Advertisement
E-Paper

দরিদ্র পড়ুয়াদের উচ্চমাধ্যমিক পাশ করাতে তৎপর পঞ্চায়েত

মধুসূদনপুরের খেতমজুর পরিবারের মেয়ে বছর পনেরোর রাখি মাইতি। দশম শ্রেণিতে উঠতেই বিয়ে ঠিক করছিলেন বাবা-মা। শেষ পর্যন্ত মেয়েটির বিয়ে আটকেছে পঞ্চায়েত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৪৭
সুব্রত সর্দার ও রাখি মাইতি।

সুব্রত সর্দার ও রাখি মাইতি।

মধুসূদনপুরের খেতমজুর পরিবারের মেয়ে বছর পনেরোর রাখি মাইতি। দশম শ্রেণিতে উঠতেই বিয়ে ঠিক করছিলেন বাবা-মা। শেষ পর্যন্ত মেয়েটির বিয়ে আটকেছে পঞ্চায়েত। এ বছর সে মাধ্যমিকও দিচ্ছে শিবকালীনগর ঈশান মেমোরিয়াল হাইস্কুল থেকে।

শুধু রাখি নয়, দরিদ্র এবং পিছিয়ে থাকা পরিবারের ছেলেমেয়েদের অন্তত উচ্চমাধ্যমিক পাশ করানোর জন্য এগিয়ে এসেছে পঞ্চায়েত।

রাখির বাবা গুণধরবাবু বলেন, ‘‘অল্প রোজগার। মেয়েকে আর পড়াব না বলে ঠিক করেছিলাম। তারপর পঞ্চায়েত থেকে মেয়ের এখনই বিয়ে দিতে বারণ করা হল। কিছু টাকা ও বইখাতাও কিনে দিয়েছে পঞ্চায়েত।’’ এখন আবার পড়াশোনা শুরু করেছে রাখি।

অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষা চালু করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সমস্যা দেখা দিচ্ছে তারপর থেকেই। প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র পরিবারগুলিতে অষ্টম শ্রেণির পরেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। অল্প বয়েসেই ছেলেরা পড়াশোনা বাদ দিয়ে ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে যাচ্ছে। গত বছর থেকে এটি আটকানোর চেষ্টা শুরু করেছে তৃণমূল পরিচালিত মধুসূদনপুর পঞ্চায়েত। এখানে বাধ্যতামূলক অবৈতনিক শিক্ষা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত করা হয়েছে। পঞ্চায়েতের ওই সিদ্ধান্তে এলাকার বিভিন্ন গ্রামে রাখির মতো আরও অনেক ছেলেমেয়েই উপকৃত হচ্ছে।

মধুসূদনপুর কাছারি পাড়ার কিশোর সুব্রত সর্দারের বাবা কালীপদবাবু পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে মাছ বিক্রি করেন। পাঁচ জনের সংসারে কোনও রকমে সুব্রত উঠেছিল দশম শ্রেণিতে। তার কথায়, ‘‘বাড়ির অবস্থা দেখে ভাবছিলাম, কলকাতায় গিয়ে চায়ের দোকানে কাজ করব। তারপর বইপত্র, খাতা-পেন পেলাম। সিদ্ধান্ত বদলে ফেললাম।’’ সুব্রত আর কাজে যায়নি। এ বার সে লক্ষ্মীপুর রাধাকান্ত অ্যাকাডেমি থেকে মাধ্যমিক দেবে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক খোকনচাঁদ হালদার বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের এই সিদ্ধান্তে স্কুলছুটের হার কমেছে। পড়াশোনার দিকে আগ্রহ দেখাচ্ছে পড়ুয়ারা।’’

পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সহদেব বৈদ্য জানান, গত বছর পঞ্চায়েত সদস্য, স্বাস্থ্যকর্মী এবং শিক্ষকেরা মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সব ছাত্রছাত্রী কম করে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়বে। সে জন্য যা যা প্রয়োজন সবটাই পঞ্চায়েত দেখবে। এ বছর পঞ্চায়েত মোট ৭০ জন ছাত্রছাত্রীকে সাহায্য করছে। তার মধ্যে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ৩৩ জন রয়েছে।

কাকদ্বীপের অন্য পঞ্চায়েতগুলির তুলনায় শিক্ষায় এই নজির কী ভাবে গড়ছে মধুসূদনপুর?

পঞ্চায়েতের কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষার আঙিনা থেকে যাতে একটিও বাচ্চা স্কুলছুট না হয়, সে জন্য এখানে সরকারি বিভাগগুলিকেই কাজে লাগানো হচ্ছে। কোনও শ্রেণি থেকে পাশ করে পরের শ্রেণিতে ওঠার সময়ে একজন ছাত্র বা ছাত্রীও কম হলে তার বাড়িতে গিয়ে সমস্যা প্রাথমিক ভাবে খতিয়ে দেখার কাজ করছেন আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়িকর্মীরা। স্বাস্থ্য, সামাজিক বা অর্থ সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যা হলে তার দায়িত্ব নিচ্ছে পঞ্চায়েত। ক্লাস্টার বানিয়ে স্কুলের শিক্ষকদের দিয়েই ফ্রি তে কোচিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকারি বিভাগের শাখা, ক্লাব এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে কাজে লাগিয়ে ছোট থেকে বড় সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

Panchayat Pooe Students HS Examination
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy