Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Water-logged

৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক নিয়ে নাজেহাল মানুষ খানাখন্দে ভরা রাস্তায় জল জমে বাড়ছে দুর্ভোগ

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছে, গর্ত বোজানোর কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।

দুর্বিষহ: পথের বহু অংশে জল জমে এখন এই অবস্থা। আমডাঙায় তোলা নিজস্ব চিত্র

দুর্বিষহ: পথের বহু অংশে জল জমে এখন এই অবস্থা। আমডাঙায় তোলা নিজস্ব চিত্র

সুপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২০ ০৩:২২
Share: Save:

দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এটি। যোগাযোগ এবং পণ্য পরিবহণের দিক থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের গুরুত্ব দিনদিন বাড়ছে। লকডাউন শিথিল হতেই এই সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। দৈনিক কয়েক হাজার বড় গাড়ি চলাচল করছে। কিন্তু বর্তমানে রাস্তাটি বেহাল। খানাখন্দে ভরা রাস্তা দেখলে জাতীয় সড়ক বলে মনেও হবে না।

বারাসত থেকে নদিয়ার জাগুলি মোড় পর্যন্ত দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার। তার মধ্যেই রাস্তা জুড়ে অসংখ্য গর্ত। কয়েকটি জায়গায় রাস্তা বিপজ্জনক বলে অভিযোগ গাড়ির চালকদের। তার ফলে গন্তব্যে পৌঁছতে প্রায় দ্বিগুণ সময় লাগছে। ক্ষতি হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশের, ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। ইতিমধ্যে বর্ষা এসে গিয়েছে। তার ফলে রাস্তার কাজ এখন করা যাবে না। কিন্তু গর্ত বোজানো না গেলে আগামী দিনে গাড়ি চলাচলে সমস্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সকলেই।

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছে, গর্ত বোজানোর কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।

কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ, এবং সেখান থেকে কলকাতায় রোজই প্রচুর পণ্য বোঝাই লরি যাতায়াত করে। বর্তমানে ট্রেন বন্ধ বলে নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদের বাসিন্দাদেরও ভরসা এই রাস্তাটি। তার ফলে এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল অনেক বেড়েছে। চালু হয়ে গিয়েছে দূরপাল্লার বাসও। কিন্তু বাসের যাত্রীরা বলছেন, এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে যাচ্ছে তাঁদের।

ব্যবসার কাজে প্রায়ই কলকাতা আসতে হয় বৈকুন্ঠপুরের লিয়াকত আলিকে। তিনি বলেন, “রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে, সোজা পথ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে না গিয়ে উল্টো দিকে জাগুলি মোড় থেকে কাঁচরাপাড়ার কাঁপা মোড়ে কল্যাণী এক্সপ্রেস ধরি। ওই রাস্তা অনেক ভাল। দূরত্ব অনেক বেশি হয় ঠিকই। কিন্তু ভোগান্তি এড়ানো যায়।” নদিয়া জেলাপরিষদের কর্মাধ্যক্ষ চঞ্চল দেবনাথ বলেন, “ওই রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন কাজে বারাসত যেতে হয়। ফিরে আসার পরে ফের ওই রাস্তা দিয়ে আর যাওয়ার ইচ্ছা হয় না। কলকাতা যেতে হলে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করি।”

বারাসতের ময়না মোড় থেকে শুরু করে পুরো রাস্তাই এমন বেহাল। খিলকাপুর, কামদেবপুর, আমডাঙা, গাদামারা হাট, কৈপুকুর, আওয়ালসিদ্ধি, মহাদেবপুর, বৈকুন্ঠপুর— সর্বত্রই খানাখন্দে ভরা রাস্তা। বর্ষায় জল জমে সেগুলি বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। আমডাঙার বিধায়ক রফিকুর রহমান বলেন, “এটা এখন নামেই জাতীয় সড়ক। এর হাল পাড়ার রাস্তার থেকেও খারাপ। এই রাস্তা দিয়ে আর যাওয়া চলে না। নিজেরা তো ভুগছিই, রোজ প্রচুর লোক রাস্তা নিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেন। কিন্তু এটা তো রাজ্য সরকারের রাস্তা নয়। কেন্দ্র না সারালে আমাদের কী করার থাকতে পারে।”

রফিকুর জানান, সপ্তাহখানেক আগে তিনি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কৃষ্ণনগর অফিসে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “এক অফিসার আমাকে জানান, অর্থের অভাবে রাস্তার কাজ এখন করা যাচ্ছে না। তবে গর্ত বোজানো হবে।” চঞ্চল জানান, গত মার্চে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানিয়েছিলেন, দ্রুত কাজ শুরু হবে। তার পরেই লকডাউন শুরু হয়ে যায়।

এই সড়ক চার লেনের কাজও বন্ধ রয়েছে। প্রথমে জবরদখল উচ্ছেদ, পরে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলন ও গোলমালের জেরে দীর্ঘদিন কাজ শুরুই করা যায়নি। পরে কিছু জায়গায় কাজ শুরু হলেও, তা ফের বন্ধ হয়ে যায়। সেই কাজ কবে শুরু হবে, তা নিয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কোনও জবাব মেলেনি। চার লেন নয়, এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা গাড়ির চালকদে দাবি, জরুরি ভিত্তিতে রাস্তা মেরামত করা হোক।

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কৃষ্ণনগর ডিভিশন রাস্তাটির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে। তার প্রকল্প অধিকর্তা সৌতম পাল বলেন, “গাদামারা হাট এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে। রানাঘাটের দিকেও কাজ হয়েছে। পুরোদমে কাজ না হলেও বর্ষার মধ্যে আমরা গর্ত বোজানোর কাজ করছি। এ মাসের মধ্যেই সেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Water-logged National Highway
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE