Advertisement
E-Paper

ভোর ৩টেয় বেরোতে হবে বাড়ি থেকে

সাগর ব্লকের বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা শিবপ্রসাদ খানাড়ার বাবা নেই। মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। বহু দিন থেকেই স্বপ্ন, চিকিৎসক হওয়ার।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৪২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

স্বপ্নকে ছুঁতে ওঁদের কাউকে পাড়ি পাড়ি দিতে হবে একশো কিলোমিটার, কাউকে দেড়শো কিলোমিটার পথ। কিন্তু মুশকিল একটা। ঘড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সময় মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে পারবেন কিনা, সেটাই ভাবাচ্ছে শিবপ্রসাদ, অর্পণদের। সেই সঙ্গে কত টাকা যে খরচ হয়ে যাবে, তা নিয়েও চিন্তিত বহু পরিবার। তবে নিট পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে রাজ্য সরকার লকডাউন এক দিন কমিয়ে দেওয়ায় অনেকটা স্বস্তিতে তাঁরা।

সাগর ব্লকের বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা শিবপ্রসাদ খানাড়ার বাবা নেই। মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। বহু দিন থেকেই স্বপ্ন, চিকিৎসক হওয়ার। নিট পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন অনেক দিন ধরে। কিন্তু করোনা আবহে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনো নিয়ে চিন্তায় শিবপ্রসাদ। রবিবার পরীক্ষা। শিবপ্রসাদের সিট পড়েছে বজবজের অমৃত বিদ্যালয়ে। বাড়ি থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রের দূরত্ব নদী ও সড়ক পথ মিলিয়ে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার। শিবপ্রসাদের কথায়, “কয়েকজন বন্ধু মিলে বাসেই যাব ঠিক করেছি। বাড়ি থেকে ভোর ৩টের দিকে বেরোলে সকালের মধ্যে কাকদ্বীপ পৌঁছব। ওখান থেকে ৭টা নাগাদ বাস ধরলে আশা করছি দু’টোর আগেই পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে যাব।” ট্রেন না চলাটাই সকলের মূল মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই গাড়ি ভাড়া করে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছনোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

উচ্চ মাধ্যমিকে ৯৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে চমকে দিয়েছিল ক্যানিং ঘোষপাড়ার বাসিন্দা সুলগ্না মল্লিক। এ বার লক্ষ্য চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু রবিবার সেই ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে ক্যানিং থেকে তাঁকে যেতে হবে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে, দমদম কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে। মেয়ের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করেছেন বাবা গোপালচন্দ্র মল্লিক। লকডাউনের কারণে ঠিক মতো বেতন পাননি গত কয়েক মাস। গাড়ি ভাড়ার এতগুলো টাকা জোগাড় করা নিয়ে চিন্তায় তিনি। বললেন, “এই অসময়ে দু’হাজার টাকা গাড়ি ভাড়ার জন্য লাগবে। জানি না, শেষ পর্যন্ত কী হবে। তবে যে ভাবেই হোক, মেয়েটাকে পরীক্ষায় বসতেই হবে।” হাজার দু’য়েক টাকা গাড়ি ভাড়া করে জীবনতলার গ্রাম থেকে জোকায় পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নিট পরীক্ষার্থী

রাজর্ষি হালদারও।

তাঁর কথায়, “এই পরিস্থিতিতে গ্রাম থেকে অত দূর যাওয়া দুর্বিষহ ব্যাপার। তবু যেতে তো হবেই।’’ তাঁর গৃহশিক্ষক বাবার রোজগার লকডাউনে তলানিতে ঠেকেছে। অসুবিধার তালিকা দীর্ঘ। তবুও পরীক্ষায় বসার জন্য অবিচল বনগাঁর তিতলি ভদ্র। এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৩৮ পেয়েছেন তিনি। মধ্যমগ্রামের বিবেকানন্দ কলেজে পৌঁছতে হবে তাঁকে। মধ্যমগ্রামেই কাকার বাড়ি। কিন্তু করোনা আবহে সেখানে গিয়ে থাকার চিন্তা বাতিল করতে হয়েছে। ট্রেন চলছে না। বাস সার্ভিস চালু হলেও অনিশ্চিত। ৬৫ কিলোমিটার পথ যাতায়াতের জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকায় গাড়ি ভাড়া করতে হয়েছে। বাবা বিনয় ভদ্র নিজে অসুস্থ। মাসে ৪ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয়। অনেক কষ্টে গাড়িভাড়ার টাকা জোগাড় করেছেন। তার পরেও পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে টেনশন কাটছে না তাঁর। তবে মনের জোর হারাননি তিনি। যাই ঘটুক পরীক্ষায় তাঁকে বসতেই হবে যে। হাসনাবাদ ব্লকের বেলিয়াডাঙা গ্রামের অর্ণব দাসের পরীক্ষা কেন্দ্র বাড়ি থেকে প্রায় ৮৮ কিলোমিটার দূরের দক্ষিণেশ্বরে। কিলোমিটার হিসেবে গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। কত টাকা ভাড়া পড়বে তাও জানা নেই। এক দিকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছনোর চিন্তা, অন্যদিকে পরীক্ষার টেনশন। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল। সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে গেলে সেই ভোরে বেরোতে হবে বাড়ি থেকে।

NEET Examination
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy