখ খুলে দেখেন, টিনের চাল উড়ে গেল ঝড়ে। ভিত থেকে দেওয়াল উপড়ে যায়। ততক্ষণে শুরু হয়েছে শিলা বৃষ্টিও।

সন্তানকে বুকে আগলে মানিক ও তাঁর পরিবারের বাকিরা ছুটে গিয়ে আশ্রয় নেন একটি ধর্মীয় স্থানে। ভোরে বাড়ির সামনে গিয়ে দেখেন, বাড়ির আর কোনও কিছুই অক্ষত নেই। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে জিনিসপত্র।

মঙ্গলবার সকালে মানিক বলেন, ‘‘জামা-কাপড়, উনুন, খাবার— কিছুই নেই। কী ভাবে বাঁচব, জানি না।’’

সোমবার রাতে ও ভোরে কয়েক মিনিটের ঝড়ে এমনই লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে বাগদার বাঁশঘাটা গ্রাম। পাশে গাঙ্গুলিয়া গ্রামেও ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। গাইঘাটা ব্লকের ঝাউডাঙা, শিমুলপুর, রামনগর, ডুমা পঞ্চায়েতের বহু এলাকা ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ে কোথাও ঘরের টিনের ছাউনি উড়েছে। কোথাও পোলট্রির ঘর ভেঙে পড়েছে। বহু বাড়ির ছাউনি উড়ে গিয়েছে। গাছের গুঁড়ি উপড়ে গিয়েছে। গাছের ডাল মাঝ বরাবর ভেঙে গিয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। কয়েকটি গরু-ছাগল মারা গিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে সর্ষে, মুসুরি ও আনাজের ক্ষতি হয়েছে। গ্রামের মানুষ পঞ্চায়েতের কাছে ত্রাণ ও ত্রিপলের জন্য আবেদন করছেন।

বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে গ্রামে গ্রামে সরকারি প্রতিনিধিরা যাচ্ছেন।’’

বাঁশঘাটার চাষি বাকিবিল্লা মণ্ডল খেতের পাশে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। বললেন, ‘‘সর্ষে ও পটল চাষ করেছিলাম। সব শেষ। ধার করে চাষ করেছিলাম। সর্ষে ঘরে তোলার সময়ও হয়ে গিয়েছিল।’’

শিলাবৃষ্টি এবং দমকা হাওয়ায় বসিরহাট মহকুমার নানা প্রান্তেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমের মুকুল, আনাজ নষ্ট হয়েছে। খড়ের চালের উপর গাছ ভেঙে পড়ায় স্বরূপনগরে এক মহিলা-সহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোরে স্বরূপনগর-সহ বসিরহাটের নানা প্রান্তে শিলাবৃষ্টি হয়। ঝোড়ো হাওয়া বইছিল। অনেক জায়গায় গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। গাছ পড়ে আহত হয়েছেন কেউ কেউ। বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে।

কয়েক মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্বরূপনগরের বিস্তীর্ণ এলাকা। স্থানীয় মানুষের দাবি, বহু বছর এমন ভয়ানক শিলাবৃষ্টি দেখা যায়নি। অনেক জায়গায় এত শিলাবৃষ্টি হয়েছে, গাছের পাতা পর্যন্ত ঝরে গিয়েছে। গোবিন্দপুর পঞ্চায়েতের গোবরা গ্রামে মাঠে কাজে গিয়েছিলেন কয়েকজন। বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে একটা চালা ঘরে আশ্রয় নেন। দমকা হাওয়ায় গাছ ভেঙে ঘরের চালে পড়ে। সকলে আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের উদ্ধার করে শাঁড়াপুল গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বেড়পাড়া, তরণীপুর, গোবিন্দপুর-সহ সীমান্ত-লাগোয়া বেশ কিছু গ্রামে বহু গাছ উপড়ে পড়েছে। উপড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। কিছু বাড়িরও
ক্ষতি হয়েছে।

Thunderstorm dead Rain
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy