Advertisement
E-Paper

রাতবিরেতে উর্দি ছাড়া তল্লাশিতে বেরোতে নিষেধ পুলিশ কর্মীদের

কথায় বলে, গুজব ছড়ায় হাওয়ার বেগে। গত কয়েক দিনের ঘটনা প্রবাহ বলছে সে কথাই। তার উপরে জুড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার। সব মিলিয়ে ‘ছেলেধরা’ কিংবা ‘জঙ্গি’ গ্রামে ঢুকে পড়েছে— এই গুজব সামাল দিতে পুলিশ-প্রশাসনের ব্যতিব্যস্ত দশা উত্তর ২৪ পরগনায়। কোথাও গুজব রটেছে, দুষ্কৃতীরা বাড়ি বাড়ি ঢুকে মহিলাদের উপরে নির্যাতন করেছে।

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:১১
গুজবে কান দেবেন না, চলছে প্রচার। সোমবার গোপালনগরে নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

গুজবে কান দেবেন না, চলছে প্রচার। সোমবার গোপালনগরে নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

কথায় বলে, গুজব ছড়ায় হাওয়ার বেগে। গত কয়েক দিনের ঘটনা প্রবাহ বলছে সে কথাই। তার উপরে জুড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার। সব মিলিয়ে ‘ছেলেধরা’ কিংবা ‘জঙ্গি’ গ্রামে ঢুকে পড়েছে— এই গুজব সামাল দিতে পুলিশ-প্রশাসনের ব্যতিব্যস্ত দশা উত্তর ২৪ পরগনায়। কোথাও গুজব রটেছে, দুষ্কৃতীরা বাড়ি বাড়ি ঢুকে মহিলাদের উপরে নির্যাতন করেছে। কোথাও আবার খুনের রটনাও শোনা গিয়েছে।

গুজবে কান না দেওয়ার আবেদন করে মাইকে প্রচার চালাচ্ছে পুলিশ। অশোকনগর থেকে শনিবার হোয়াটস অ্যাপে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে এক তরুণকে। উত্তর ২৪ পরগনা তো বটেই, অন্য জেলাতেও পরিস্থিতি এমন, রাজ্য পুলিশের ডিজিকে রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে গুজবের বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়েছে সোমবার।

জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘আমরা মাইকে প্রচার চালাচ্ছি। এলাকায় গিয়েও লোকজনকে বোঝাচ্ছি। কিন্তু আমাদের সামনে হয় তো কেউ কিছু বলছেন না। কিন্তু গুজবে কান না দেওয়ার কথা কতটা কানে ঢুকছে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।’’ ওই পুলিশ কর্তার আক্ষেপ, ‘‘একে তো মুখে মুখে গুজব ছড়াচ্ছে, গোদের উপরে বিষফোঁড়ার মতো পরিস্থিতি হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে। সেখান থেকে আগুনের মতো ছড়াচ্ছে গুজব।’’

পুলিশকে এখন কাজের সময়ের বেশির ভাগটাই খরচ করতে হচ্ছে গুজব ঠেকাতে। আলাদা গাড়ি ও ফোর্স সর্বক্ষণ প্রস্তুত রাখতে হচ্ছে। বনগাঁ, হাবরা, গাইঘাটা, অশোকনগর, বাগদা, দেগঙ্গা, গোপালনগর, পেট্রাপোল-সহ বিভিন্ন থানার পক্ষ থেকে গুজবের বিরুদ্ধে মাইকে প্রচার চালাচ্ছে পুলিশ। পঞ্চায়েত স্তরে পুলিশ কর্তারা জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করছেন। প্রশাসনের কর্তারাও বৈঠক করছেন। পুলিশ কর্তাদের নম্বর ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, কোথাও কোনও সন্দেহজনক কিছু দেখলেই যেন ওই নম্বরে ফোন করে দেওয়া হয়।

এতে আবার সমস্যাও বেড়েছে। রাতবিরেতে ফোন করে বলা হচ্ছে, অমুক গ্রামে ডাকাত পড়েছে, তমুক জায়গায় দুষ্কৃতীরা লুঠপাট চালাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ গিয়ে দেখছে, সব ভোঁ ভাঁ। কোথাও কোনও গোলমাল নেই।

পুলিশ জানাচ্ছে, গুজবের শুরুটা হয়েছিল নদিয়া-লাগোয়া গোপালনগর থেকে। তারপর ধীরে ধীরে জেলার বেশির ভাগ এলাকায় তা ছড়িয়ে পড়েছে গত কয়েক দিনে।

তবে কারা, কী উদ্দেশে গুজব ছড়াচ্ছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘আমরা এখন দুষ্কৃতী ধরা বন্ধ করে গুজব ঠেকাতেই ব্যস্ত। এমনও দেখা যাচ্ছে, গ্রামের অতি উৎসাহী কিছু মানুষ মদ্যপ বা পাগল ধরে দুষ্কৃতী বলে প্রচার করে তাকেই মারধর করছে। আর কিছু মানুষ তাতেই মজা লুটছে। অদ্ভূত পরিস্থিতি।’’ অশোকনগর থেকে ধৃত যুবকও স্রেফ মজা করতে গুজব ছড়াচ্ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছে পুলিশ।

পুলিশকে আর এক অফিসার জানালেন, সাদা পোশাকে গ্রামে ঢুকে প্রচার চালাতেও সংশয় হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মীদের উর্দি পরে যেতে মৌখিক ভাবে বলা হয়েছে। দিন কয়েক আগে অশোকনগর থানার পুলিশ মাইকে করে গ্রামে প্রচারে চালাচ্ছিল। গ্রামবাসীরা গাড়ি আটকে প্রশ্ন তোলেন, ‘‘ঘটনা তো ঘটছে। তা হলে আপনারা কেন তা গুজব বলে উড়িয়ে দিতে চাইছেন? এ ধরনের প্রচার বন্ধ করা হোক।’’

এ ক্ষেত্রে পুলিশের বক্তব্য, বড় ধরনের কোনও অপরাধ দিন কয়েকের মধ্যে ঘটেনি। তা ছাড়া, দুষ্কৃতীরা সব সময়েই সক্রিয়। তারা অপকর্ম ঘটাতে চাইবে। সে জন্য আইন আছে। স্রেফ সন্দেহের বশে কাউকে যেন আটকে রেকে মারধর করা না হয়। লোকের মুখের খবরে বিশ্বাস না রেখে সন্দেহজনক কিছু দেখলে পুলিশ-প্রশাসন কিংবা জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘কিছু স্বার্থান্বেষী লোক সরকারকে বদনাম করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে গুজব রটাচ্ছে। তাদের ধরে কড়া শাস্তি দিতে বলা হয়েছে পুলিশকে। আমরাও দলগত ভাবে গ্রামে গ্রামে প্রচার করছি।’’

surveillance Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy