Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
Gobardanga

উচ্ছেদে বাধা, পুনর্বাসনের দাবি

এ দিন কোয়ার্টার ভাঙতে গেলে বাসিন্দারা বাধা দেন। উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন রেল কর্তৃপক্ষ।

উত্তেজনা: রেলের সঙ্গে কথা বসবাসকারীদের। ছবি: সুজিত দুয়ারি

উত্তেজনা: রেলের সঙ্গে কথা বসবাসকারীদের। ছবি: সুজিত দুয়ারি

নিজস্ব সংবাদদাতা 
গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৫৩
Share: Save:

রেলের জমিতে থাকা কোয়ার্টারে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ল রেল। বুধবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে গোবরডাঙা স্টেশন-সংলগ্ন এলাকায়।

এ দিন কোয়ার্টার ভাঙতে গেলে বাসিন্দারা বাধা দেন। উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন রেল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি গোবরডাঙায় রেলের জায়গায় রেলের কোয়ার্টারে বসবাসকারী পরিবারগুলিকে নোটিস দিয়ে উঠে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, কোয়ার্টারগুলি দীর্ঘ দিন ধরে জবরদখল করে বসবাস করছেন ওই পরিবারগুলি। কোয়ার্টারে বসবাসকারীরা জানান, বহু বছর ধরে তাঁরা থাকছেন অনেকেরই জন্ম হয়েছে এই কোয়ার্টারে। হঠাৎ করে তাঁদের পক্ষে কোয়ার্টার ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়া সম্ভব হয়। তাঁরা বিদ্যুতের বিল দেন। পুরসভায় কর দেন। কোয়ার্টারে বসবাসকারী বেশির ভাগ পরিবারের কেউ না কেউ অতীতে রেলে চাকরি করেছেন। সেই সূত্রে তাঁরা কোয়ার্টারে থাকতে শুরু করেছিলেন। লকডাউনে রুজি-রোজগার ধাক্কা খেয়েছে। এখন উচ্ছেদ হলে পথে বসতে হবে। পুনর্বাসন ছাড়া তাঁরা কোয়ার্টার ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দেন বাসিন্দারা। অনেকেই জানালেন, অন্যত্র চলে যাওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য তাঁদের নেই।

কোয়ার্টারে ছেলেকে নিয়ে থাকেন বৃদ্ধা সুমিত্রা দাস। তিনি অসুস্থ। রেল কর্তৃপক্ষ এ দিন এলাকায় গেলে সুমিত্রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বার বার তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমাকে বাঁচান। আমি এখন কোথায় যাব!’’ বৃদ্ধা কালিদাসী পার্সির স্বামী রেলে চাকরি করতেন। সেই সূত্রে তাঁরা অনেক বছর আগে থেকে রেল কোয়ার্টারে থাকতে শুরু করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কোয়ার্টার ছেড়ে দিতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু অন্যত্র আমাদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।’’

দুর্গাপুজোর আগে রেল প্রথম নোটিস দেয়। বলা হয়েছিল, কোয়ার্টার খালি করে দিতে হবে। বাসিন্দারা কোয়ার্টার খালি না করায় রেলের পক্ষ থেকে আগেও একবার কোয়ার্টার খালি করতে যাওয়া হয়েছিল। সে বারও বাধা ও বিক্ষোভের জেরে ফিরে আসতে হয়েছিল।

রেল সূত্রের খবর, অনেক কোয়ার্টার বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। কোনও বিপদ হলে তার দায় কে নেবে, সে প্রশ্ন আছে। রেল কর্তৃপক্ষ এ দিনও একটি নোটিস সাঁটিয়ে দিয়েছেন। তাতে বুধবারের মধ্যে কোয়ার্টার খালি করতে বলা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বসবাসকারী মানুষজন। পাশাপাশি, রেল কলোনি এলাকায় বসবাস করা মানুজনও শঙ্কিত। তাঁরা মনে করছেন, কোয়ার্টার ফাঁকা করার পরে রেল কর্তৃপক্ষ তাঁদেরও উচ্ছেদ করতে পারেন। এই আশঙ্কা থেকে সকলে জোটবদ্ধ হয়েছেন। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন এলাকায় দেখা গিয়েছে, কোথাও আগুন লেগে রেলবস্তি পুড়ে গেলে রেল সেখানে পাকা বাড়ি করে দিয়েছে। তা হলে আমাদের সরানো হলে কেন পুনর্বাসন দেওয়া হবে না? এক মহিলার কথায়, ‘‘বহু বছর ধরে আমরা রেল কোয়ার্টারে বসবাস করছি। লকডাউনে স্বামীর রুজিরোজগার বন্ধ। এখন উচ্ছেদ হলে পথে বসতে হবে। পুনর্বাসন ছাড়া আমরা কোয়ার্টার ছাড়ব না।’’

তৃণমূল পাশে দাঁড়িয়েছে কোয়ার্টারে বসবাসকারীদের। গোবরডাঙার পুরপ্রশাসক তথা তৃণমূল নেতা সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘উপযুক্ত পুনর্বাসন ছাড়া আমরা উচ্ছেদের বিরোধী। তা ছাড়া, উচ্ছেদ করার সময় এখন নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Railways Gobardanga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE