Advertisement
E-Paper

গ্রামের মেয়েকে বাঁচাতে রাতপাহারায় পড়শিরা

স্থানীয় এক যুবকের কথায়, ‘‘মেয়েটাকে এ ভাবে শয়তানের মুখে ফেলে দিতে পারি না। বিপদের মুখ থেকে ফিরে এসে ও নতুন জীবন শুরু করেছে। ওকে বাঁচাতেই হবে।’’

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৩৫
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

পাচারকারীদের হাতে পড়ে মুম্বইয়ে বিক্রি হয়ে যায় মেয়েটি। সেখান থেকে পালিয়ে আসার পরে তাঁর পাশে থেকেছেন অনেকেই। এ বার ফের সেই পাচারকারীদের হামলার মুখে রাত জেগে মেয়েটির বাড়ি পাহারা দিলেন পড়শিরা।

তাড়া খেয়ে পিঠটান দিল দুষ্কৃতীরা। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ায়।

পাচার হয়ে যাওয়া কিছু মেয়ে উদ্ধার হলেও পড়শির বাঁকা মন্তব্য তাঁদের পিছু ছাড়ে না। অনেক সময়ে বাপের বাড়িতেও ঠাঁই হয় না তাঁদের। কিন্তু তেমন হয়নি বাদুড়িয়ার পরভিনের (নাম পরিবর্তিত) জীবনে। অনেক ঝড়-ঝাপটা সয়ে সাড়ে তিন বছর পরে গ্রামে ফিরে বিয়ে করেছেন।

এর মধ্যে অভিযুক্ত পাচারকারী সাদেক আলি জামিনে ছাড়া পেয়েছে। অভিযোগ, বুধবার দুপুরে সে হামলা চালায় পরভিনের বাড়িতে। ‘সন্ধের মধ্যে মামলা তুলবি’— হুমকি দিয়ে যায়।

আতঙ্কিত পরভিন পাড়ার চাচা-ফুফাদের ঘটনাটা জানান। সবাই মিলে ঠিক করেন, মেয়েটার পাশে দাঁড়াতে হবে। রাত ১১টা নাগাদ ফের হাজির দুষ্কৃতীরা। এ বার গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে পালায় তারা। এর পরে পুলিশ ডেকে গোটা রাত পরভিনের বাড়ি পাহারা দিয়েছেন পড়শিরা।

স্থানীয় এক যুবকের কথায়, ‘‘মেয়েটাকে এ ভাবে শয়তানের মুখে ফেলে দিতে পারি না। বিপদের মুখ থেকে ফিরে এসে ও নতুন জীবন শুরু করেছে। ওকে বাঁচাতেই হবে।’’ পড়শিরা জানান, সব সময়ে নজরে রাখা হবে পরিবারটিকে।

পাচার হয়ে যাওয়া মেয়েদের ফিরিয়ে আনা, পুনর্বাসনের কাজে যুক্ত স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার মনিকা সরকারের সহায়তায় পুলিশের কাছে সাদেক-সহ কয়েক জনের নামে অভিযোগ করেছিলেন পরভিন। মনিকা বলেন, ‘‘ক’দিন আগেই বসিরহাট আদালতে মামলার তারিখ ছিল। পরভিন আর আমাকে খুনের হুমকি দেয় অভিযুক্তরা। আমরা আতঙ্কিত। তবে এলাকার মানুষ আর পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বিচারের দাবিতে লড়াইটা চালিয়ে যাব।’’ পুলিশ জানিয়েছে, সাদেক ফেরার। তবে পরভিনের নিরাপত্তার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

২০০৮ সাল নাগাদ পরভিন তখন বছর ষোলোর কিশোরী। পাশের গ্রামের সাদেক আলির প্রেমে পড়ে। সাদেক তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। তাতে মজে সাদেকের সঙ্গে ঘর ছাড়ে মেয়ে। পরে জানতে পারে, সাদেকের স্ত্রী-সন্তান আছে। অভিযোগ, মুম্বইয়ের কামাটিপুরার যৌনপল্লিতে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে পরভিনকে বিক্রি করে দেয় সাদেক। আর এক বার হাত ঘুরে পরভিনের ‘দর’ ওঠে ৪০ হাজার টাকা। এ বার ওই এলাকারই অন্য একটি পল্লিতে বিক্রি হয়ে যায় মেয়েটি।

আরও পড়ুন: পাচার থেকে বাঁচাতে বিল পাশের আর্জি

ইতিমধ্যেই কোলে এসেছে সন্তান। সাড়ে তিন বছর পরে এক ব্যক্তির সহায়তায় সেই সন্তান কোলেই বাড়ি ফিরেছিলেন পরভিন। বাড়ির লোকজন চোখের জলে ভেসে ঘরে তোলেন মেয়েকে। পাশে দাঁড়ান পড়শিরাও। কিন্তু মামলা তুলতে চলতে থাকে হুমকি।

বৃহস্পতিবার পরভিনও জানিয়ে‌ছেন, লড়াই চলবে। একা নন তিনি। সঙ্গে আছে বাদুড়িয়া।

Women Trafficking NGO
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy