Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আগ বাড়িয়ে থানায় এসে নাম জড়াল খুনে

নিজেই এসেছিলেন থানায়। জানিয়েছিলেন, মৃত বৃদ্ধাকে চেনেন তিনি। সেই বৃদ্ধা, যাঁর দেহ উদ্ধারের পরে পরিচয় জানার চেষ্টা চালাচ্ছিল পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
বসিরহাট ও দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৩
Share: Save:

নিজেই এসেছিলেন থানায়। জানিয়েছিলেন, মৃত বৃদ্ধাকে চেনেন তিনি। সেই বৃদ্ধা, যাঁর দেহ উদ্ধারের পরে পরিচয় জানার চেষ্টা চালাচ্ছিল পুলিশ। ঘটনাচক্রে, তদন্ত এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তিকেই বৃদ্ধাকে খুনে জড়িত সন্দেহে খুঁজছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি মিনাখাঁর বিদ্যাধরী খালে এক বৃদ্ধার বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার হয়। পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশের সন্দেহ ছিল, এটি পরিকল্পিত খুন। দেহ ময়না-তদন্তের জন্য বসিরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। রিপোর্টে জানা যায়, বৃদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।

নিহতের পরিচয় জানতে জেলার প্রতিটি থানায় বৃদ্ধার ছবি টাঙানো হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি দেগঙ্গা থানায় এসে ওই বৃদ্ধাকে নিজের নিকট আত্মীয় বলে দাবি করে বেড়াচাঁপার চারাবাগান এলাকার বাসিন্দা মৃণালকান্তি ঘোষ। সঙ্গে ছিলেন বৃদ্ধার বড় ছেলে কুমারেশ সরকার। জানা যায়, বৃদ্ধার নাম গৌরীরানি সরকার (৬৮)। বাড়ি দেগঙ্গার বেড়াচাঁপায়।

তাঁকে খুনের অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা থেকে সনাতন কর্মকার ওরফে ভোদোকে গ্রেফতার করে দেগঙ্গা ও মিনাখাঁ থানার পুলিশ। ধৃতের বাড়ি দেগঙ্গার বিডিও অফিসপাড়ায়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, জেরায় ধৃত দাবি করেছে বৃদ্ধার সম্পতি হাতাতে মৃণালকান্তির সঙ্গে হাত মিলিয়েই এই খুন করেছে সনাতন। যা জেনে থ পুলিশ অফিসারেরা। কারণ, থানায় এসে নিহত বৃদ্ধার পরিচয় জানিয়েছিলেন মৃণালকান্তি নিজেই। বৃদ্ধার অকাল মৃত্যুতে শোকও কম জানাননি।

পুলিশ জানতে পেরেছে, মৃণালকান্তি ছিলেন গৌরীদেবীর খুবই বিশ্বাসভাজন। বৃদ্ধার বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তাঁর।

গৌরীদেবীর দুই ছেলে, দুই মেয়ে। এক ছেলে ও এক মেয়ে বাংলাদেশে থাকেন। বড় ছেলে কুমারেশ মৃণালের জামাইবাবু। ৪ ফেব্রুয়ারি গৌরীদেবীকে মৃণালের বাড়িতে রেখেই বাংলাদেশ গিয়েছিলেন কুমারেশ। তারপরেই এই ঘটনা।

গৌরীদেবীর আর এক মেয়ে গায়ত্রী নদিয়ার মাজদিয়ায় থাকেন। পুলিশের কাছে তিনি দাবি করেছেন, মায়ের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা এবং প্রচুর সোনা নিয়ে নিজের হেফাজতে রেখেছিলেন মৃণাল। ইদানীং সে সব ফেরত চাইছিলেন বৃদ্ধা। তখনই মৃণালের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্যের সূত্রপাত। যার জেরে মৃণাল মাকে ছক কষে খুন করেছে অভিযোগ বৃদ্ধার ছেলেমেয়েদেরও।

তারপরেও অবশ্য মৃণালের যাতায়াত বন্ধ হয়নি গৌরীদেবীর বাড়িতে। ধৃত সনাতন মৃণালের ব্যবসায়িক সহকর্মী। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত যুবক জানিয়েছেন, বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে মৃণাল ও সনাতন বৃদ্ধাকে একটি গাড়িতে তোলে। হাড়োয়ার দিকে যাওয়ার পথে ফাঁকা জায়গায় দু’জন মিলে তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করে। তারপরে বৃদ্ধার গা থেকে গয়নাগাটি খুলে দেহ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে বিদ্যাধরী খালে ফেলে দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murderer list Police station
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE