Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

ডেঙ্গির কোপ নৈহাটিতে, মৃত এক

ওই রোডের বাসিন্দারাও জানান, এই এলাকায় নৈহাটির যৌন পল্লি। পায়রার খোপের মতো ঘর। ঘরের গা দিয়েই নিজেদের সুবিধা মতো তৈরি করে নেওয়া হয়েছে সরু নর্দমা।

বিতান ভট্টাচার্য
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ০২:০৭
Share: Save:

তেল ছড়িয়ে কামান দেগে হার মেনেছে পুরসভা। ডেঙ্গি যে ভাবে ত্রাস তৈরি করছে শহর জুড়ে তাতে এ বার ভয় পাচ্ছেন পুর প্রশাসনের কর্তারা। তার মধ্যে এলাকার এক যুবকের ডেঙ্গিতে মৃত্যু হওয়ায় প্রশ্ন তুলেছে ডেঙ্গি প্রতিরোধে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে।

ডেঙ্গির থাবা প্রতি বছরই পড়ে নৈহাটিতে। রবিবার সকালে কলকাতার একটি নার্সিংহোমে মৃত্যু হয়েছে ভিকি সাউ (২৯) নামে এক যুবকের। তিনি নৈহাটির সঞ্জীব চ্যাটার্জি রোডের বাসিন্দা। নিম্নবিত্ত পরিবার। বাড়ির লোক জানিয়েছে, কিছুদিন ধরেই জন্ডিসে ভুগছিলেন ওই যুবক। সঞ্জীবের শ্বশুরবাড়ি নদিয়ার গয়েশপুরের গোকুলপুরে। ওই এলাকায় ডেঙ্গি ছড়িয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। ভিকির স্ত্রী মৌমিতা জানান, বাপের বাড়ির আশেপাশে অনেকেরই ডেঙ্গি হয়েছে। সেখান থেকেই ও আক্রান্ত হল কিনা জানি না। এখানে কয়েক জায়গায় চিকিৎসা চলছিল জন্ডিসের। তাঁর কথায়, ‘‘আট-ন’দিন ধরে জ্বর নামছিল না। খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এরপরেই কলকাতার নার্সিংহোমে ভর্তি করালাম। কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না। পরে শুনলাম ডেঙ্গি হয়েছিল।’’ গয়েশপুরের বাসিন্দা দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘নদিয়ার এই অঞ্চলে ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে। নৈহাটিতেও যে এলাকায় ভিকির বাড়ি সেখানেও কেউ কেউ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত।’’ নৈহাটির অন্য এলাকা থেকে সঞ্জীব চ্যাটার্জি স্ট্রিট চিরকালই অপরিচ্ছন্ন। ঘিঞ্জি বসতি নিকাশি নালা সাফাই হলেও বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব চূড়ান্ত। ঘরের আঙিনায় কোথাও ডাবের খোলায় জল জমে রয়েছে। কোথাও আবার ফেলে দেওয়া বালতি বা টায়ারের টুকরোয়। নৈহাটি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ভজন মুখোপাধ্যায় স্থানীয় কাউন্সিলর। তিনি বলেন, ‘‘ভিকির মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। আগে থেকেই তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজ খবর রাখছিলাম। শারীরিক ভাবে খুব দুর্বল ছিল ডেঙ্গি ধরা পড়ার আগে থেকেই।’’

ওই রোডের বাসিন্দারাও জানান, এই এলাকায় নৈহাটির যৌন পল্লি। পায়রার খোপের মতো ঘর। ঘরের গা দিয়েই নিজেদের সুবিধা মতো তৈরি করে নেওয়া হয়েছে সরু নর্দমা। যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকে আবর্জনা। কিছু জিনিসপত্রে জলও থাকে। আর সেখানেই মশার আঁতুড় ঘর। পরিষ্কার করার হেলদোল নেই কারও। কিন্তু একটা মৃত্যুতেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। গঙ্গার কাছে বাড়ি মধুমিতা ঘোষের। তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই তো পুরসভা ব্যবস্থা নিতে পারত। প্রতি বছরই এখন নৈহাটিতে ডেঙ্গি ছড়ায়। পুরপ্রতিনিধিরা জানেন সে কথা।’’ বিজয়নগরের বাসিন্দা অসীম দাস বলেন, ‘‘পরিত্যক্ত কারখানা আর ফাঁকা বাড়িতে জমা জলে মশা ডিম পাড়ছে।’’ সোমবার তড়িঘড়ি সব কাউন্সিলর আর চেয়ারম্যানকে নিয়ে পুরসভায় বৈঠকে বসেন নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক। নিজেদের ব্যর্থতার কথা মেনে নিয়ে বিধায়ক বলেন, ‘‘শুধু নিয়ম মেনে মশা মারতে কামান দেগে কোনও লাভ নেই। বাসিন্দাদেরও সচেতনতার প্রয়োজন। নৈহাটিতে ডেঙ্গিতে আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে তথ্য নিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Naihati Dengue Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE