Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সতর্ক পুলিশ-প্রশাসন

সম্প্রতি খাদ্য ও খাদ্য সরবরাহ দফতরের পক্ষ থেকে পুরনো রেশন কার্ডে থাকা ভুল সংশোধন করা ও নতুন রেশন কার্ড তৈরির জন্য শিবির শুরু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিবির চলবে।

ভিড়: বনগাঁ ব্লক অফিসের বাইরে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

ভিড়: বনগাঁ ব্লক অফিসের বাইরে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:০০
Share: Save:

সকালে ৭টার সময়ে হাবড়া ১ ব্লক অফিসে এসেছিলেন পৃথিবা পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ সাইফুদ্দিন মণ্ডল। বেলা ১টার সময়েও তিনি লাইনে দাঁড়িয়ে। রোদে-গরমে কাহিল অবস্থা। বললেন, ‘‘এনআরসি নিয়ে আমরা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে রয়েছি। কাগজপত্র ঠিকঠাক না থাকলে এনআরসি নিয়ে পরবর্তীতে সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে শুনেছি। সে কারণে কষ্ট হলেও রেশন কার্ডে থাকা ভুলভ্রান্তি ঠিক করতে দাঁড়িয়ে রয়েছি।’’

বাগদা ব্লকের গাদপুকুরিয়া এলাকার বাসিন্দা ইনামূল হক মোল্লাও বাগদা ব্লক অফিসে গিয়েছিলেন রেশন কার্ডের ভুল সংশোধন করতে। লাইনে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘এ রাজ্যে এনআরসি আদৌ হবে কিনা জানি না। তবে কোনও সমস্যায় যাতে পড়তে না হয়, সে কারণেই কাজকর্ম ফেলে এই কাজে এসেছি।’’

সম্প্রতি খাদ্য ও খাদ্য সরবরাহ দফতরের পক্ষ থেকে পুরনো রেশন কার্ডে থাকা ভুল সংশোধন করা ও নতুন রেশন কার্ড তৈরির জন্য শিবির শুরু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিবির চলবে। ওই শিবির শুরু হতেই হাবড়া, বনগাঁ, গাইঘাটা, বাগদা ব্লকের একাংশের মানুষের মধ্যে এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শিবির করে রেশন কার্ড সংশোধনের কাজ চললেও বছরভর ওই কাজ চলে। এ বার কেন তা হলে মানুষের ঢল নেমেছে? লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এর পিছনে রয়েছে এনআরসি ভীতি। অনেকেই মনে করছেন, অসমের পরে এ রাজ্যেও এনআরসি চালু হতে পারে। তখন নথিপত্র ঠিকঠাক না থাকলে দুর্ভোগে পড়তে হতে পারে। অনেকেরই ধারণা, রেশন কার্ডে তথ্য ভুল থাকলে আগামী দিনে ভিটেমাটি ছাড়তে হতে পারে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে সংশ্লিষ্ট নথি ফর্মের সঙ্গে জমা দিতে হচ্ছে। এখন শুধু ফর্ম জমা নেওয়ার কাজটাই চলছে। মানুষের প্রশ্ন, ফর্ম পূরণ করে জমা দেওয়ার পরেও যদি কার্ডে ফের ভুল তথ্য আসে, তা হলে কী হবে? এমন ঘটনা অনেকের সঙ্গে আগেও ঘটেছে বলে জানা গেল।

রেশন কার্ডে ভুল সংশোধন করতে আসা বহু মানুষ নিজেরা ফর্ম পূরণ করতে পারেন না। বনগাঁ ব্লক অফিসে গিয়ে দেখা গেল, কয়েক জন যুবক টাকার বিনিময় ফর্ম লিখে দিচ্ছেন। ওই সব যুবকের কাছেও প্রচুর ভিড় জমেছে। এক যুবক জানালেন, চাপ এত বেশি যে ফর্ম পূরণ করতে করতে আঙুল ব্যথা হয়ে যাচ্ছে। ফর্ম পিছু ১০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।

এক যুবকের কাছে ফর্ম পূরণ করছিলেন গোপালনগরের বৈরামপুর পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা এক বৃদ্ধ। তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। বললেন, ‘‘আমার জন্ম এখানে। পূর্বপুরুষও এখানে থাকতেন। বনগাঁ হাইস্কুলে আমি পড়াশোনা করেছি। সব নথিপত্র আমার কাছে রয়েছে। এনআরসি নিয়ে ভয় পাই না।’’ কিন্তু তা হলে এত ভিড় ঠেলে লাইনে কেন? স্পষ্ট উত্তর নেই।

হাবড়ার বেড়গুমের বাসিন্দা রাহেলা বিবি বলেন, ‘‘এনআরসি নিয়ে ভয় নেই। তবে রেশন কার্ডে ভুল আছে। তাই সংশোধন করতে এসেছি।’’ সাবধানের মার নেই, ভাবটা যেন এ রকম! বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘এত মানুষের ভিড়ের কারণ এনআরসি নিয়ে ভীতি।’’ এনআরসি নিয়ে গুজব যে একটা রটেছে তা স্বীকার করে নিচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা। বাগদার বিডিও জ্যোতিপ্রকাশ হালদার বলেন, ‘‘গুজবের বিরুদ্ধে পুলিশকে বলা হয়েছে পদক্ষেপ করতে।’’

হাবড়া ১ বিডিও শুভ্র নন্দী বলেন, ‘‘রেশন কার্ড সংশোধনীর সঙ্গে এনআরসির কোনও সম্পর্ক নেই। বৃহস্পতিবার থেকে এলাকায় মাইক প্রচার শুরু করা হয়েছে মানুষকে এ নিয়ে সচেতন করতে।’’ পঞ্চায়েতকে কাজে লাগানো হয়েছে প্রচারের কাজে। রেশন দোকানগুলিতেও প্রচার করা হবে বলে জানিয়েছে বিডিও।

গুজব রটা বন্ধ করতে বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী বিডিওদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করেছেন। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
চৈতালি বলেন, ‘‘প্রশাসনের তরফে প্রচার করে বলা হচ্ছে ভীতির কিছু নেই। এনআরসির সঙ্গে রেশন কার্ডের সংশোধনের কোনও সম্পর্ক নেই। মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Habra Bangaon NRC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE