E-Paper

হিন্দু পাড়ায় ধুমধাম করে পূজিত হন পির

পুজোকে কেন্দ্র করে মিলনোৎসবে যোগ দেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। জয়নগরের খাকুরদা পঞ্চায়েতের শান্তিপুরে এ ভাবেই সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ভুলে মিলনোৎসবের আয়োজন হচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩১
শান্তিপুরের পির সাহেবের মূর্তি।

শান্তিপুরের পির সাহেবের মূর্তি। নিজস্ব চিত্র ।

হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে ধুমধাম করে আয়োজন করা হয় বড় পিরসাহেবের পুজো। পাশের গ্রামের মুসলমান কাজি এসে নমাজ পড়ে পিরসাহেবের আরাধানা শুরু করেন। সঙ্গে পূজিত হন বিবিমা-ও। হিন্দুরাই পুজোর যাবতীয় আয়োজন করেন, তবে মন্দিরে ঠাঁই হয় না কোনও হিন্দু পুরোহিতের। যাবতীয় ভার থাকে মুসলমান কাজির উপরে!

পুজোকে কেন্দ্র করে মিলনোৎসবে যোগ দেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। জয়নগরের খাকুরদা পঞ্চায়েতের শান্তিপুরে এ ভাবেই সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ভুলে মিলনোৎসবের আয়োজন হচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে। শান্তিপুর বড় পিরসাহেব ও বিবিমাতার এই মেলা এ বার ১২৫ বছরে পড়ল। শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে মেলা, চলবে পাঁচ দিন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই এলাকায় আদিগঙ্গার তীরে এক সময়ে সওদাগরি ঘাট ছিল। তীরে ছিল প্রাচীন এক শিবমন্দির। দূর দেশে বাণিজ্য করতে যাওয়া সওদাগরেরা এই ঘাটে নৌকো নোঙর করে মন্দিরে পুজো দিতেন। কোনও এক সময়ে দূর গ্রাম থেকে পাঁচ-সাত ঘর লোক ডাকাতের হাতে সর্বস্বান্ত হয়ে পালিয়ে এসে উঠেছিল এই এলাকায়। জল-জঙ্গলের মাঝে নিরাপদ এই জায়গায় তারা জঙ্গল কেটে বসতি গড়ে তোলে।

তাদের মধ্যে এক ঘর কামার ছিল। তারাই পুকুরপাড়ে কামারশালের পাশে বাঁশ বাগানের তলায় পির আর বিবিমার থান গড়ে তোলেন। একবার আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে সেই পিরের দরবারে মানত করে ফল পান গ্রামের মোড়ল শশী দাস। এরপরে তিনি বাদ্যিবাজনা-সহ পিরবাবার আরাধনার ব্যবস্থা করেন। ঘোরদৌড়, পুতুল নাচের আয়োজনও হয়। সেই থেকে চৈত্রের শেষে এই অনুষ্ঠান হয়ে আসছে।

উদ্যোক্তারা জানান, ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে বর্তমানে পিরবাবার হাজতে (উপাসনা) হাজার দশেক মানুষের সমাগম হয়। মেলা উপলক্ষে থাকে নানা আয়োজন। দোকান-পাট বসে। যাত্রা, পালাগান, পুতুল নাচের আয়োজন হয়। স্থানীয় বাসিন্দা, তথা মেলার অন্যতম উদ্যোক্তা দেবপ্রসাদ পেয়াদা বলেন, “সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ভুলে এই মেলার আয়োজন হয়ে আসছে। পুজো ও মেলার যাবতীয় আয়োজন করেন হিন্দুরা। পাশের গ্রামের খাদেম মোনাজাত গাজি এসে নমাজ পড়ে হাজত দেন। হিন্দু পুরোহিতের দরকার হয় না। হাজত ও মেলা দেখতে হিন্দুদের পাশাপাশি প্রচুর মুসলমান মানুষজন আসেন।” উদ্যোক্তারা জানান, আগে শুরুতে দু’দিনের মেলা হত। বর্তমানে চার দিনের মেলা হয়। এ বছর ১২৫ বছর উপলক্ষে মেলা পাঁচ দিনের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

jaynagar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy