Advertisement
E-Paper

পড়শি দেশের মৎস্যজীবীদের নির্ঝঞ্ঝাটে ফেরানোর চেষ্টা

ঝড়-ঝঞ্ঝার কবলে পড়ে ভারতীয় মৎস্যজীবীরা ঢুকে পড়বেন বাংলাদেশের জলসীমানার মধ্যে। এবং তাঁদের অনুপ্রবেশের মামলায় ফেঁসে দীর্ঘ দিন কাটাতে হবে বাংলাদেশের জেলে— এই চিত্রটা এ বার বদলানোর ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে কাকদ্বীপে। পড়শি দেশের মৎস্যজীবীরাও ভারতীয় জলসীমানায় ঢুকে পড়লে একই পরিস্থিতি হতো।

শান্তশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৬ ০১:১৮
উদ্ধার করা হয়েছে বাংলাদেশের এই মৎস্যজীবীদের। নিজস্ব চিত্র।

উদ্ধার করা হয়েছে বাংলাদেশের এই মৎস্যজীবীদের। নিজস্ব চিত্র।

ঝড়-ঝঞ্ঝার কবলে পড়ে ভারতীয় মৎস্যজীবীরা ঢুকে পড়বেন বাংলাদেশের জলসীমানার মধ্যে। এবং তাঁদের অনুপ্রবেশের মামলায় ফেঁসে দীর্ঘ দিন কাটাতে হবে বাংলাদেশের জেলে— এই চিত্রটা এ বার বদলানোর ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে কাকদ্বীপে। পড়শি দেশের মৎস্যজীবীরাও ভারতীয় জলসীমানায় ঢুকে পড়লে একই পরিস্থিতি হতো। কাকদ্বীপের ঘটনার সূত্রে সে ব্যাপারেও বদলের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি সামুদ্রিক ঝড়ে ভারতীয় কিছু ট্রলার নিখোঁজ হয়ে বাংলাদেশের উপকূলে গিয়ে ঠেকেছিল। বুধবার রাতে এবং বৃহস্পতিবার সকালে পর পর দু’টি বাংলাদেশি ট্রলারও ঝড়বৃষ্টিতে ভেসে ভারতের জল সীমানায় চলে আসে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা না দিয়ে কী ভাবে ‘পুশ ব্যাক’ করে ফেরানো যায়, তা নিয়েই শুরু হয়েছে তোড়জোড়। এ রকম ক্ষেত্রে মামলা না করার নজির নেই বলেই জানা যাচ্ছে।

কাকদ্বীপের মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হয়েছেন এই ব্যাপারে। তাঁর কথায়, ‘‘এখানকার ট্রলারগুলি যখন ঝড়ে ভেসে জল সীমান্তের ও পারে সীমান্তের চলে গিয়েছিল, তখন কিন্তু বাংলাদেশের মৎস্যজীবী সংগঠন থেকে শুরু করে উপকূলরক্ষী বাহিনী যথেষ্ট সাহায্য করেছে। একই চেষ্টা ওদের ক্ষেত্রেও আমাদের করতে হবে।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, বুধবার রাতেই জম্বুদ্বীপের কাছে ‘এফবি আল্লার দান’ নামে ট্রলারটি থেকে ১৫ জন মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করা হয়। চট্টগ্রামের ওই ট্রলারটিকে জম্বুদ্বীপেই ছেড়ে আসা হয় প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে। বৃহস্পতিবার সকালে আরও ১৬ জন মৎস্যজীবী-সহ ফ্রেজারগঞ্জের কাছেই উদ্ধার হয় ‘এফবি ফারহাদ’ ট্রলারটি-সহ।

বকখালি উপকূলরক্ষী বাহিনীর এক অফিসার বলেন, ‘‘উদ্ধার হওয়া ৩১ জন বাংলাদেশিকেই আমাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। প্রশাসনিক স্তরে দুই দেশের মধ্যে কথাবার্তা চলছে বলে জেনেছি। এদের কী ভাবে ফেরত পাঠানো হবে, তা জানার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’ ওই অফিসার জানান, বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধে এখনও কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি। কাকদ্বীপ এবং ফ্রেজারগঞ্জের মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির নেতারাও চাইছেন, যাতে কোনও মামলায় এঁদের হেনস্থা হতে না হয়।

ইউনাইটেড ফিসারমেন অ্যাসোসিয়েশেনের নেতা বিজন মাইতি এবং সতীনাথ পাত্ররা বলেন, ‘‘ঠিক আমাদের দেশের ট্রলারগুলির মতোই ঝড়জলে ছিটকে এসেছেন ওঁরা। ওঁদেরও পরিবার সকলের ফেরার পথ চেয়ে। এ রকম পরিস্থিতিতে আমরা ওই মৎস্যজীবীদের পাশেই দাঁড়াচ্ছি।’’ এ দিন সংগঠনের নেতারা গিয়ে বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনেন। তাঁদের দাবি, কারও ওষুধ-খাবার প্রয়োজন হলে সাহায্য করা হবে। কেন না, ভারতীয় ট্রলার ‘এফবি মহাগৌরী’র মৎস্যজীবী হরিকমল দাসকেও বাংলাদেশে উদ্ধার করার পরে সেই দেশেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সাধারণত, ভারতীয় জল সীমানায় বাংলাদেশের মাঝি-মাল্লারা ঢুকে পড়লে তাদের গ্রেফতার করে মামলা দায়ের হয়। সে ক্ষেত্রে সাজার মেয়াদ শেষ হলে প্রত্যর্পণ করা হয়। গোটা প্রক্রিয়া বেশ সময় এবং খরচসাপেক্ষ। কিন্তু তার বাইরে কোনও ব্যবস্থা করতে হলে হয় জলপথে অথবা স্থলপথে ‘পুশব্যাক’ করানো হয়। এ প্রসঙ্গে কলকাতায় বাংলাদেশের উপ দূতাবাসের কাউন্সিলর (রাজনৈতিক) বিএম জামাল হোসেন বলেন, ‘‘আমাদের বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে, আমরা এ রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরকেও বিষয়টি জানিয়েছি।’’ রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘মামলা না হলে সাধারণত পুশব্যাকের মাধ্যমেই পাঠানোর উপায় রয়েছে। তবে তা দুই দেশ ঠিক করবে। এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।’’

কিছু বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে ফ্রেজারগঞ্জ উপকূলরক্ষী বাহিনীর আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। বাকি আরও কিছু মৎস্যজীবী ফ্রেজারগঞ্জ জেটিঘাটে রাখা ট্রলারেই থাকছেন। উপকূলরক্ষী বাহিনী সূত্রের খবর, সকলেই সুস্থ আছেন। মন্ত্রীর দাবি, ‘‘যাই করা হোক না কেন, সকলের সঙ্গে কথা বলেই করা হবে। কারণ, ওঁরা যে মৎস্যজীবী, তা প্রাথমিক ভাবে উপকূলরক্ষী বাহিনী নিশ্চিত হয়েছে বলেই জেনেছি।’’

ও দিকে, প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে বৃহস্পতিবারই ‘এফবি মহাগৌরী’ ট্রলারের আরও তিন মৎস্যজীবীর দেহ সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে দেওয়া হয়েছে। সেগুলি শুক্রবার সন্ধ্যায় বসিরহাটের ঘোজাডাঙা সীমান্তে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়ার কথা, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

Fisherman Bangladesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy