চারিদিকে যখন রেডিয়োর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে হা-হুতাশ চলছে, তখন রেডিয়োর জন্য এমন অপেক্ষা কৌতূহল জাগায়। নানা মহলই একমত, রেডিয়োর জনপ্রিয়তা কমেছে। রেডিয়োর শোনার সময় অনেক দিনই গত হয়েছে। পাড়ায়-পাড়ায় রেডিয়ো সারাইয়ের সেই ছোট ছোট দোকানগুলিও আর তেমন চোখে পড়ে না। ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্রের ব্যবসায়ীরাও অনেক দিন ধরে জানাচ্ছেন, রেডিয়ো বিক্রি এক ধাক্কায় অনেকটা কমেছে।
কিন্তু এ হেন পরিস্থিতিতে দেবীপক্ষের সূচনায় রেডিয়ো যেন হঠাৎ করে বড় ইনিংস খেলে নজর কাড়ল। গোসাবা, বাসন্তী, ক্যানিং অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে মহালয়ার বেশ কিছু দিন আগে ঘরে ঘরে পুরনো রেডিয়ো ঝাড়পোঁছ করে নতুন ব্যাটারি লাগানো হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অনেকে জানালেন, এ অঞ্চলের বেশ কিছু জায়গায় গত কয়েক দিনে রেডিও বিক্রির সংখ্যাও বেড়েছে। তবে নতুন প্রজন্মকে সে পথ মাড়াতে তেমন দেখা যায়নি। তরুণ প্রজন্মের কেউ কেউ অবশ্য মোবাইলেও মহালয়া শুনেছেন বলে জানালেন।
কান্তি রায় নামে ক্যানিংয়ের এক প্রবীণ বাসিন্দা মহালয়ার আগে তাঁর পুরনো রেডিয়োটি বের করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছেন। বললেন, ‘‘এখনকার প্রজন্ম কেউ মহালয়া শোনার জন্য ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠে না। তারা সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের সময়ে মহালয়ার দিন ভোরবেলায় প্রায় প্রতিটি বাড়ি থেকে রেডিয়োর শব্দ ভেসে আসত। আমার বাড়িতে আজও সেই চল রয়েছে। চণ্ডীপাঠ শুনতে শুনতে নস্টালজিক হয়ে পড়ি।’’ গোসাবার রাঙাবেলিয়ার বাসিন্দা রাম মণ্ডল বলেন, ‘‘সেই যুগে প্রত্যন্ত এই সব এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে রেডিয়োও ছিল না। ভোরবেলায় মহালয়া শুনতে আশপাশের বাড়ির লোকজন আমাদের বাড়িতে ভিড় জমাত। বাড়ির উঠোনে টেবিলের উপরে রেডিয়ো রেখে সকলে মাদুর পেতে বসতাম এক সঙ্গে মহালয় শুনতে। আজ সেই সব দিন অতীত।’’ তবু আজও এ অঞ্চলে রেডিয়োর ট্র্যাডিশন কী ভাবে চলছে? কারণ একটাই। কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না ঘটা। আজও সুন্দরবনের বহু প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছয়নি। যেখানে পৌঁছেছে সেখানে তা বেশ দুর্বল। ফলে সেই সব এলাকায় বিনোদনের জন্য রেডিয়োই ভরসা। প্রযুক্তির হাত ধরে এই নস্টালজিয়া ক’দিন বেঁচে থাকবে, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলছেন প্রবীণেরা।