Advertisement
E-Paper

মনুয়ার মন পাকা খুনির, চার্জশিটে বলল পুলিশ

উপস্থিত না-থাকলেও মনুয়াই যে মূল ভূমিকা নিয়েছিল, সেই রিপোর্টই পেশ করা হচ্ছে আদালতে। মনুয়ার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১০৯ ছাড়াও একাধিক ধারা প্রয়োগ করছে পুলিশ।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৭ ০৬:৫০
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

দাগি অপরাধীর মতোই খুনের ছক কষেছিল সে। মানসিকতাও পোড় খাওয়া খুনির মতো। বারাসতে অনুপম সিংহ খুনের ঘটনায় তাঁর স্ত্রী মনুয়া মজুমদারকেই মূল অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিচ্ছে পুলিশ। আজ, বুধবারই তা দেওয়া হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

উপস্থিত না-থাকলেও মনুয়াই যে মূল ভূমিকা নিয়েছিল, সেই রিপোর্টই পেশ করা হচ্ছে আদালতে। মনুয়ার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১০৯ ছাড়াও একাধিক ধারা প্রয়োগ করছে পুলিশ। খুনের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, প্ররোচনা, খুনে সাহায্য ও খুনের তথ্যপ্রমাণ লোপাট থেকে শুরু করে তদন্তের গতিপ্রকৃতি বিভ্রান্ত করার অভিযোগ আনা হচ্ছে। অনুপম-হত্যায় মনুয়া যে দাগি অপরাধীর মতোই মানসিকতা দেখিয়েছে, চার্জশিটে তেমনই দাখিল করছে পুলিশ।

অনুপমের খুনে মনুয়ার ভূমিকাই যে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে, সোমবারই তার প্রমাণ মেলে। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুনের ৮৪ দিনের মাথায় পৃথক ভাবে মনুয়ার জামিনের আবেদন করা হলেও তা খারিজ করে দেয় বারাসত আদালত।’’ অনুপম-হত্যা মামলায় মনুয়াই যে মূল ষড়যন্ত্রী, সেই তথ্য দিয়ে সরকারি কৌঁসুলি জামিনের বিরোধিতা করেন। অবশ্য এর আগেই চার্জশিটে সরাসরি খুনের সঙ্গে মনুয়াকে যুক্ত করতে তার উপরে ১০৯ ধারা প্রয়োগের আবেদন জানিয়েছিল পুলিশ। সেই আবেদন মঞ্জুরও হয়। ওই ধারার সাহায্য নিয়েই মনুয়ার বিরুদ্ধে খুনের চার্জশিট দিচ্ছে পুলিশ।

এই ধরনের খুনের মামলায় পুলিশি তদন্তের পাশাপাশি সাক্ষী, সওয়াল-জবাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। অনুপমের খুনের কোনও প্রত্যক্ষদর্শী নেই। পুলিশি তদন্তেই উঠে এসেছে যে, ঘরের মধ্যে লুকিয়ে থেকে মনুয়ার প্রেমিক অজিত রায় খুন করেছিল অনুপমকে। তাই এই মামলার চার্জশিটে সাক্ষীর চেয়ে মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড, কথাবার্তা এবং ঘটনাস্থল থেকে মেলা জিনিসের ফরেন্সিক পরীক্ষার উপরেই জোর দিচ্ছে পুলিশ। যে কারণে ঘটনাস্থল থেকে মেলা রক্ত, চুল, আঙুলের ছাপ ও অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে অভিযুক্তদের নমুনা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে ফরেন্সিক পরীক্ষার মাধ্যমে।

মনুয়ার মানসিকতা যে দাগি অপরাধীর মতো, তা প্রমাণ করতে চার্জশিটে বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ দাখিল করছে পুলিশ। যার মধ্যে রয়েছে:

১) মনুয়া অসুস্থ ছিল। সুস্থ হওয়ার পরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথম দিনই স্বামীকে খুনের পরিকল্পনা করে সে। কারও যাতে সন্দেহ না হয়, সে জন্য খুনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অনুপমের সঙ্গে স্বাভাবিক ব্যবহার করে সে।

২) নিজের চাবি দিয়ে ঘর খুলে সেখানে অজিতের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে তার মনে প্রতিহিংসা তৈরি করে। তার পরে ঘরের ভিতরে অজিতকে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়ে দেয়, যাতে অনুপম কিছু আঁচ করতে না পারেন।

৩) শ্বশুরবাড়ি না গিয়ে অনুপম যাতে নিজের বাড়িতেই যান, তার জন্য তাঁকে বারবার ফোন করে রাজি করায় মনুয়া। পরে অজিতকে ফোনে বলে, অনুপম ঢুকছে। সে যেন তৈরি থাকে।

৪) পকেটে ফোন অন রেখে অনুপম খুনের ‘রানিং কমেন্ট্রি’ শোনাতে বলে অজিতকে।

৫) খুনের পরে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের নির্দেশ দিয়ে বাড়ির নীচে এসে দেখা দিয়ে যেতে বলে অজিতকে। পরদিন এক ভাইকে ফোন করে অনুপমের বাড়ি পাঠায় মনুয়া।

৬) খুনিকে ধরে দেওয়ার জন্য পুলিশকে চাপ দিয়ে নাটক করে সে।

৭) খুনের পরে অজিতের সঙ্গে দেখা করে। দক্ষিণেশ্বরে পুজো দেয়।

৮) অনুশোচনা তো দূরের কথা, ধরা পড়ার পরেও পরিস্থিতির চাপে কিংবা পুলিশি জেরায় বরাবরই নির্বিকার থেকেছে সে।

তদন্তে মেলা এ সব তথ্যপ্রমাণ সাজিয়েই মনুয়া যে ঝানু অপরাধী, চার্জশিটে তেমনই দাবি করছে পুলিশ।

Murder Case Crime Murder Manua Majumdar Anupam Sinha মনুয়া মজুমদার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy