জলপথ: অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বনবনিয়া এলাকার পরিস্থিতি। নিজস্ব চিত্র
পুরসভা বয়স পেরিয়েছে পঞ্চাশ বছর। তবু ভারী বৃষ্টিতে প্রমাদ গোনেন মানুষ। ফি বছরের অভিজ্ঞতা থেকে জানেন, চৌকাঠ পেরিয়ে জল ঢুকল বলে ঘরে। হয়ও তাই। অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার ২৩ নম্বর ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের বনবনিয়া এলাকার মানুষজন এই পরিস্থিতিকে কার্যত ভবিতব্য বলে মেনে নিয়েছেন। গাড়ির টিউব, কলা গাছ কেটে ভেলা তৈরি করে রাখেন অনেকে। প্রায় ৭০টি পরিবার এমন অবস্থায় এখনও দিন কাটাচ্ছেন ওই এলাকায়। গত মাস তিনেক ধরে চলছে এই পরিস্থিতি।
জমা জলের পাশে বসে রান্না করতে হয় মহিলাদের। জলে ভাসে মশার লার্ভা। সাপেদের আনাগোনা বেড়েছে। সব মিলিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি। শঙ্কর হাওলাদার, চম্পা ঘোষের মতো জলবন্দি মানুষজন জানালেন, এলাকায় নিকাশি নালা তৈরি করেও সমস্যার সমাধান হবে না। হাবড়ার নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি না হলে এখানকার মানুষকেও ভুগতে হবে। তাঁরা জানালেন, হাবড়ার মধ্যে দিয়ে আগে এই এলাকার জমা জল পদ্মানালা দিয়ে বেরিয়ে যেত। এখন জমা জল বের হয় না। রোদে শুকিয়ে যাওয়া ছাড়া গতি নেই।
সকলে জানালেন, কয়েক মাসের জমা জল ইতিমধ্যে পচতে শুরু করেছে। ওই জল লেগে গা-হাত-পা চুলকাচ্ছে। সাপ-মশার উপদ্রব তো আছেই। বামপন্থী ছাত্র যুব সংগঠনের সদস্যেরা কোমর সমান জলে নেমে ওষুধপত্র দিচ্ছেন বলে জানা গেল।
পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কায়পুত্রপাড়া আদর্শপল্লি এলাকাতেও জল জমে আছে। নালা জল ভরে উপচে পড়ছে। অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা তৈরি হয় ১৯৬৮ সালে। প্রথমবার ভোট হয় ১৯৮১ সালে। প্রথমে ওয়ার্ড সংখ্যা ছিল ১৪টি। পরবর্তী সময়ে আরও ৯টি ওয়ার্ড যুক্ত হয় গ্রামীণ এলাকা নিয়ে। বাসিন্দারা জানালেন, পরবর্তী সময়ে যুক্ত হওয়া ৯টি ওয়ার্ডেই নিকাশি সমস্যা সব থেকে বেশি। অভিযোগ, পুরসভা তৈরি হওয়ার পরে ডান-বাম দু’পক্ষই ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কেউ পদক্ষেপ করেনি। ভারী বৃষ্টিতে গোলবাজার জলমগ্ন হয়ে যায়। অভিযোগ, এখানকার জমা জল হাইড্রেন দিয়ে বেরিয়ে যেত। কিন্তু হাইড্রেনটি নোংরা আবর্জনায় ভর্তি থাকে। নিয়মিত সাফ করা হয় না।
অশোকনগরের প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘বিধানচন্দ্র রায়ের সময়ে পরিকল্পিত ভাবে এই উপনগরী গড়ে উঠেছিল। ছিল পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তৃণমূল ক্ষমতায় এসে সেই নিকাশি ব্যবস্থা রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেনি। পুর এলাকার জমা জল নিকাশির প্রধান মাধ্যম বিদ্যাধরী খাল। সংস্কারের অভাবে সেটি মৃতপ্রায়। নিকাশি নালাগুলি নোংরা আবর্জনায় ভরে থাকে।’’
এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, অনেক জায়গায় এখনও পাকা নিকাশি নালা নেই। কোথাও কোথাও নালা আবর্জনায় ভর্তি। কোথাও আবার কাঁচা নালা।পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা সিপিএম এর চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে নিকাশি আরও খারাপ হয়েছে। সর্বত্র পাকা নালা তৈরি করা যায়নি। সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে মাস্টার প্ল্যান করা হয়নি পুরসভার তরফে।’’
যদিও পুরসভার তরফে দাবি করা হয়েছে, পাঁচ বছরে পুর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে পাকা নিকাশি নালা তৈরি করা হয়েছে। পুরনো নালা সংস্কার করা হয়েছে। নিয়মিত নালা সাফ করা হয়। জমা জল বের করতে আধুনিক পাম্পের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হচ্ছে। বিদ্যাধরী খাল সংস্কারের বিষয়টি সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে। তারা পদক্ষেপ না করলে পুরসভার পক্ষ থেকে খাল সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে। নিকাশি ব্যবস্থার মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়েছে। এলাকার তৃণমূল বিধায়ক ধীমান রায় বলেন, ‘‘পুরপ্রশাসক করোনায় আক্রান্ত। শীঘ্রই বনবনিয়া এলাকার জমা জল সরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কেন্দ্রের কাছে পাঠানো প্রকল্পের কোনও অগ্রগতি হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy