Advertisement
E-Paper

জঙ্গল সাফ করে চলছে জমি দখল

এলাকার মানুষ জন জানালেন, কিছু বছর আগেও পুরনো বড় বড় গাছ ছিল ওই জঙ্গলে। বক, শামুকখোল, মাছরাঙা-সহ বহু পাখি বাসা বাঁধত। সকাল থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে তারা উড়ে আসত গ্রামের দিকে। সে ছিল মনোরম পরিবেশ।

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৩৫
দমকল ঘাটের পাশে গাছ কেটে বেআইনি নির্মাণ।

দমকল ঘাটের পাশে গাছ কেটে বেআইনি নির্মাণ।

নদীপথে যেতে যেতে দূর থেকে দেখে মনে হবে ঘন জঙ্গল। কিন্তু ভিতরে ভিতরে কত গাছ যে কাটা পড়ছে, তার ইয়ত্তা নেই। কাঠ চোরেদের দৌরাত্ম্যে রায়দিঘির সাহেবের দ্বীপ জঙ্গল দিন দিন ফাঁকা হতে বসেছে। জঙ্গল বাঁচাতে স্থানীয় বাসিন্দারা একাধিকবার বন দফতরকে জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।

রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের নগেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতটি মণি ও ঠাকুরান নদী ঘেরা। ওই পঞ্চায়েতের দমকল গ্রামের উল্টো দিকে ঠাকুরান নদীর সংযোগস্থলে পূর্ব শ্রীধরপুর গ্রামের কাছে প্রাচীন সাহেবের দ্বীপ জঙ্গল। রায়দিঘি, পাথরপ্রতিমা ও কুলতলি পর্যন্ত বিস্তৃত ম্যানগ্রোভের জঙ্গল। সুন্দরী, পাইন, গরান, কেওড়া, গর্জন-সহ নানা গাছগাছালি।

এলাকার মানুষ জন জানালেন, কিছু বছর আগেও পুরনো বড় বড় গাছ ছিল ওই জঙ্গলে। বক, শামুকখোল, মাছরাঙা-সহ বহু পাখি বাসা বাঁধত। সকাল থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে তারা উড়ে আসত গ্রামের দিকে। সে ছিল মনোরম পরিবেশ। কিন্তু কাঠ চোরেরা বড় গাছ কেটে সাফ করে দিয়েছে। পাখির বাসাও তেমন নেই।

ঠাকুরান নদীর এক পাড়ে দমকল গ্রাম থেকে তাকালে গভীর জঙ্গলই মনে হবে। কিন্তু রবিবার দুপুরে নৌকো নিয়ে ঠাকুরের নদী পেরিয়ে খাড়িপথ ধরে জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে দেখা গেল, কোনও বড় গাছই নেই। বহু ম্যানগ্রোভ কেটে ফেলে রাখা হয়েছে জায়গায় জায়গায়। তা শুকিয়ে গেলে রাতের অন্ধকারে কাঠচোরেরা পাচার করে বলে জানা গেল। দমকল এলাকায় নদীবাঁধের উপরেও এখানে ওখানে ফেলে রাখা হয়েছে শুকনো ম্যানগ্রোভ। অনেকের বাড়ির আনাচে কানাচেও পড়ে কেটে আনা নানা গাছগাছালি। দমকল জেটিঘাটের পাশে ম্যানগ্রোভ কেটে তৈরি হচ্ছে ভবন।

জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে যায় কোথায়?

স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, ওই কাঠ কিছু মানুষ জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করেন। ইটের পাঁজায় জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হয়। বিভিন্ন স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে মিড ডে মিল রান্নার কাজেও ব্যবহার হয়। আবার রাতের অন্ধকারে কাঠ চলে যায় বিভিন্ন হোটেলে। গুঁড়ির কাঠ আসবাব তৈরিতেও কাজে লাগে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসন ও বন দফতরের নজরদারির অভাবে জঙ্গল কেটে ফাঁকা করে মাছের ভেড়িও তৈরি করা হচ্ছে। জঙ্গল কেটে জমি দখল করে সেই জমি মোটা টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াসিন গাজির অভিযোগ, কাঠ চোরেদের দৌরাত্ম্যে ম্যানগ্রোভ ধ্বংস হওয়ায় নদীবাঁধের ক্ষতি হচ্ছে। বড় বড় ঢেউ এখন বাঁধে আছড়ে পড়ে। ম্যানগ্রোভ থাকলে জলের ঝাপটা থেকে বাঁচত নদীর পাড়, বাঁধ।

বন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এ নিয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগ আসেনি। তা ছাড়া, আমরা বিভিন্ন জঙ্গলে টহলদারি চালাই। তবে গাছ কাটা যদি সত্যিই হয়ে থাকে, তবে তা খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কিন্তু গ্রামবাসীদের অনেকেরই প্রশ্ন, সাদা চোখেই তো দেখা যায় গাছ কাটা চলছে। বন দফতরকে অভিযোগ জানিয়েও ফল হয় না। আর দফতরের কর্তারা সব দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। — নিজস্ব চিত্র

Mangrove Sundarbans Forest Poachers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy