Advertisement
E-Paper

লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েও কাজ হল না

মারাকপুর ও বহেরাগাছি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, পথঘাট সুনসান। গ্রামের মধ্যে দিয়ে গেছে পাকা রাস্তা। রাস্তার দু’পাশে অসংখ্য ডোবা, পুকুর। ঝোপ-জঙ্গলে ভরা এলাকা। খেতে জল জমে ডোবার আকার নিয়েছে। সর্বত্র মশার উপদ্রপ। এলাকার বেশির ভাগ মানুষ কৃষিকাজ খেত মজুরি ও দিনমজুরির কাজে যুক্ত।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:০৭
বাড়িমুখো। ছবি: শান্তনু হালদার

বাড়িমুখো। ছবি: শান্তনু হালদার

দুপুর আড়াইটে। হাবরা-১ ব্লকের মারাকপুর উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন হায়দারবেলিয়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য তানিয়া মণ্ডল, শিপ্রা দাসরা। শুক্রবার বেলা ১১টার সময়ে স্থানীয় জিওনডাঙা এলাকার সর্দারপাড়া থেকে কয়েকজন জ্বরে আক্রান্তকে নিয়ে গিয়েছিলেন ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানানো হয়েছিল, এ দিন ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শিবিরের পাশাপাশি জ্বরে আক্রান্তদের রক্তের নমুনা নেওয়া হবে সরকারি ভাবে। তানিয়াদেবী বলেন, ‘‘সকাল থেকে বেলা আড়াইটে পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আছি, অথচ কোনও রক্তের নমুনা নেওয়াই হল না। বাধ্য হয়ে রোগীদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।”

ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে বহু রোগীই এ দিন পরীক্ষা করাতে পারেননি। বাড়িমুখো হয়েছেন। বারো বছরের ছেলে আবরার হোসেনকে নিয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন মা শাকিলা বিবি। বললেন, “মাসখানেক আগে স্বামী জ্বরে ভুগে মারা গিয়েছেন। প্রথম দিকে স্বামীর রক্ত পরীক্ষা করা হয়নি। ফলে শুরুতে ডেঙ্গি ধরা পড়েনি। বৃহস্পতিবার রাতে ছেলের জ্বর আসার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে এসেছিলাম রক্ত পরীক্ষা করানোর জন্য। হল না। জানি না, কপালে কী আছে”

মারাকপুর এলাকাটি পৃথিবা পঞ্চায়েতে। মারাকপুর ছাড়াও বহেরাগাছি, আটুলিয়া, জিওলডাঙা, হায়দারবেলিয়া, আড়বেলিয়া, বামিহাটি, পৃথিবা-সহ গোটা এলাকায় জ্বরের প্রকোপ ছড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে কয়েকজনের।

মারাকপুর ও বহেরাগাছি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, পথঘাট সুনসান। গ্রামের মধ্যে দিয়ে গেছে পাকা রাস্তা। রাস্তার দু’পাশে অসংখ্য ডোবা, পুকুর। ঝোপ-জঙ্গলে ভরা এলাকা। খেতে জল জমে ডোবার আকার নিয়েছে। সর্বত্র মশার উপদ্রপ। এলাকার বেশির ভাগ মানুষ কৃষিকাজ খেত মজুরি ও দিনমজুরির কাজে যুক্ত। মাফিজুল তরফদার নামে জ্বরে আক্রান্ত এক বৃদ্ধ খেতমজুর জানালেন, এখানে এমন কোনও পরিবার নেই, যেখানে কেউ না কেউ জ্বরে আক্রান্ত হয়নি। কাজকর্ম সব বন্ধ।”

গ্রামে ঘুরে কাউকে খেতে কাজ করতে দেখা গেল না। গ্রামের মধ্যে একটি দোকানে কয়েকজন গ্রামবাসী আতঙ্কিত মুখে বসেছিলেন। তাঁরা জানালেন, জ্বরে প্রকোপে একের পর এক মানুষ মারা যাচ্ছেন। অথচ পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মশা মারার কোনও উদ্যোগ করা হচ্ছে না। এখনও পর্যন্ত গ্রামে একদিন মাত্র মশা মারার তেল ছড়ানো হয়েছে। মহম্মদ আজিজুল নামে এক যুবক বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে গিয়ে রীতিমতো মারামারি করে আমরা মশা মারার তেল এনে ছড়িয়েছি।’’

অভিযোগ ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে পঞ্চায়েত গুলিকে মশা মারার তেল, ব্লিচিং দেওয়া হলেও পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে গ্রামে তা ছড়ানো হচ্ছে না। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে শিক্ষক ও পড়ুয়াদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গি সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। শিক্ষিকা অমৃতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোথাও মশা মারার উদ্যোগ চোখে পড়েনি।’’

হাবরা ১ বিডিও শুভ্র নন্দী বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার পঞ্চায়েতগুলিতে তদন্ত করতে পাঠানো হয়েছে। মারাকপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শনিবার থেকে যাতে সকলের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়, সে বিষয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

বিডিও জানান, গ্রামের জমা জল সরাতে এবং ঝোপ-জঙ্গল সাফ করার জন্য একশো দিনের কাজের প্রকল্পে শ্রমিক নিয়োগ করা হচ্ছে।

Dengue fever Water pollution Blood Test
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy