Advertisement
E-Paper

যাত্রীদের উপরে হামলার প্রতিবাদে রেল অবরোধ, ভোগান্তি যাত্রীদেরই

হাড়োয়া স্টেশন মাস্টারের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক তদন্তের দাবিতে সোমবার সপ্তাহের শুরুর দিনটিতেই ভ্যাবলা স্টেশনে সকাল ৮টা থেকে রেল অবরোধ করলেন যাত্রীরা। প্রায় ৪ ঘণ্টা অবরোধ চলে। একই দাবিতে বসিরহাটের মালতিপুর স্টেশনেও দীর্ঘক্ষণ ট্রেন আটকে বিক্ষোভ দেখান যাত্রীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৬ ০০:৫৭
তখনও উত্তপ্ত পরিস্থিতি। ভ্যাবলায় নির্মল বসুর তোলা ছবি।

তখনও উত্তপ্ত পরিস্থিতি। ভ্যাবলায় নির্মল বসুর তোলা ছবি।

হাড়োয়া স্টেশন মাস্টারের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক তদন্তের দাবিতে সোমবার সপ্তাহের শুরুর দিনটিতেই ভ্যাবলা স্টেশনে সকাল ৮টা থেকে রেল অবরোধ করলেন যাত্রীরা। প্রায় ৪ ঘণ্টা অবরোধ চলে। একই দাবিতে বসিরহাটের মালতিপুর স্টেশনেও দীর্ঘক্ষণ ট্রেন আটকে বিক্ষোভ দেখান যাত্রীরা। আটকে পড়ে হাসনাবাদ-শিয়ালদহ লাইনের দু’টি আপ-ডাউন ট্রেন।

শুক্রবার হাড়োয়ায় আক্রান্ত হন নিত্যযাত্রীদের অনেকে। দু’টি ট্রেন আটকে তাতে ভাঙচুর চালায় এলাকার কিছু লোক। ওই ঘটনায় রেল পুলিশ আহত যাত্রীদেরই উল্টে গ্রেফতার করেছে বলে দাবি বিক্ষোভকারীদের। তাঁদের আরও বক্তব্য, স্টেশন ম্যানেজারের মদতেই এলাকার লোকজন জুটে গিয়ে নিত্যযাত্রীদের উপরে হামলা চালিয়েছিল ওই দিন।

সোমবার দুপুরে অবরোধ তুলতে এসে ভ্যাবলায় ঘেরাও-বিক্ষোভের মুখে পড়েন রেল পুলিশের আধিকারিকেরা। রেল পুলিশের ইন্সপেক্টর সঞ্জয় কুণ্ডু বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ নেন। যাত্রীদের মারধরের ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দেন। হাড়োয়া স্টেশন মাস্টারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ শিয়ালদহের ডিআরএমকে জানানোরও প্রতিশ্রুতি দেন। ধৃত যাত্রীরা যাতে দ্রুত জামিন পান, সেই ব্যবস্থা করার কথাও বলেন। এরপরে বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ অবরোধ ওঠে। গোলমালের আশঙ্কায় বসিরহাট থানার পুলিশও হাজির ছিল এলাকায়।

গত শুক্রবারের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে লোক ডেকে যাত্রীদের উপরে হামলায় মদত দেওয়ার অভিযোগ মানতে নারাজ হাড়োয়ার স্টেশন ম্যানেজার দেবাশিস হাজরা।

রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার হাড়োয়া স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ ট্রেন আটকে থাকায় যাত্রীদের একাংশ প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে স্টেশনে ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে তাঁদের মারপিট বাধে। পরে এলাকার বেশ কয়েকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে পর পর দু’টি ট্রেনে উঠে আলো নিভিয়ে যাত্রীদের মারধর করে। মহিলা এবং শিশুদেরও মারা হয়। ট্রেন থেকে লাফিয়ে পালাতে গিয়ে বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হন। ‌দু’পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোল হলেও রেলপুলিশ ট্রেনযাত্রীদের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করায় যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়। যাত্রীদের উপরে যারা চড়াও হল, তাদের কেন ধরা হবে না, সে প্রশ্ন ওঠে।

এরই প্রতিবাদে এ দিন সোচ্চার হন ট্রেনযাত্রীরা। সকাল ৮টায় ভ্যাবলা স্টেশনে হাসনাবাদ-শিয়ালদহ ডাউন ট্রেন এবং মালতিপুরে শিয়ালদহ-হাসনাবাদ আপ ট্রেনের সামনে বসে পড়ে অবরোধ-বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা।

এরই মধ্যে গুজব রটে যায়, আহত এক রেলয়াত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আরও রটে, হাড়োয়ায় লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে যাত্রীদের মারবে বলে অপেক্ষায় রয়েছে। এ সবের জেরে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ওমর শরিফ, উত্তম নন্দী, তন্ময় বিশ্বাস, অতনু রায়রা জানান, চাঁপাপুকুর স্টেশনে সিগন্যাল পয়েন্ট খারাপ থাকায় গত কয়েক মাস হচ্ছে প্রতি দিন এক দেড় ঘণ্টা করে লেট হচ্ছে ট্রেন। নিজেদের অসুবিধার কথা জানাতে শুক্রবার কয়েকজন যাত্রী স্টেশন মাস্টারের কাছে গিয়েছিলেন। স্টেশন মাস্টার গুন্ডা ডেকে মার খাওয়ান। হাসনাবাদ-শিয়ালদহ ৪ নম্বর কম্পার্টমেন্ট নিত্যযাত্রী সংস্থার সম্পাদক বাপি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্টেশনে ভাঙচুর করা ঠিক হয়নি। কিন্তু তাই বলে যে ভাবে একজন স্টেশন মাস্টার লোক ডেকে যাত্রীদের মারধর করালেন, তা কিছুতেই মানা যায় না।’’ ঘটনার সময়ে ট্রেনে ছিলেন রত্না মণ্ডল, কল্পনা আচার্য। তাঁরা বলেন, ‘‘মহিলা-শিশুদেরও রেয়াত করা হয়নি।’’ শুক্রবার গোলমালের সময়ে রেলপুলিশের দেখা মেলেনি বলে তাঁদের অভিযোগ। হাড়োয়া এবং সন্ডালিয়া স্টেশনে রেল পুলিশ মোতায়েনের দাবি তুলেছেন সকলে।

এ দিন ট্রেন অবরোধের জেরে সমস্যায় পড়েন বহু মানুষ। হাসনাবাদের বিশপুর গ্রামের আজিজুল শেখের এক আত্মীয় আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি। মঙ্গলবার সকালে অপারেশন। রক্তের প্রয়োজন। আজিজুল বলেন, ‘‘প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করা অন্যায় নয়। কিন্তু আগে থেকে না বলে ক’য়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা ট্রেন আটকে রাখলে কত মানুষের কত যে অসুবিধা হয়, তা কেন যে ওঁরা মাথায় রাখেন না।’’ আজিজুল জানালেন, বিকেলের মধ্যে রক্ত জোগাড় করতে হবে তাঁকে। কলকাতার বিশেষ কিছু চেনেন না। অথচ, এতখানি সময় তাঁর রাস্তাতেই কেটে গেল!

rail block
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy