Advertisement
E-Paper

দমকল ঢুকবে কী করে, প্রশ্ন

বুধবার বাজারে গিয়ে দেখা গেল, পিচের রাস্তার উপরে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে চাল-বোঝাই ট্রাক, ম্যাটাডর, ইঞ্জিন ভ্যান।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৩
জট: এ ভাবেই গতিহীন পথ। নিজস্ব চিত্র

জট: এ ভাবেই গতিহীন পথ। নিজস্ব চিত্র

দিনে-রাতে কোটি টাকার লেনদেন চলে। বহু মানুষের রুটি-রুজির সঙ্গে জড়িয়ে হাবরা বাজার। কিন্তু আগুন ধরলে কোন উপায়ে ঠেকানো যাবে, তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই কারও। গয়ংগচ্ছ ভাবেই চলছে কাজকর্ম। দমদম গোরাবাজারের ঘটনার পরেও কতটা শিক্ষা নেবে পুরসভা, ব্যবসায়ীরা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

বুধবার বাজারে গিয়ে দেখা গেল, পিচের রাস্তার উপরে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে চাল-বোঝাই ট্রাক, ম্যাটাডর, ইঞ্জিন ভ্যান। বস্তা-ভর্তি চাল ওঠানো নামানো হচ্ছে। উল্টো দিক থাকে একটি মিনি ট্রাক আসতেই রাস্তা সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ল। শুরু হল গালিগালাজ, মাথা গরম। আর এই অবস্থায় যদি অগ্নিকাণ্ড ঘটে যায়, তা হলে দমকল ঢুকবে কোথা দিয়ে, সে প্রশ্নটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে।

রাস্তা জুড়ে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বাইক, সাইকেল ভ্যান। দোকানগুলি রাস্তার উপরে উঠে এসেছে। হাবরা শহরে যশোর রোড থেকে বড় বাজারের প্রবেশ করতে হলে চারটি গলি রয়েছে। পিচের গলিগুলি খুব সরু নয়। যাতায়াত করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু জায়গা দখল হয়ে গিয়েছে।

কী ভাবে?

৪ নম্বর গলি দিয়ে বাজারের মধ্যে প্রবেশ করার মুখে দেখা গেল, রাস্তার উপরে ফল বিক্রেতা বসে পড়েছেন। মুদি দোকানি তাঁর মালপত্র দোকানের সামনে রেখে দিয়েছেন। রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি ইঞ্জিন ভ্যান। তাতে বস্তা-ভর্তি আলু।

মূল বাজারের মধ্যে রয়েছে চাউল পট্টি। সেখানে দূরদূরান্ত থেকে চাল নিয়ে ট্রাক, মিনি ট্রাক, ম্যাটাডর ইঞ্জিন ভ্যানে করে ব্যবসায়ীরা এসেছেন। রাস্তার উপরে চলছে চাল ওঠানো-নামানোর কাজ। পায়ে হেঁটে যাওয়ার সুযোগও নেই। অনেক দোকানের উপর দেখা দেখা গেল প্লাস্টিকের ছাউনি।

ভিড় ঠেলে বাজারে ঢুকতেই চোখে পড়ল, কোথাও স্টোভ জ্বালিয়ে দোকানি চা করছেন। কোথাও উনুনে আঁচ দেওয়া হয়েছে। কড়াই চাপানো হবে তাতে। রুটি-চাপাটি তৈরি হবে। রাস্তার গা ঘেঁষে দেখা গেল, একটি হোটেলে ভাত রান্না চলছে। যা থেকে যে কোনও সময়ে আগুন লেগে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।

হাবরা শহরের বড় বাজার সত্যিই আকারে-প্রকারে বড়। দোকানের সংখ্যা হাজারেরও বেশি। বাসিন্দারা জানালেন, বাজারে ঢোকার প্রবেশ পথগুলি এবং বাজারের মধ্যে মূল রাস্তা থাকলেও আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি ঢোকা কার্যত অসম্ভব। গোটা পরিবেশটাই ঘিঞ্জি।

বাজারের চাল ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দেবনাথের কথায়, ‘‘মানুষ হেঁটেই যাতায়াত করতে পারেন না। কখনও আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি ঢুকবে কী করে। আগুন নেভানোর বিকল্প উপায়ও নেই।’’ বাজারে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা বলতেও কিছু নেই।

হাবরার পুরপ্রধান নীলিমেশ দাসের কথায়, ‘‘গত বছর ডিসেম্বর মাসে ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করে অনুরোধ করেছিলাম, গাড়ি থেকে চাল, আলু ওঠানো-নামানোর কাজ রাতে করার জন্য। দিনের বেলা সেই কাজ বন্ধ রাখতে। যাতে বিপদ ঘটলেও পদক্ষেপ করা যায়।’’ হাবরা বাজার পাইকারি চাউল গম ও ধান্য ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বরুণ সাহা অবশ্য দাবি করলেন, আগুন লাগলে ব্যবস্থা রয়েছে। পাশে পুকুর আছে। সেখান থেকে পাইপের মাধ্যমে জল এনে আগুন নেভানো যাতে পারে। কিন্তু রাতে চাল ওঠানো নামানোর কাজ করা সম্ভব নয়। কারণ ওই সময়ে শ্রমিক পাওয়া যাবে না।

দমকল সূত্রে জানানো হয়েছে, বাজারে আগুন নেভানোর পরিকাঠামো সত্যিই নেই। আগুন লাগলে কী ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হবে, তা তাদের জানা নেই। হাবরা শহরে দমকলকেন্দ্র থাকলেও যশোর রোডে কুখ্যাত যানজট পেরিয়ে কতক্ষণে বাজার এলাকায় পৌঁছনো যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আর পৌঁছলেও ভিতরে ঢোকা যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় তো আছেই।

বাজারে দেখা গেল, অসংখ্য বিদ্যুতের তার জালের মতো ছড়ানো। হুকিং নজরে না পড়লেও গায়ে গায়ে এত বিদ্যুতের তারও বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ী মহলের একাংশের।

spaces Market Fire Fire Brigade
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy